সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোতে শান্তিরক্ষায় কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশ
২৯ মে ২০২০ ২২:১০
ঢাকা: আজ ২৯ মে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস। জাতিসংঘ সনদের অভিপ্রায়ের আলোকে বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ দেশে শান্তিরক্ষার কাজে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছে। শান্তিরক্ষার এই যাত্রায় বাংলাদেশ পুলিশ আন্তর্জাতিক আইন ও বিধি মেনে, সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোর স্বাধীনতার প্রতি সম্পূর্ণ এবং নিরপেক্ষ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে বিবদমান বিষয় শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথকে সহজতর করতে সহায়তা করেছে।
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, ১৯৮৯ সালে নামিবিয়া শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের এই যাত্রা শুরু হয়। বিরতিহীনভাবে দীর্ঘ সময়ে বাংলাদেশ পুলিশ বহুমাত্রিক উপায়ে জাতিসংঘের পাশে থেকেছে।
২০০৫ সালে স্বয়ংসম্পূর্ণ বিশেষায়িত ফর্মড পুলিশ ইউনিট শুরু করে। ২০১০ সালে বাংলাদেশ পূর্ণাঙ্গ নারী পুলিশ ইউনিট পাঠায়, যা শান্তি রক্ষার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। ২০১৩ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশ পুলিশ জরুরিভিত্তিতে ইন্টারমিশন কো-অপারেশনের আওতায় ২৪ ঘণ্টায় বিশেষায়িত কন্টিনজেন্ট সাউথ সুদানে পাঠায়, যা শান্তিরক্ষার ইতিহাসে বিরল ঘটনা। বাংলাদেশ পুলিশের এ পর্যন্ত ২২টি শান্তিরক্ষা মিশনে প্রায় ২০ হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করেছে।
বাংলাদেশ পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হাইতি, পূর্ব তিমুর, কসোভো, বসনিয়া, সুদান, ইত্যাদি দেশে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা যেমন প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে, তেমনি অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ও শরণার্থীদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সহায়তা ও নিরাপত্তা প্রদানে সহায়তা করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশের শান্তিরক্ষী সদস্যরা কাজের পরিধি এখানেই সীমিত রাখেনি, বরং বিদেশেও মানবিকতার দৃষ্টান্ত আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশংসিত হয়েছে। অসহায় মানুষদের খাদ্য বিতরণ, চিকিৎসা সেবাদান যেন বাংলাদেশ পুলিশের শান্তিরক্ষীদের নিয়মিত কাজে পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে চারটি ফর্মড পুলিশ ইউনিট ও ইন্ডিভিজুয়াল পুলিশ অফিসারসহ ৬৫৭ জন পুলিশ সদস্য বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৫৭ জন নারী পুলিশ সদস্য।
সংঘাতপূর্ণ দেশগুলোতে শান্তি রক্ষার এই যাত্রায় বাংলাদেশ পুলিশের রয়েছে ত্যাগের ইতিহাস। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ পুলিশের অ্যাডিশনাল ইনস্পেক্টর জেনারেল মিস রওশন আরাসহ প্রায় ২২ জন পুলিশ পরিবারের সদস্য শহিদ হয়েছেন। শান্তিরক্ষা করতে গিয়ে বিভিন্ন সময় আহত হয়েছেন অনেক পুলিশ সদস্য।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে দীর্ঘদিন ধরে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ পুলিশ শুধু দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় বয়ে আনেনি, নিয়ে এসেছে দেশমাতৃকার জন্য অনন্য সম্মান।
বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে জাতিসংঘ সনদের আলোকে শান্তিরক্ষার কাজে ঐতিহাসিক এই ধারা ও অভিজ্ঞতাকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর।