চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এসএসসি পরীক্ষায় এবার সব সূচকে ভালো ফলের রেকর্ড গড়েছেন পরীক্ষার্থীরা। গত চার বছরে পাসের হার সর্বোচ্চ। জিপিএ-৫ পাওয়া পরীক্ষার্থীও বেড়েছে। অন্যান্য বছর তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে থাকা পাহাড়ি জনপদের স্কুলগুলোর পরীক্ষার্থীরাও এবার ভালো ফল করেছেন।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরীক্ষকরা যাতে ভুলত্রুটি এড়িয়ে সঠিকভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন এবং পরীক্ষার্থীরা যাতে অহেতুক ক্ষতির শিকার না হন, সেই বিষয়টি এবার কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছিল। এর প্রভাব সার্বিক ফলাফলে পড়েছে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
রোববার (৩১ মে) সকালে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ গণমাধ্যমে এসএসসি’র ফলাফল পাঠিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতিতে এবার সংবাদ সম্মেলনের পরিবর্তে ই-মেইলে ফলাফল এবং শিক্ষাবোর্ডের পর্যালোচনা পাঠানো হয়েছে। একই পরিস্থিতির কারণে স্কুলগুলোতেও সরাসরি কোনো ফল ঘোষণা হয়নি। ফলে এবার স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের কোনো উপস্থিতিও নেই। ফলাফল ঘোষণার পর চিরচেনা উচ্ছ্বাসের পরিবেশও নেই।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এবার ১ হাজার ৪৩টি স্কুলের এক লাখ ৪৩ হাজার ৮২৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। এর মধ্যে এক লাখ ২১ হাজার ৮৮ জন পাস করেছেন। পাসের হার ৮৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা ২০১৬ সালের পর সবচেয়ে বেশি। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯২ দশমিক ৩৩ শতাংশ, মানবিকে ৭৫ দশমিক ৮৪ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৮৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
২০১৬ সালে ৯০ দশমিক ৪৫ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৮৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে ৭৮ দশমিক ১১ শতাংশ পাসের হার ছিল।
জিপিএ-৫ অর্জনেও গত পাঁচ বছরে রেকর্ড গড়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯ হাজার ৮ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞানে ৮ হাজার ৯৯ জন, মানবিকে ৬০ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ৮৪৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
২০১৬ সালে ৮ হাজার ৫০২ জন, ২০১৭ সালে ৮ হাজার ৩৪৪ জন, ২০১৮ সালে ৮ হাজার ৯৪ জন এবং ২০১৯ সালে পেয়েছিলেন ৭ হাজার ৩৯৩ জন পরীক্ষার্থী।
শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অন্যান্যবছর ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র এবং গণিতে তুলনামূলক খারাপ ফল করতেন পরীক্ষার্থীরা। এবার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রে পাসের হার ৯০ দশমিক ৬১ শতাংশ, গণিতে পাসের হার ৯৫ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং সব বিষয় মিলিয়ে পাসের হার ৯৯ শতাংশ।
এবারের ফলাফলে ছাত্রীরা তুলনামূলকভাবে বেশি ভালো করেছেন। এবার ৬৫ হাজার ৭৪৯ জন ছাত্র পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৫৫ হাজার ৮৩৯ জন পাস করেছে। পাসের হার ৮৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর ৭৮ হাজার ৭৪ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৬৬ হাজার ৪৯ জন। পাসের হার ৮৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। মোট ৯ হাজার ৮ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী ৪ হাজার ৭৬৩ জন এবং ছাত্র ৪ হাজার ২৪৫ জন।
এবার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীন মহানগরের স্কুলগুলোতে পাসের হার ৯০ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গতবার ছিল ৮৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। মহানগর বাদে চট্টগ্রাম জেলায় এবার পাসের হার ৮৫ দশমিক ১৪ শতাংশ। গতবার ছিল ৭৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। জেলা ও মহানগর মিলিয়ে এবার পাসের হার ৮৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। গতবার ছিল ৮০ দশমিক ৫৮ শতাংশ।
তিন পার্বত্য জেলা এবং কক্সবাজারে পাসের হার আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে। কক্সবাজার জেলায় পাসের হার এবার ৮৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গতবার ছিল ৭৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। রাঙ্গামাটি জেলায় এবার পাসের হার ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গতবার পাসের হার ছিল ৬৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। খাগড়াছড়ি জেলায় এবার পাসের হার ৬৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। গতবার ছিল ৬৫ দশমিক ৪৬। বান্দরবান জেলায় এবার পাসের হার ৭৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। গতবার ছিল ৫৭ দশমিক ৯২।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পাসের হার শূন্য এমন কোনো বিদ্যালয় নেই। শতভাগ পাস করা স্কুলের সংখ্যা গতবারের চেয়ে ২০টি বেড়ে ৫০টি হয়েছে।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতবার জেএসসি পরীক্ষার ফলাফলের পর উত্তরপত্র মূল্যায়নে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতির অভিযোগ পেয়ে আমরা তদন্ত করি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় আমরা ৩৬ জন পরীক্ষককে শাস্তি দিয়েছি। এবার এসএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের বিষয়টি আমরা কঠোরভাবে মনিটরিং করেছি। কোনো ধরনের ত্রুটি যাতে না হয়, সঠিকভাবে যাতে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয় সেই নির্দেশনা দিয়েছিলাম। কোনো পরীক্ষার্থী ক্ষতির সম্মুখীন হোক, এটা আমরা চাইনি। আন্তরিকতা নিয়ে পরীক্ষককরা উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেছেন, এজন্য চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে এবার ভালো ফল হয়েছে। এছাড়া রাঙামাটি ও বান্দরবানের ফল ভালো হয়েছে এবার।’