‘কাজে আসবে না স্বাস্থ্যবিধি, গার্মেন্টসে করোনা ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা’
২ জুন ২০২০ ০৯:২৭
ঢাকা: কারখানায় প্রবেশের সময় শ্রমিকদের লাইন ধরে প্রবেশ করতে হচ্ছে। ব্যবহার করতে হচ্ছে মাস্ক, মাপা হচ্ছে তাপমাত্রাও। ভেতরেও বেশ কিছু কারখানায় লাইনগুলো ফাঁকা রাখা হয়েছে। কাজ শেষে শ্রমিকরাও বের হচ্ছেন লাইন ধরে। তবে কারখানায় আসা-যাওয়ার পথে স্বাস্থ্যবিধির কোনোটাই শ্রমিকদের পক্ষে মানা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কারখানার এসব স্বাস্থ্যবিধি কোনো কাজে আসবে না বলে আশঙ্কা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শ্রমিক সারাবাংলাকে জানান, কারখানার প্রবেশমুখে জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে। বাধ্যতামূলকভাবে পড়তে হচ্ছে মাস্ক। তবে কারখানার ভেতরে কাজের সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আর ছুটির সময় অধিকাংশ শ্রমিকই দলে দলে বের হচ্ছে। বাসায় ফেরার পথেও মানা হয় না সামাজিক দূরত্ব। বাসায় অবস্থানের ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘গার্মেন্টস খোলা নিয়ে সরকার প্রথম থেকেই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফ্যাক্টরিগুলো খোলার মধ্য দিয়ে শ্রমিক ও দেশের জনগণকে সরকার করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছে। শিল্প পুলিশের তথ্যমতে ২৮ মে পর্যন্ত ৯০টি কারখানায় ১৯১ জন শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু আমাদের মতে হাজারের বেশি শ্রমিকের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। কারণ অনেক শ্রমিক ও শ্রমিক নেতারা এখন জ্বরে আক্রান্ত। তাদের টেস্ট করানো যাচ্ছে না। সেটি গণনায় নিলে সংখ্যাটি হাজারের কম হবে না।’
তিনি বলেন, শ্রমিকরা যেভাবে কারাখানায় যাওয়া-আসা করেছে, তাতে তারা আরও বেশি করে সংক্রমিত হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কারখানাগুলোর অবকাঠামোগত কারণেই এর ভেতরে করোনা প্রতিরোধক স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলা খুবই কঠিন। আমরা প্রথম থেকেই এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। এখন আবার মরার উপর খাঁড়ার ঘার মতো অবস্থা হয়েছে। ঈদের ছুটির পর বিভিন্ন কারখানায় ছাঁটাই হচ্ছে। শ্রমিকরা এখন আন্দোলনে নামতে বাধ্য হচ্ছে। আমরা অন্যায়ভাবে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি পুরো মানা হচ্ছে না। গাজীপুর-আশুলিয়ার বেশ কিছু কারখানায় তা দেখা গেছে। শ্রমিকরা কারখানায় প্রবেশের সময় লাইন ধরে প্রবেশ করলে বের হওয়ার সময় একসঙ্গে বের হচ্ছে। রাস্তায়ও আবার দলেদলে একসঙ্গে হয়ে যাচ্ছে। শুধু মাস্ক ব্যবহার করলে তো আর হবে না, স্বাস্থ্যবিধি না মানায় শ্রমিকদের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
শ্রমিকদের আসা-যাওয়ার পথে স্বাস্থ্যবিধি মানা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিজিএমইএ‘র সভাপতি রুবানা হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘শ্রমিকরা আসা-যাওয়া করে বাসা বাড়ি থেকে। পথে তারা কী করে তা তো আমাদের দ্বারা বলা মুশকিল।’
আর সংগঠনটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ফয়সাল সামাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সতর্কতা অবলম্বন করে ফ্যাক্টরি চালাচ্ছি। এখানে কোন শর্ট ফর্মুলা নেই। পুরোটা মেনেই কারখানা চলছে। এখানে সবাই সতর্ক।’
শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হওয়ার সময় স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, এমন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন সবাই বুঝে গেছে। আগে তারা দলবেঁধে বের হতো। এখন আর দলবেঁধে বের হয় না।’
এর আগে, বিকেএমইএ’র প্রথম সহ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন, করোনায় কারখানায় শ্রমিকদের অবস্থান নিয়ে তারা শঙ্কিত নয়। বরং শ্রমিকরা যখন কারখানা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে, তখন তারা দলবেঁধে গা ঘেঁষে বাসায় ফিরছে। একই বাসায় একই বিছানায় কয়েকজন অবস্থান করছে, করোনা মোকাবিলায় এই বিষয়টি তাদের ভাবিয়ে তুলছে।