Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনা আক্রান্ত চিকিৎসকদের কাজে যোগদান বিষয়ক বিজ্ঞপ্তি নিয়ে ক্ষোভ


২৯ মে ২০২০ ০০:৫২

ফাইল ছবি

ঢাকা: দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন, তারা নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হলে উপসর্গমুক্ত হওয়ার ১০ দিন পরেই কাজে যোগ দিতে পারবেন বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে চিকিৎসকদের মধ্যে। তারা বলছেন, উপসর্গ না থাকলেই যে চিকিৎসক করোনামুক্ত, সেটি বলার উপায় নেই। এ অবস্থায় ওই চিকিৎসক কোন ক্লিনিক্যাল গাইডলাইন মেনে চিকিৎসা দেবেন, সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। একইসঙ্গে ওই বিজ্ঞপ্তিতে চিকিৎসকদের মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশনা নিয়েও ক্ষুব্ধ চিকিৎসকরা।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৮ মে) স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে তিনটি নির্দেশনা দিয়ে ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। অধিদফতরের হাসপাতাল বিভাগের পরিচালক ডা. আমিনুল হাসানের সই করা বিজ্ঞপ্তিটি জাতীয় কমিটির সুপারিশক্রমে দেওয়া হয়েছে বলে  উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এমন কোনো নির্দেশনা কথা তাদের জানা নেই।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কোনো চিকিৎসক কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে উপসর্গমুক্ত হওয়ার ১০ দিন পরই কাজে যোগ দিতে পারবেন। এছাড়া তিন দিন কোনো জ্বর না থাকলে উপসর্গ শুরুর ১০ দিন পর কাজে যোগ দিতে পারবেন চিকিৎসকরা। এই সময়ে শ্বাসতন্ত্রের উপসর্গের পর্যাপ্ত উন্নয়নসহ শারীরিক অবস্থার উন্নতি হতে হবে। এছাড়াও নির্দিষ্ট নিয়মে মেনে ছয়টি এন ৯৫ মাস্ক দুই মাস ব্যবহার করা যাবে।

চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ সেবাদাতা একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের জানামতে কোভিড-১৯-এর লক্ষণ ১৪ দিন পর্যন্ত যেকোনো সময় দেখা দিতে পারে। সেক্ষেত্রে যদি কোনো চিকিৎসক করোনা পজেটিভ হওয়ার পর প্রথম তিন দিন কোনো উপসর্গ নাও থাকে, ১০ দিন পর যে তার উপসর্গ দেখা দেবে না, এটা কিভাবে নিশ্চিত করে বলা যায়? খোদ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাই প্রতিদিন এই নতুন ভাইরাস নিয়ে কাজ করে তথ্য আপডেট করছে। সেখানে জন্য এমন গাইডলাইন বিভ্রান্তির জন্ম দেয়।

তিনি বলেন, এন ৯৫ মাস্ক ব্যবহার নিয়ে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেটিও পরিষ্কার নয়। আমরা যারা হাসপাতালে অন্যান্য চিকিৎসকদের মোটিভেট করে কাজ করে থাকি, এরকম বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞপ্তির পর মোটিভেট করার আর উপায় থাকে না। এটা নিয়ে আমরা তাদের কিছু বোঝাতে পারছি না।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর একটি কোভিড-১৯ হাসপাতালের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, সুনির্দিষ্টভাবে এন ৯৫ মাস্কের কথা কিভাবে লিখেছে, সেটি আমার বোধগম্য হচ্ছে না। হাসপাতালের চিকিৎসকরা যদি এখন বলেন, এই মাস্কই তাদের দিতে হবে, তখন আমি কী উত্তর দেবো? এখানে যদি এন ৯৫ বা সমমানের মাস্কের কথা লিখত, সেটিও সবাইকে বোঝানো সম্ভব হতো। সেই সুযোগই তো নেই।

এন ৯৫ মাস্কের ব্যবহার নিয়ে একজন বিশেষজ্ঞ সারাবাংলাকে বলেন, এন ৯৫ বা সমমানের মাস্ক বারবার ব্যবহার করা যায় কিছু বিশেষ শর্তে। এক্ষেত্রে ছয়টি মাস্ক দুইমাস কিভাবে ব্যবহার করা যাবে, তা বোধগম্য নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গাইডলাইন অনুযায়ী একটি মাস্ক চার দিন পরে ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রথম দিন যে মাস্ক ব্যবহার হবে, তা পঞ্চম দিনে সেটি ব্যবহার করা যেতে পারে। দ্বিতীয় দিনে ব্যবহার করা মাস্ক ষষ্ঠ দিনে ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু ছয়টি মাস্ক কিভাবে দুই মাস ব্যবহার করা যাবে, তা বোধগম্য হচ্ছে না।

তিনি বলেন, শুকনো পৃষ্ঠতলে করোনাভাইরাসের ৭২ ঘণ্টার বেশি টিকে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ— এমনটি মাথায় রেখে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্স (এইমস) এন ৯৫ মাস্কের অপ্রতুলতা বিবেচনায় চারটি মাস্ক সাইক্লিক অর্ডারে পাঁচ সাইকেল পর্যন্ত ব্যবহার করার কথা বলেছে। তবে এর মধ্যে মাস্কটি নষ্ট হলে বা অ্যারোসোল জেনারেটিং প্রসিডিউর (এজিপি) করার সময় কন্টামিনেটেড হলে তা পুনঃব্যবহারযোগ্য হবে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালকের (হাসপাতাল) সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। একাধিকবার ফোন করেও যোগাযোগ করা যায়নি স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার (সিডিসি) পরিচালক ও জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসীর সঙ্গেও।

এই নির্দেশনা বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল অনুবিভাগ) মো. সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য অধিদফতর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই নির্দেশনা দেয়নি। বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুইটি কমিটি গঠন করা হয়েছে— একটি স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি, আরেকটি জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি। জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি যদি কোনো সিদ্ধান্ত দেয়, তবে সে বিষয়ে অবশ্যই জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির এক সদস্য সারাবাংলাকে বলেন, এ ধরনের কোনো নির্দেশনার বিষয়ে জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটিতে আলোচনা হয়নি।

এন-৯৫ মাস্ক করোনা আক্রান্ত চিকিৎসক কাজে যোগদান স্বাস্থ্য অধিদফতর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর