১০ বছর ধরে মানব পাচার করত এই কামাল
১ জুন ২০২০ ১৭:১৫
ঢাকা: মানব পাচারকারী একটি চক্রের মূল হোতা কামাল উদ্দিন ওরফে হাজী কামালকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র্যাব)। সম্প্রতি লিবিয়ার মিজদা শহরে যে ২৬ বাংলাদেশিকে পাচারকারীরা গুলি করে হত্যা করেছে, তাদের অনেকেই এই কামালের মাধ্যমেই লিবিয়া পাড়ি জমিয়েছিলে বলে জানা গেছে।
র্যাব বলছে, কামালের বিরুদ্ধে গত ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ উপায়ে কয়েকটি দেশের বিমানবন্দর ব্যবহার করে ইউরোপে লোক পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে। মানব পাচারকারী চক্রটি পদে পদে লোকদের জিম্মি করত এবং নির্যাতন চালিয়ে পরিবারের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত।
সুনির্দিষ্ট এসব তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে র্যাব-৩ কামালকে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছেন সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল রকিবুল হাসান। সোমবার (১ জুন) র্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
রকিবুল হাসান বলেন, গ্রেফতার আসামি কামালকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর ধরে এই অপরাধে জড়িত তিনি। সংঘবদ্ধ চক্রটি বিদেশি চক্রের সঙ্গে যোগসাজশে অবৈধভাবে বাংলদেশি নাগরিকদের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, ইউরোপের উন্নত জীবনের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিনিয়ত অসহায় বাংলাদেশিদের অবৈধভাবে নৌপথ ও দুর্গম মরুপথ দিয়ে পাঠিয়ে আসছে পাচারকারী এই চক্রটি। এই অবৈধ অভিবাসীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে জিম্মি করে প্রতিনিয়ত মুক্তিপণ দাবি এবং শারীরিক নির্যাতনও করে আসছে চক্রটি।
র্যাব সিও বলেন, গ্রেফতার হাজী কামাল (৫৫) এই কুখ্যাত দালাল চক্রের অন্যতম মূল হোতা। তিনি গত ১০ থেকে ১২ বছর ধরে অবৈধভাবে লিবিয়াতে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশিকে পাঠিয়েছেন। লিবিয়া ছাড়াও সে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও অবৈধ প্রক্রিয়ায় অভিবাসন করিয়েছেন। এছাড়াও তিনি টাইলস কন্ট্রাক্টর । প্রচুর পরিমাণে টাইলস শ্রমিকের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। আর সেই সুযোগে তাদের প্রলুব্ধ করে পাচার করে দেন।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, টাইলস মিস্ত্রিদের প্রলোভন দেওয়া হতো, লিবিয়ায় টাইলস মিস্ত্রিদের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা উপার্জন করা সম্ভব। এরকম প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় যাওয়ার আগে এক লাখ টাকা ও পৌঁছানোর পর পরিবারের কাছ থেকে চার লাখ টাকা নেওয়ার কথা বলতেন কামাল ও তার চক্রের সদস্যরা। এই প্রস্তাবে কেউ রাজি হলে পরে পাচারকারী দলের সদস্যরা ভিকটিমদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকার জন্য শারীরিক নির্যাতন করত। সেই নির্যাতনের ভিডিও ভিকটিমদের পরিবারের কাছে পাঠানো হতো। এভাবে তাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিত চক্রটি।
র্যাব সিও বলেন, অবৈধ প্রক্রিয়ায় এভাবে শ্রমিকদের বিদেশে পাঠাতে গিয়ে অনেকেই সাগর পার হওয়ার সময় মারা যান। অনেকের স্থান হয় গহীন জঙ্গলে, সেখানে অনাহারে-অর্ধাহারে তাদের দিন কাটে। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে গ্রেফতার হতে হয়।
র্যাব সিও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তথ্যানুসন্ধানের মাধ্যমে এই চক্রটিকে শনাক্ত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চক্রের মূল হোতা কামাল উদ্দিন ওরফে হাজী কামালকে গুলশান শাহজাদপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
কামাল উদ্দিন ওরফে হাজী কামাল পাচারকারী চক্র মানব পাচারকারী মানব পাচারকারী চক্র র্যাব