সরকার কানে তুলো দিয়েছে— মির্জা ফখরুল
১ জুন ২০২০ ১৯:১০
ঢাকা: সরকার কারও কোনো কথা শুনছে না অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘তারা কানে তুলো দিয়েছে।’
সোমবার (১ জুন) দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কাল থেকে দেখছি রেলগাড়ি চলছে এবং ট্রেনগুলোতে গাদাগাদি করে মানুষ আসছে। বাসে রীতিমতো মারামারি হচ্ছে ওঠার জন্য, জায়গা পাওয়ার জন্য। বাংলাদেশে এভাবে গণপরিবহনকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। অফিস খুললে তো লোকজন আসবেই। লঞ্চেও একই অবস্থা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারের টেনিক্যাল পরামর্শক কমিটি এবং বিশেষজ্ঞরা বার বার বলছেন, সব কিছু খোলার সিদ্ধান্ত হবে সুইসাইডাল। এটা করলে ভয়ংকর অবস্থা সৃষ্ট হবে। তারা সেই কথা শুনেননি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ পরিষ্কার করে বলেছেন, এটা ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করবে, সংক্রমণ আরও ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাবে।’
“এখন সরকারের অবস্থা এমন যে ‘কানে দিয়েছি তুলো’। যা খুশি বলেন, আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা তো বেশ আছি,”— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকার আরও সময় নিতে পারত। ভারত সরকার সব রাজ্যের চিফ মিনিস্টার, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিদের সঙ্গে কথা বলেছে। কথা বলে আরও একমাস লকডাউন বাড়িয়েছে।’
‘আমি বার বার বলেছি, দায়িত্বশীলতা নেই বলেই সরকার এভাবে তুঘলকি কারবার করছে, যেটা জনগণকে পুরোপুরিভাবে মহাবিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে,’—বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘সরকার একলা চলো নীতি অটুট আছে। এই একলা চলো নীতি পুরোপুরিভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ৭৭ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ দেওয়া হবে, কোনো ইনসেনটিভ না। এটা কিন্তু একটা কৌশল। যে কৌশলে খুনোখুনিও হচ্ছে। এক ব্যাংকের ডিরেক্টর আরেক ব্যাংকের ডিরেক্টরকে ধরে নিয়ে আসছে বাসায়। তাকে বন্দুক ধরছে। তারা আবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দেশ থেকে চলেও যাচ্ছে। হোয়ার ইজ গভর্নমেন্ট, সরকার কোথায়?’
বাস ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে ‘অমানবিক’ অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণভাবে অমানবিক কাজ করা হয়েছে। আর এমনিতেই মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। বাসে কারা ওঠে? কম আয়ের সাধারণ মানুষেরাই বাসে ওঠে। তাদের বাস ভাড়া বাড়িয়ে দিলো। কার স্বার্থে বাড়িয়েছে? মালিকদের স্বার্থে বাড়িয়েছে। মালিকদেরকে আবার প্রণোদনা দিচ্ছে, অনুদান দিচ্ছে। পুরো বিষয়টা হয়েছে লুটপাটের জন্য, পুরোপুরি লুটপাট। দুর্নীতির চরমভাবে সুযোগ নিচ্ছে সবাই।’
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত কিট এখন পর্যন্ত অনুমোদন না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কিট এখনো অনুমোদন পায়নি। পত্র-পত্রিকায় আমরা দেখেছি, এই কিট নিয়েও বিভিন্ন রকমের দুর্নীতি চলছে, ব্যবসা চলছে, বাণিজ্য চলছে। মানুষের এই দুর্দিনে যারা মানুষের স্বাস্থ্যকে, জীবনকে পুঁজি করে ব্যবসা করার, বাণিজ্য করার সুযোগ দেয়, সেই সরকারকে কি আমরা দুর্নীতিমুক্ত বলতে পারব? পারব না।’
মির্জা ফখরুলের প্রত্যাশা— সরকার ভুল-ত্রুটিগুলো শুধরে নিয়ে জনগণের জন্য কাজ করবে। করোনা ভাইরাসের কারণে কৃষি ও কৃষকদের দুর্বিষহ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১০ দফা প্রস্তবানাও তুলে ধরেন তিনি।
প্রস্তাবনাগুলো হলো— আগামী একবছর পোল্ট্রি ও ডেইরিসহ সব ধরনের কৃষি ঋণের কিস্তি সুদসহ মওকুফ; বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ ও ভুর্তকিসহ প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্ধ; কৃষিপণ্যসহ আম, লিচু, কাঁঠাল, পেয়ারা প্রভৃতি ফল সরকারি উদ্যোগে বাজারজাত নিশ্চিত করা; কৃষকদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো; কৃষকদের উৎপাদিত ধানের বিপরীতে কমপক্ষে তিন মাসের সমপরিমাণ টাকা বিনা সুদে প্রদান; কৃষকদের কাছ থেকে বেশি পরিমাণ ধান কিনতে অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ; প্রান্তিক চাষি ও ক্ষেত মজুরদের জন্য বিশেষ সুদবিহীন ঋণ ও কৃষকদের ওপরে হয়রানি বন্ধ করে তাদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ও চাল কেনার ব্যবস্থা করা।
বর্তমান পরিস্থিতিতে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের নেওয়া কর্মসূচি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে— ১০ জুন প্রতিটি জেলায় প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে চলতি মৌসুমে বোরো ধান কেনার দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি পেশ; আর্থিক ও পরিবহন সংকটে যেসব কৃষক ধান বিক্রি করতে পারছে না, তাদের কৃষকদলের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া; এবং প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে চলমান ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রাখা।
ফখরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকারের বেশিরভাগ সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। সবাই জানি, কৃষি আমাদের মেরুদণ্ড। এই করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব অর্থনীতিতে পড়বে। এখান থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা কিন্তু এই কৃষি। অর্থাৎ এই কৃষিকে যদি আরও উজ্জীবিত করা যায়, উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়, তাহলে অর্থনৈতিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসা যাবে। কিন্তু সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে, সেই প্রণোদনার মধ্যে কৃষি এক্বোরেই অবহেলিত।’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রয়াত শিল্পপতি আব্দুল মোনেম, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব মোস্তফা কামাল সৈয়দ, শিক্ষাবিদ আবদুল কাদের ভুঁইয়াসহ করোনায় মৃত ব্যক্তিদের বিদেহী আত্মার প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, তার স্ত্রী শিরিন পারভিন হক, ছেলে বারিশ হাসান চৌধুরী, প্রবীণ আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান ও তার স্ত্রীসহ গণমাধ্যমের সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের আশু রোগমুক্তি কামনা করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু, সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন, সদস্য মেহেদি হাসান পলাশ, অধ্যাপক শামসুর রহমান শামস, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন নসুসহ অন্যরা।
করোনা মোকাবিলা কৃষিতে প্রণোদনা প্রণোদনা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাধারণ ছুটি