১৫ জুন পর্যন্ত ‘সীমিত পরিসরে’ অফিস, চলাচলে ‘নিয়ন্ত্রণ’ বহাল
২৮ মে ২০২০ ১৩:৫৫
ঢাকা: করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯’র বিস্তার রোধ ও পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে আগামী ৩১ মে থেকে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে অফিস ও জনসাধারণের চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আপাতত ১৫ জুন পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে।
বৃহস্পতিবার (২৮ মে) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। দেশের সার্বিক কার্যাবলি ও জনগণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ সীমিত করার কথা জানিয়ে সরকারি ওই আদেশ দেওয়া হয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞাকালে এক জেলা হতে অন্য জেলায় জনসাধারণের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। প্রতি জেলার প্রবেশ ও বহির্গমন পথে চেকপোস্টের ব্যবস্থা থাকবে। জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় এ নিয়ন্ত্রণ সতর্কভাবে বাস্তবায়ন করবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলাচল নিষেধাজ্ঞাকালে জনগণকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। রাত আটটা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (প্রয়োজনীয় ক্রয়-বিক্রয়, কর্মস্থলে যাতায়াত, ঔষধ ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে আসা যাবে না। তবে বাইরে চলাচলের সময় অবশ্যই মাস্ক পরাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় নির্দেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিষেধাজ্ঞাকালীন জনসাধারণ ও সব কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশ কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে বলে আদেশে জানানো হয়।
আদেশে আরও বলা হয়, হাটবাজার, দোকানে-পাটে ক্রয়-বিক্রয়ের সময় পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে। শপিং মলের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শপিং মলে আগত যানবাহনগুলোকে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাটবাজার, দোকানপাট এবং শপিং মলগুলো অব্যশই বিকেল চারটার মধ্যে বন্ধ করতে হবে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কাজে নিয়োজিত সংস্থা এবং জরুরি যেমন-ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরসমূহের কার্যক্রম (স্থলবন্দর, নদীবন্দর এবং সমুদ্রবন্দর), টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার অফিসমূহ, তাদের কর্মচারি ও যানবাহন এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে বলে আদেশে জানানো হয়।
আদেশে বলা হয়, সড়ক ও নৌপথে সকল প্রকার পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত যানবাহন (ট্রাক, লরি, কার্গো ভেসেল ইত্যাদি) চলাচল অব্যাহত থাকবে। কৃষি পণ্য, সারবীজ, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্প পণ্য, সরকারি প্রকল্পের মালামাল, কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরি সেবা এবং এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে না। এছাড়া চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জাম বহনকারী যানবাহন ও কর্মী, গণমাধ্যম (ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া) এবং ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্কে নিয়োজিত কর্মীরা এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবেন।
আদেশে জানানো হয়, শিল্প, কৃষি এবং উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো, উৎপাদন ও রফতানিমুখী শিল্পের সঙ্গে জড়িত সকল কলকারখানা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করে চালু রাখতে পারবে। তবে নিষেধাজ্ঞাকালীন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খেলা রাখা যাবে না। কিন্ত অনলাইন শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারবে। এছাড়া ব্যাংকিং ব্যবস্থা পূর্ণভাবে চালু করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
আদেশে উল্লেখ করা হয়, সকল সরকারি/আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিস নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে খুলতে পারবে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি, অসুস্থ কর্মচারী এবং সন্তান সম্ভবা নারীরা কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকবেন। এক্ষেত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্য বিধি নিশ্চিতকরণের জন্য স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে জারিকৃত ১৩ দফা নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয় আদেশে।