আম্পানে আম-লিচুসহ ফসলের ক্ষতি ৬৭১ কোটি টাকা
৩০ মে ২০২০ ০৮:১৬
ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় আম্পানে দেশের ৪৩ জেলায় আম, লিচু ও ধানসহ ২০টি ফসলের ৬৭১ কোটি ৭০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় সাড়ে ৮ লাখ কৃষকের ২ লাখ ৬৫ হাজার ৬৭ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে।
এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৪ হাজার ৭২৭ হেক্টর এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৬৭ হেক্টর। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আম ও লিচুর। ২ লাখ ৮৬ হাজার কৃষকের ৩০০ কোটি টাকারও বেশি আমের ক্ষতি হয়েছে। আর লিচুতে ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ১৩ কোটি টাকারও বেশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানতে চাইলে কৃষি সচিব নাসিরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, কিছু ক্ষতি আছে যা পুষিয়ে নেওয়া নয়। যেমন— আম বাগান ও কলা বাগান। কৃষকদের আমরা যেভাবে বীজ ও সার দিয়ে সহায়তা করি, তাদের আবার সেভাবে সহায়তাও করা যায় না। আমরা তাদের সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনার আওতায় ঋণ নিতে উৎসাহিত করছি। তারা যেন ঋণ নিয়ে আবারও বাগান করতে পারে। সাধারণত ঋণের হার ৯ শতাংশ হলেও তারা ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাবে। আর ছোট খাটো যেসব ক্ষতি, তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। যেমন— পান বরজ। কিছুদিন পর বরজ আবারও ঠিক হয়ে যাবে।
আর অন্যান্য আক্রান্ত ফসলি জমির কৃষককে সামনের মৌসুমে বীজ, সার দিয়ে সরকার সহায়তা করবে।
জানা গেছে, কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে সরকার কয়েকটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে ফল ও পান চাষিদের দীর্ঘ মেয়াদে (৩ থেকে ৫ বছর) প্রণোদনার আওতায় ৪ শতাংশ সুদে ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। স্বল্প জীবনকালীন শাক সবজি ও ফসল উৎপাদন করে যেন দ্রুত বাজারজাত করা যায়, সেজন্য স্বল্প জীবনকালীন সবজি ও মসলা ফসল আবাদের জন্য পুনবার্সন কর্মসূচির আওয়াতায় বিনামূল্যে বীজ, সার ও নগদ সহায়তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগামী মৌসুমে আমনসহ বিভিন্ন ফসলের জমি চাষের জন্য বিনামূল্যে সার, বীজ ও নগদ সহায়তা করা হবে। এছাড়া কাঁচা আমের বহুবিধ ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়ে কৃষককে পরামর্শ প্রদান ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ৪৩ জেলায় আঘাত করেছে। এতে দণ্ডায়মান ফসল বিশেষ করে আম, লিচু, কলা, সবজি ও পান বরজসহ ২০টি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। আম্পানের ফলে ২ লাখ ৬৫ হাজার ৬৭ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ৪ হাজার ৭২৭ হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত এবং ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৬৭ হেক্টর জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফসলভেদে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত জমির ৩ থেকে ২৩ শতাংশ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতি মিলে মোট ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ ৩২ হাজার ১২৮ হেক্টর, যা মাঠে দণ্ডায়মান ফসলের ১ দশমিক ২১ শতাংশ। টাকার অঙ্কে মোট ক্ষতির পরিমাণ ৬৭১ কোটি ৬৯ লাখ ৯১ হাজার টাকা এবং মোট ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯ জন।
সরকারি তথ্য বলছে, আম্পানে বোরো ধানের ৩১ হাজার ৩৭৭ হেক্টর ফসলি জমি আক্রান্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ১৮ হাজার ৪৪৪ হেক্টর। আংশিক ক্ষতির হার ৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ১ হাজার ৩১৫ হেক্টর। ক্ষতির পরিমাণ ১২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ২৪ হাজার ২৫৫ জন।
এছাড়া আউশের ৩ হাজার ১২৫ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ হাজার ২৮ হেক্টর। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৮৮ হেক্টর। ৯ হাজার ৬৫৩ জন কৃষকের ৮৪ লাখ টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। একইভাবে ১ হাজার ৬১৩ হেক্টর আউশের বীজতলা আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ক্ষতি ১৮০ হেক্টর, আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৯৭২ হেক্টরের বীজতলার। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত বীজতলার পরিমাণ ৩০৯ হেক্টর। এতে ৩০ হাজার ৬২০ জন কৃষকের ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ধানজাতীয় ফসল ছাড়াও ক্ষতি হয়েছে ভুট্টা, পাট, গ্রীষ্মকালীন সবজি, মুগ, তিল, চীনাবাদাম, ফেলন, সয়াবিন, সূর্যমুখী, মরিচ, কলা, পেঁপে, পান বরজ, ফুল বাগান ও আখের। ফসলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আম বাগানের। আম্পানে ৭০ হাজার ৯১১ হেক্টর আম বাগান আক্রান্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৫৯ হেক্টর। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত আমবাগানের পরিমাণ ৭০ হাজার ৪৫২ হেক্টর এবং সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত আম বাগানের পরিমাণ ১০ হাজার হেক্টর। ২ লাখ ৮৬ হাজার কৃষকের এতে ৩০০ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর ১০ হাজার ৫৩৮ হেক্টর লিচু বাগান আক্রান্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত লিচু বাগানের পরিমাণ ১২০ হেক্টর, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত লিচু বাগানের পরিমাণ ১০ হাজার ৪১৮ হেক্টর। এতে ৩৭ হাজার ৯৪১ জন কৃষকের ১৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকার লিচু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।