২০ বছর ধরে অপেক্ষায়, ছেলে কোথায় জানতে চাইলে ‘জেলে পচানো’র হুমকি
১ জুন ২০২০ ১২:৩৮
ঢাকা: ২০ বছর আগে বাবা আব্দুল করিম ব্যাপারী নগদ ৩ লাখ টাকা নিয়ে ছেলে আবুল কাশেমকে তুলে দিয়েছিলেন ভাঙ্গা উপজেলার রফিকুজ্জামানের হাতে। আশা ছিলো ছেলে বিদেশে গিয়ে ভালো আয়-রোজগার করবে। কিন্তু সে আশাই যেন কাল হয়ে গেল, নিখোঁজ হয়ে গেছে ছেলে আবুল কাশেম। এখন ছেলেকে ফেরত চাইলেই মানবপাচারকারীর কাছ থেকে মেলে ‘মামলা দিয়ে জেলে পচানোর হুমকি’।
ভুক্তভোগী আব্দুল করিম ব্যাপারী অভিযোগ করে বলেন, ‘রফিকুজ্জামান নগদ ৩ লাখ টাকা নিয়ে ছেলে আবুল কাশেমকে পাচারকারীদের হাতে বিক্রি করে দিয়েছে। ২০ বছর ধরে বুকে পাথর বেঁধে ছেলের আশায় পথ চেয়ে আছি। কিন্তু ছেলেকে ফেরত চাইলেই মানবপাচারকারী রফিকুজ্জামান মামলা দিয়ে জেলে পচানোর হুমকি দেয়।’
ছেলে হারানো মা জহুরা খাতুনআহাজারি করে বলেন, ‘ছেলেকে কোথায় রেখেছে, বিক্রি করেছে নাকি বেঁচে আছে, রফিকুজ্জামান কিছুই বলেন না। অথচ টাকা নেওয়ার সময় বলেছিল ছেলেকে ইউরোপে পাঠাবে। এখন ছেলের কথা জিজ্ঞেস করলে বলে, মামলা দিয়ে ভিটে ছাড়া করবে। আমরা এর বিচার চাই।’
অভিযোগ আছে, রফিকুজ্জামান মাদকব্যবসা থেকে শুরু করে মানবপাচারের মতো কাজ করেন। অনেক ভালো লোককে দিয়ে জোর করে মাদক বহন করান তিনি। মাদক বহন না করায় একাধিক মানুষকে তিনি মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়েছেন। এসব নিয়ে ভুক্তভোগীরা বিচার চেয়ে গত ১১ মে দেওরাবাজার এলাকায় মানববন্ধন করেছেন। মানববন্ধন শেষে ইউএনও, ওসি, ডিসি ও এসপি বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তারা।
দেওরা হাট-বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কামাল হোসেন খলিফা সারাবাংলাকে বলেন, ‘এমন কোনো খারাপ কাজ নেই যা রফিকুজ্জামান করে না। পুলিশ প্রসাশনও তার টাকার কাছে জিম্মি। আবার কিছু নামধারী সাংবাদিকও আছে যারা তাকে সহযোগিতা করেন। বর্তমানে সব বিষয়ে ওসি সাহেব দেখভাল করছেন, তিনি সব পক্ষকে ডেকে মীমাংসায় বসবেন বলে জানতে পেরেছি।’
কালামৃধা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিটন মাতব্বর বলেন, ‘রফিকুজ্জামানের সাথে দেওরা বাজারের জাহাঙ্গীর নামে একজনের সাথে দ্বন্দ্ব থেকে এখন সব ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। তবে সে মাদক ব্যবসা করেন কিনা তা আমার জানা নাই। অনেকে বলেন ইয়াবা ব্যবসার কথা। তবে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে তার উঠা-বসা আছে তা জানি।’
ভাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান হাবীবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘রফিকুজ্জামানের বিরুদ্ধে আমার কাছে এলাকাবাসীর অনেকেই লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। শুধু আমাকেই নয়, ইউএনও এবং থানার ওসি বরাবরও অভিযোগ দিয়েছেন এলাকাবাসী। এ অভিযোগ পেয়ে রফিকুজ্জামানকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। সে একাধিকবার আসতে চেয়েও আসেননি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে, অভিযুক্ত রফিকুজ্জামানকে বারবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
রফিকুজ্জামানের বিষয়ে জানতে চাইলে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘রফিক নামে ওই লোকটি দুষ্ট ও খারাপ প্রকৃতির। মানুষকে হয়রানি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একাধিক ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে থানায়। রফিকও চালাকি করে উল্টো একটি অভিযোগ দিয়েছেন। দুই পক্ষকে নিয়েই বসার চেষ্টা চলছে। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনও মহোদয় সময় দিতে চেয়েছেন।’ মীমাংসা না মানলে আইনি ব্যবস্থা যাবেন বলেও জানান ওসি।