ঢাকা: সারাদেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলপ্রকাশের দিনে মিষ্টির দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ই চিরচেনা দৃশ্য। অথচ এবারের দৃশ্যপট সম্পূর্ণ আলাদা। ভিড় তো দূরের কথা, ক্রেতাদের উপস্থিতিই ছিল না দোকানগুলোতে। কোনো কোনো দোকান তো বন্ধই ছিল! দোকান মালিকরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে তাদের দোকানে যে বেচাকেনা হয়, এদিন তার অর্ধেকও বিক্রি হয়নি।
রোববার (৩১ মে) রাজধানীর মিরপুর, মতিঝিল, নয়াপল্টন, মগবাজার, ধানমন্ডি ও উত্তরাসহ বিভিন্ন এলাকার মিষ্টির দোকানগুলোতে সরেজমিনে ঘুরে ও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ দোকানে মিষ্টি বেচাকেনা নেই। কিছু দোকান বন্ধও পাওয়া গেছে। তবে দোকানদাররাও পরিস্থিতি আঁচ করতে পারছিলেন। সে কারণে এসএসসি’র ফল ঘিরে তাদের বেশিরভাগই বাড়তি কোনো প্রস্তুতি নেননি বলে জানান।
আরও পড়ুন- এসএসসির ফল: করোনা কেড়ে নিয়েছে উচ্ছ্বাস-উল্লাস
বাংলাদেশ সুইট ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও রাজধানীর ৫৪ নয়াপল্টনে অবস্থিত মুসলিম সুইটসের মালিক মোহাম্মদ আলী সারাবাংলাকে বলেন, বছরে দিন হিসাবে সবচেয়ে বেশি মিষ্টি বিক্রি হয় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলপ্রকাশের এই দিনটিতে। ফলে এসএসসি’র ফল প্রকাশের দুই-তিন দিন আগে থেকেই আমাদের অতিরিক্ত মিষ্টি বানানোর প্রস্তুতি নিতে হয়। তারপরও ফলপ্রকাশের দিন বিকেলের আগেই দোকানের সব মিষ্টি শেষ হয়ে যেত। কিন্তু এবার এসএসসি ফলপ্রকাশের দিন উপলক্ষে বাড়তি মিষ্টি বানানোর কোনো প্রস্তুতি ছিল না। কারণ করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দুই মাস ধরে মিষ্টির দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে। কারণ ৩১ মে থেকে সাধারণ ছুটি শেষে অফিস খুললে এবং এদিন এসএসসি’র রেজাল্ট দিলেও ক্রেতা আসবে না, এমনটিই ধারণা করছিলেন।
মোহাম্মদ আলী বলেন, স্বাভাবিক সময়ে আমাদের একটি দোকানে যে পরিমাণ মিষ্টি বেচাকেনা হয়, এবার এসএসসি ফলপ্রকাশের দিনে তার অর্ধেকও হয়নি।
রাজধানীর উত্তরার রাজলক্ষী কমপ্লেক্সে অবস্থিত আলীবাবা সুইটসের মালিক মোহাম্মদ আবদুস সালাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে মানুষ আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। ফলে এসএসসি‘র ফলপ্রকাশের দিনেও মিষ্টি বিক্রি নেই।’ স্বগতোক্তির মতো তিনি বলেন, ‘কিভাবে বিক্রি হবে, মানুষ তো ঘর থেকেই বের হচ্ছে না।’
আবদুস সালাম আরও বলেন, আমাদের দোকানের অধিকাংশ কারিগর ছুটিতে রয়েছে। বেশকিছু শাখা আজ খোলাই হয়নি। কয়েকজন কারিগর ও কর্মচারী দিয়ে মিষ্টির দোকান আজ খোলা হলেও বেচাকেনা নেই।
অন্যদিকে রাজধানীর মতিঝিল এজিবি কলোনির বাসিন্দা ফারুক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, আমার ছেলে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ‘গোল্ডেন এ প্লাস’ পেয়ে পাস করেছে। আমরা খুবই খুশি। কিন্তু ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মিষ্টি কিনতে বের হইনি। কারণ করোনাভাইরাসের ভয়ে কোথাও কেউ বিশেষ প্রযোজন ছাড়া বের হচ্ছেন না। ফলে মিষ্টি কিনে কাদের মাঝে বিতরণ করব? বরং মিষ্টি বিতরণ করতে গেলেও অনেকে বিরক্ত হবেন নিশ্চয়।
তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা আরেক অভিভাবক তরিকুর বলেন, ছোট বোন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ও বাড়িতে আছে। কিন্তু সময় স্বাভাবিক থাকলে এই দিনটিতে ঢাকাতেও আত্মীয়-স্বজনের বাসায় এবং অফিসে সহকর্মীদের জন্য মিষ্টি কিনতাম। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এসএসসির ফলাফলে মিষ্টিমুখ করানোর সুযোগটা কেড়ে নিল।
ফাইল ছবি