এক্সিমের এমডিকে হত্যাচেষ্টার মামলা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যাখ্যা
২৮ মে ২০২০ ০১:২২
ঢাকা: বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া ও অতিরিক্ত এমডি মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেনকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গুলশান থানায় মামলার হয়েছিল। এর এক সপ্তাহ পর ওই ঘটনা প্রসঙ্গে শিকদার গ্রুপের পক্ষে নিজেদের ব্যাখ্যা তুলে ধরেছে ন্যাশনাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (২৭ মে) সন্ধ্যায় ন্যাশনাল ব্যাংকের প্যাডে ব্যাংকটির হয়ে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার শিকদার গ্রুপের দুই কর্ণধারের বিরুদ্ধে করা মামলাটি মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে একটি লিখিত বক্তব্য গণমাধ্যমে পাঠান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, এক্সিম ব্যাংকের একজন পরিচালক ব্যবসা প্রসারের জন্য বিভিন্ন সময় ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ সুবিধা নেন। পরিচালক তার মেয়ের নামেও ঋণ নেন। জনৈক পরিচালক বেনামে ঋণ সুবিধা নিতে প্রস্তাব পাঠান। গুলশান থানায় গত ১৯ মে দায়ের করা মামলার বাদীও ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা নিয়েছেন, বিভিন্ন ঋণের উপযুক্ত জামানত ছাড়াই ঋণ সুবিধার পর বর্তমান করোনা পরিস্থিতি উল্লেখ করে জনৈক পরিচালক ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান গত ১৩ মে ৫ কোটি টাকা ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নেন।
আরও পড়ুন- এক্সিম ব্যাংকের এমডিকে গুলি-নির্যাতনের অভিযোগে মামলা
বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, গত ৭ মে দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ঘটনার বিবরণ দেখিয়ে এক্সিম ব্যাংকের হয়ে কর্নেল (অব.) সিরাজুল ইসলাম গুলশান থানায় মামলা করেছেন। মামলায় রন হক শিকদার এক্সিম ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। কিন্তু রন হক শিকদার এমন কোনো ঋণের আবেদনই করেননি, মামলার বাদীও কোনোভাবেই তা দেখাতে পারবেন না। অভিযোগে গত ৭ মে রন হক শিকদার ও ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি’র এক্সিম ব্যাংকের গুলশান শাখায় যাওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও আসলে সেদিন কেউই সেখানে যাননি। যেখানে ঋণের কোনো প্রস্তাব নেই, গুলশান শাখায় এক্সিম ব্যাংকের এমডি এবং অতিরিক্ত এমডির সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়নি, সেখানে জামানতের বিপরীতে ঋণ নিয়ে দর কষাকষির সুযোগই আসতে পারে না। মামলার বাদী নিজেও ঘটনার সাক্ষী নন। বাদী মামলা করার আগে এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডির সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে কেবল ব্যাংকটির নির্বাহীদের সঙ্গে আলোচনা করে ঘটনার ১২ দিন পর সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এই মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টিকে ন্যায়বিচারের পরিপন্থী এবং শিকদার গ্রুপকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্যই মামলাটি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বক্তব্যে।
আইনজীবী তার বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেন, আমার মক্কেল ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড ও তার পরিচালনা পর্ষদ স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা করে আসছে। এই ধরনের ভিত্তিহীন ও বানোয়াট মামলা দায়ের ন্যাশনাল ব্যাংক ও তার পরিচালনা পর্ষদকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। ভুয়া ও ভিত্তিহীন মামলার জন্য আমি আমার মক্কেলের হয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমার মক্কেল এও বিশ্বাস করেন যে মামলাটির সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। এরপর মামলার বাদীও আইনের আওতায় আসবে।
এদিকে, গত ১৯ মে গুলশান থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, এক্সিম ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ পেতে আবেদন করে সিকদার গ্রুপ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ মে দুপুর ১২টায় এক্সিম ব্যাংকের গুলশানের প্রধান কার্যালয়ে আসেন রন হক সিকদার ও ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি চৌধুরী মোসতাক আহমেদ। তারা এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডিকে ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে রূপগঞ্জের আদি নওয়াব আসকারি জুট মিল পরিদর্শনে নিয়ে যান। পরিদর্শনে গিয়ে জামানত হিসেবে ওই সম্পত্তির বন্ধকি মূল্য নথিপত্রে দেখানো মূল্যের চেয়ে কম উল্লেখ করলে রন হক সিকদার তাদের আরেকটি প্রজক্ট পূর্বাচলের আইকন টাওয়ার পরিদর্শনে যেতে বলেন। তাতে রাজি হয়ে টাওয়ার পরিদর্শনে গেলেও রন হক সিকদার ও চৌধুরী মোসতাক আহমেদকে না পেয়ে ও প্রকল্পের ভেতরের সড়ক অপরিচিত হওয়ায় এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডি ৩০০ ফিট সড়ক ধরে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেন। ওই সড়কেই রন হক সিকদার ও ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডিকে দেখতে পেয়ে থামেন তারা। সে সময় ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি, এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডিকে জানান, বলে দেওয়া নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হওয়ায় রন হক অত্যন্ত মনোক্ষুন্ন ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
এজাহারে বলা হয়, এরপরই রন হক সিকদারের কাছে এক্সিম ব্যাংকের এমডি ও অতিরিক্ত এমডিকে মাফ চাইতে বাধ্য করা হয় বলেও উল্লেখ করা হয়। এর কিছুক্ষণ পরই রন হক সিকদার গাড়ির গ্লাস নামিয়ে এক্সিম ব্যাংকের এমডির উদ্দেশ্যে গুলি ছুঁড়লে তা তার বাম কানের পাশ দিয়ে চলে যায়। এরপর আবারও তিনি গুলি করতে উদ্যত হলে এক্সিম ব্যাংকের অতিরিক্ত এমডির গাড়ির পেছনে আশ্রয় নেন। এরপর এক্সিম ব্যাংকের এমডির গাড়িতে ব্যাংকটির অতিরিক্ত এমডিকে তোলা হয়। সে সময় রন হক সিকদারের একজন নিরাপত্তাকর্মীও গাড়িতে ওঠেন এবং এমডি ও অতিরিক্ত এমডির মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বনানীর সিকদার হাউজে নিয়ে যান।
এজাহারে বলা হয়, সেখানে দিপু হক সিকদার ব্যাংকটির অতিরিক্ত এমডিকে মারধরের চেষ্টা করেন। পরে দু’জনকে বিদেশি নিরাপত্তাকর্মীর পাহারায় বসিয়ে রাখা হয়। এরপর রন হক সিকদার ও দিপু হক সিকদার ব্যাংকটির এমডির কাছে একটি সাদা কাগজে জোর করে সই আদায় করে নেন। সই না করলে বিদেশি নিরাপত্তাকর্মী দিয়ে টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতন চালানো হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। আবার আর এই সইয়ের সাক্ষী করা হয় অতিরিক্ত এমডিকে। এরপর বিকেল সাড়ে ৫টায় সিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের কাছে নিয়ে তার সঙ্গে ছবি তোলা হয়। এরপর দুই গাড়িচালকসহ রাত সাড়ে ৭টায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। রন হক সিকদার বাসার নিচে এসে সবার মোবাইল ফোন ফেরত দেন।
গুলশান থানায় দায়ের করা মামলায় বাদী এক্সিম ব্যাংকের পরিচালক লে. কর্নেল (অব.) সিরাজুল ইসলাম আসামি করেছেন রন হক সিকদার ও দিপু হক সিকদারকে।
এর আগে বুধবার (২৭ মে) সকালে এ বিষয়ে জানতে চাইলে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান পারভেজ সারাবাংলাকে বলেন, গত ৭ মে একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে বাদীর লিখিত অভিযোগ পেয়ে গত ১৯ মে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে প্রকৃত বেরিয়ে আসবে।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, মামলার পর প্রকৃত ঘটনা জানতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তদন্ত শেষে বলা যাবে আসলে কী ঘটেছিল।
এক্সিম ব্যাংক দিপু হক সিকদার ন্যাশনাল ব্যাংক রন সিকদার রন হক সিকদার সিকদার গ্রুপ