ঢাকা: মানবপাচারকারীদের হাতে গত ২৮ মে লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মিজদাহতে ২৬ জন বাংলাদেশি নিহত হয়। এই ঘটনায় প্রকৃত তদন্তসহ জড়িতদের গ্রেফতার, দোষীদের যথাযথ শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন লিবিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ সায়ালা।
লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. সেকান্দার আলীর সঙ্গে শনিবার (৩০ মে) এক ফোনালাপে এই আশ্বাস দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ সায়ালা।
শনিবার (৩০ মে) বিকেলে লিবিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. সেকান্দার আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘২৬ জন বাংলাদেশি নিহতের ঘটনায় শোক জানাতে লিবিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ সায়ালা আজ ফোন দিয়েছিলেন। তখন আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বললে লিবিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এছাড়াও আমরা এর আগে লিখিতভাবে লিবিয়া সরকারের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার প্রকৃত তদন্তসহ জড়িতদের গ্রেফতার, দোষীদের যথাযথ শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছি।’ নিহত ২৬ বাংলাদেশিদের মধ্যে এখনও ৩ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলেও জানান রাষ্ট্রদূত মো. সেকান্দার আলী।
এর আগে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন শুক্রবার (২৯ মে) এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘ইতোমধ্যে দূতাবাস লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পুরো ঘটনা জানিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে, লিবিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিজদাহের সুরক্ষা বিভাগকে অপরাধীদের গ্রেফতার এবং তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়, গত ২৮ মে বৃহস্পতিবার লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মিজদাহতে (ত্রিপলি হতে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে) কমপক্ষে ২৬ জন বাংলাদেশিকে লিবিয়ান মিলিশিয়ারা গুলি করে হত্যা করেছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিকভাবে আক্রান্তদের মধ্যে সৌভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক বাংলাদেশির সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় দূতাবাসের। ওই ব্যক্তি জানান যে, তিনি একজন লিবিয়ানের আশ্রয়ে আত্মগোপনে আছেন।
বেঁচে যাওয়া ওই ব্যক্তি দূতাবাসকে আরও জানান, ১৫ দিন আগে বেনগাজী থেকে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে মানবপাচারকারীরা বাংলাদেশিদের ত্রিপোলিতে নিয়ে যাচ্ছিল। পথে তিনিসহ মোট ৩৮ জন বাংলাদেশি মিজদাহ শহরের কাছে লিবিয়ান মিলিশিয়া বাহিনীর হাতে জিম্মি হন। জিম্মিকারী তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করতো, যে কারণে একপর্যায়ে অপহৃতদের হাতে অপহরণকারী লিবিয়ান নিহত হয়। এর প্রতিশোধ নিতে লিবিয়ান মিলিশিয়া বাহিনী তাদের উপর এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে, যাতে আনুমানিক ২৬ জন বাংলাদেশি নিহত এবং আরও ১১ বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ হন।
বার্তায় আরও বলা হয়, মিজদাহ শহরে এখন যুদ্ধাবস্থা বিরাজমান এবং এ অঞ্চলটি এখন দু’টি শক্তিশালী পক্ষের যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে। কিছুদিন আগে ত্রিপোলিভিত্তিক এবং ইউএন সমর্থিত জিএনএ সরকার এই অঞ্চলটি দখল করে নিলেও জেনারেল হাফতারের নেতৃত্বাধীন পূর্বভিত্তিক সরকারি বাহিনী দু’দিন আগেও শহরটিতে বোমাবর্ষণ করেছে। ত্রিপলিভিত্তিক সরকারের এ অঞ্চলের উপর নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত ক্ষীণ। এ কারণে অধিকাংশ দেশ তাদের দূতাবাস তিউনিসিয়াতে স্থানান্তর করলেও বাংলাদেশসহ মাত্র তিনটি দেশ তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এ প্রতিকূল অবস্থাতেও বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসী বাংলাদেশিদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।