‘মুসলিম ভিলেজ’ বানাতে চেয়েছিল জঙ্গিরা, মূলহোতা গ্রেফতার: র্যাব
৩১ মে ২০২০ ২০:২৮
ঢাকা: আল্লাহর বিধানের দোহায় দিয়ে সাধারণ মানুষকে নিজেদের আয়ত্বে পরিচালনা করতে দেশে ‘মুসলিম ভিলেজ’ তৈরি করতে সশস্ত্রভাবে সুসংগঠিত হতে চেয়েছিল জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। কিন্তু র্যাবের দীর্ঘ অনুসন্ধানে ভণ্ডুল হল সে পরিকল্পনা। ইতোমধ্যে পরিকল্পনার মূলহোতাকে বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোববার (৩১ মে) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার মহিউদ্দিন ফারুকী।
তিনি জানান, শনিবার (৩০ মে) বিকালে পাবনার শহর থেকে আব্দুল্লাহ আকাশ নামের এক জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-২। এ সময়ে তার ঘর থেকে ইমপ্রোভাইজড বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ১৫টি মোটর, সার্কিট, ট্রান্সমিটার, তামার তার, এডপটার, কাটার মেশিন, হেক্সো ব্লেড, স্কেল, ড্রিল মেশিন, গ্র্যান্ডিং মেশিন, পাইপ, স্কচটেপ বৈদ্যুতিক তার, তারকাঁটা উদ্ধার করা হয়। সেই সঙ্গে বিভিন্ন শিরোনামে ১৫ সেট উগ্র জঙ্গিবাদী বই, পিডিএফ ডকুমেন্টস ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আকাশ জানায় তারা ‘মুসলিম ভিলেজ’ তৈরির পরিকল্পনা করেছিল। আকাশের বরাত দিয়ে র্যাব কর্মকর্তা মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, বাংলাদেশে একটি গ্রামকে মুসলিম ভিলেজ বানিয়ে সেখান থেকে তাদের কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা করেছিল তারা। তাদের মুসলিম ভিলেজের কনসেপ্ট ছিল- সেখানে আল্লাহর আইন হবে, মানুষের বানানো কোনো নীতিতে গ্রাম চলবে না, কেউ সরকারকে কোনো খাজনা দেবে না।’
‘সংগঠনের সদস্যরা গ্রামপর্যায় থেকে তাদের সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করবে। তাই পরিকল্পনা অনুযায়ী মুসলিম ভিলেজ প্রতিষ্ঠা করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার আশঙ্কা আছে। সেজন্য যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রতিহত করতে পারে তাই তারা সশস্ত্র প্রতিরোধের জন্য অস্ত্র, বিস্ফোরক ও ইমপ্রোভাইজড বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি সংগ্রহ, তৈরির চেষ্টাসহ নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করার পরিকল্পনা করছিল। শুধু তাই নয়, সে অনুযায়ী কার্যক্রমও শুরু করেছিল, বলেন র্যাব কর্মকর্তা মহিউদ্দিন।
ঘটনার নেপথ্যের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে র্যাব কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি মুন্সিগঞ্জের সদর থানার মাঠপাড়া সাকিনের হরগঙ্গা কলেজের পিকলুছ ভিলা থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের তিন সদস্যকে বিস্ফোরক দ্রব্য ও উগ্র জঙ্গিবাদি বইসহ গ্রেফতার করা হয়। ওই আসামিরা তাদের সংগঠনে যোগদানের ব্যপারে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কোমলমতি যুবকদের উদ্বুদ্ধ করে সংহতি ও জননিরাপত্তা বিপন্ন, জনগণের জানমালের ক্ষতি সাধন করার জন্য বিস্ফোরক পদার্থ, জিহাদি বই, প্রচার পত্র নিজেদের দখলে রেখে ও বিলি করার চেষ্টার মাধ্যমে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা এবং একে অপরের যোগসাজশে অপরাধ সংগঠনসহ জন্য সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে মুন্সীগঞ্জে সমবেত হয়েছিল।
আটক ও পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে মুন্সিগঞ্জের সদর থানায় সে সময় একটি মামলা করা হয়। পরে গতকাল শনিবার বিকালে পাবনা জেলার বিসিক শিল্প এলাকার সামনে কলাবাগান মাঠপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তদন্তে প্রাপ্ত আসামি আব্দুল্লাহ আকাশকে গ্রেফতার করা হয়। সহযোগিদের সম্পর্কে তথ্য জানতে গ্রেফতারকৃত আবদুল্লাহ আকাশের সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে মুন্সিগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান মহিউদ্দিন ফারুকী।