করোনায় পুড়ে ছাই পূর্বাচলের ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন
২৭ মে ২০২০ ১২:৪১
ঢাকা: ইট-কাঠের ব্যস্ত নগরীতে অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন বিকেলে কিছুটা স্বস্তি এবং নির্মল পরিবেশ উপভোগের জন্য ছুটে আসতেন পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায়। ছুটির দিনগুলোতে ভিড়ের মাত্রা বেড়ে যেত কয়েকগুণ। ঈদসহ বিভিন্ন দিবসগুলিতে দেখা যেত মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এখন সেখানে ফাঁকা। জনমানবশূন্য।
করোনার কারণে দীর্ঘ দুইমাস ধরে ব্ন্ধ রয়েছে রেস্টুরেন্টসহ সব ধরনের দোকান পাঠ। ঈদের ছুটিতেই নেই তেমন লোকজন। তবে সীমিত আকারে খুলছে কিছু দোকানপাট। করোনার বাধা উপেক্ষা করে নিজস্ব পরিবহনে ঘুরছেন কিছু মানুষ।
মঙ্গলবার (২৬ মে) রাজধানী ঢাকার পাশে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকা ঘুরে এসব দৃশ্য দেখা যায়।
নির্মল বায়ু ও সবুজ পরিবেশের সঙ্গে তাজা শাক, সবজি, ফলমূল বিভিন্ন রকম খাদ্য সামগ্রী এবং বিনোদনের জন্য বেশ পরিচিতি পেয়েছে পূর্বাচলের নীলা মার্কেট। গ্রীষ্মের গরমের বিকেল বেলা দক্ষিণা হাওয়া খেতে প্রতিদিনেই এখানে ছুটে আসে শহরের হাজার হাজার মানুষ। সম্প্রতি স্টেডিয়ামের কাজ শুরু হওয়ায় নীলা মার্কেটটি অপসারণ করা হয়েছে। নীলা মার্কেট অপসারণ করা হলেও আশে পাশের বিশাল এলাকা জুড়েই তৈরি হয়েছে বিনোদন কেন্দ্র।
পূর্বাচল নতুন শহরের ৩শ ফিট সড়কের উত্তর পাশে বিস্তৃণ এলাকা জুড়েই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন রকম রেস্টুরেন্ট, শাক সবজির দোকান আর অস্থায়ী বিনোদন কেন্দ্র।
এর মধ্যে একটি জায়গায় হলো শহীদ ময়েজ উদ্দিন চত্বর। যে চত্বরের চারপাশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু নান্দনীক রেস্টুরেন্ট। যেখানে প্রতিদিন বিকেলে অসংখ্য মানুষের ভিড় জমে যেত। ক্লান্তিহীন ঢাকা থেকে স্বস্তির নিশ্বাস নিতে অনেকেই চলে আসতো। সেটিকে পুঁজি করেই এখানে শুরু হয়েছে নানা রেস্টুরেন্ট ব্যবসা।
ছয়মাস আগে অনেক টাকা ইনভেস্ট করে একটি রেস্টুরেন্ট গড়ে তোলেন নরসিংদী জেলার বাসিন্দা আবু বকর সিদ্দিক। রেস্টুরেন্টটি চালু হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই মহামারি করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর করোনাভাইরাস মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক দিনের অপেক্ষায় থাকতে থাকতে দুই মাস পার হয়ে গেল। কবে নাগাদ এই পরিস্থিতি থেকে দেশ স্বাভাবিক হবে তাও কেউ বলতে পারে না।
আবু বকর সিদ্দিক বলেন, অনেক কষ্ট করে ব্যাংক ঋণ নিয়ে সবে মাত্র রেস্টুরেন্টটা নির্মাণ করে চালু করেছিলাম। সব কাজ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। তার মধ্যেই বন্ধ করতে হয়েছে। দুই মাস ধরে বন্ধ থাকায় অনেক জিনিসপত্রই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। টাকার ক্ষতি আর কি বলবো। ব্যবসা না চললে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি প্রতিদিন। নিজের পরিবারের খরচ, ব্যাংক ঋণ পরিশোধে হিসশিম খেতে হচ্ছে। সামনের দিনগুলিতে কি করবো বুঝতে পারছি না। অনেক স্বপ্ন নিয়ে ব্যবসাটি মাত্র চালু করেছিলাম। শুরু না করতেই স্বপ্ন পুড়ে ছাই।
একই চত্বরের টঙ দোকান আলী হোসেনের। আজকে দুই মাস পরে তিনি দোকান খুলছেন। দোকানে ময়লায় ভরে আছে। অনেক খাদ্য দ্রব্যের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। সব ফেলে দিয়ে নতুন করে আবার কিনতে হচ্ছে। একজনের কাছ থেকে কিছু টাকা ঋণ করে নতুন করে দোকান চালু করছেন তিনি।
আলী হোসেন জানান, অন্যান্য সময় এখানে প্রচুর লোকজন হয়। প্রতিদিন এই দোকান থেকে ৫ হাজার টাকার চা-সিগারেট, কোল্ড ড্রিংস বিক্রি হতো। দুমাস ধরে সব বন্ধ।
আলী হোসেনের ভাষায়, অনেক দিন মানুষ ঘরেবন্দি। এখন হয়তো অনেকেই বের হবে। গতকাল বিকালে অনেকেই এখানে এসেছিল। সেটা দেখে আজকে দোকান খুললাম। ঈদের এ সময় হয়তো আরও অনেকেই বের হবে। যদি কিছু বেচা বিক্রি হয়। চলতে তো হবে।
চত্বরটির চারপাশ ঘুরে দেখা যায়, বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট এখানে রয়েছে। তবে সবগুলোই বন্ধ। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সাজানো গেট, বসার জায়গা, ফুল গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। বন্ধ রয়েছে সব ফুসকা চটপটির দোকানও। তবে ছোট ছোট টঙ দোকানগুলো খুলতে শুরু করেছে।
পূর্বাচলের এখানে অনেকেই ঘুরতে আসেন। অনেকে এখান থেকে তাজা শাক সবজি বাসার জন্য কিনে নিয়ে যায়। সারাবছর এখানে সব ধরনের তাজা সবজি ফলমূল পাওয়া যায়।