Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত ৫৪ জন, জুনে সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা


২ জুন ২০২০ ১৯:৫৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: বন্দরনগরী চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। দুই মাসের ব্যবধানে আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে। গত দুই মাসে প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ৫৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে অন্তঃত একজনের মৃত্যু হয়েছে, উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুকে হিসেবের আওতায় আনলে এই হার আরও বাড়বে। এর বিপরীতে প্রতিদিন সুস্থ হচ্ছেন অন্তত ৫ জন।

চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন মহানগরী এলাকার বাসিন্দারা। মহানগরীতে আক্রান্তের হার ৭৯ শতাংশ এবং বিভিন্ন উপজেলায় ২১ শতাংশ। করোনা সংক্রমণের দুই মাসের মাথায় এসে এই মহামারি এখন ছড়িয়ে পড়েছে নগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় ও উপজেলায়।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এরপর আক্রান্তের শীর্ষে আছেন চিকিসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের গেটওয়ে চট্টগ্রাম বন্দর এবং শুল্কায়নে যুক্ত কাস্টমসেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মাসে চট্টগ্রামে সংক্রমণের হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়বে। বাড়তে পারে মৃত্যুহারও। অফিস-আদালত ও গণপরিবহন চালু করায় পরিস্থিতির অবনতি হবে বলে আশঙ্কা তাদের।

গত ২৬ মার্চ থেকে চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) ল্যাবে করোনা শনাক্তে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। এরপর শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সাইন্সেস ইউনিভার্সিটি (সিভাসু) ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ল্যাবেও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা থেকে সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২৬ মার্চ থেকে ১ জুন পর্যন্ত ৬০ দিনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৪ হাজার ৩৬২ জনের। নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩ হাজার ৭১০ জনের। তবে চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে নমুনা সংগ্রহের সঠিক হিসাব দিতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।

গত ৩ এপ্রিল চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়ায় প্রথম একজন করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। দুই মাস পর গত ১ জুন আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ১৯৩ জনে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন  ২৪২ জন। মারা গেছেন ৭৭ জন।

গত ২৯ মে পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে ২ হাজার ৪১ জন ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগরীর। মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণেলহাট, কাট্টলী, সাগরিকা, ফিরিঙ্গিবাজার, কোতোয়ালী, ইপিজেড, পতেঙ্গাসহ কয়েকটি এলাকায় সংক্রমণ সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন সেটা নগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।

২৯ মে’র হিসেবে আক্রান্তদের মধ্যে উপজেলার বাসিন্দা আছেন ৫৪৭ জন। চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলার মধ্যে হাটহাজারী, পটিয়া এবং সীতাকুণ্ডে সংক্রমণের হার বেশি। সেখানে প্রায় ১০০ জনের কাছাকাছি প্রতিটি উপজেলায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট কোনো এলাকা নয়, পুরো চট্টগ্রাম মহানগরীই এখন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সব উপজেলাতেই আক্রান্তের হার বাড়ছে। তবে উপজেলার তুলনায় মহানগরীতে আক্রান্তের হার প্রায় তিন গুণ বেশি। মে মাসের মাঝামাঝি থেকে মূলত চট্টগ্রামে পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। যেহেতু বেশি নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং বেশি পরীক্ষা হচ্ছে, আক্রান্তের হারও বাড়ছে। চলতি জুন মাসে এই পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। সীমিত আকারে হলেও অফিস-কারখানা খোলা হয়েছে, গণপরিবহন চালু হয়েছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতাও কম। সব মিলিয়ে জুনে আক্রান্ত আরও অনেক বাড়বে।’

সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুায়ী, বয়স অনুযায়ী চট্টগ্রামে ২১ বছর থেকে ৪০ বছর বয়সীদের আক্রান্তের হার বেশি। এর মধ্যেও ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এর হার ২৭ শতাংশ। ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সী আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ শতাংশ। আক্রান্তদের মধ্যে ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১৭ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ১৪ শতাংশ এবং ৬০ বছরের বেশি বয়সী আছেন ৮ শতাংশ। শূন্য থেকে দশ বছর বয়সী আক্রান্ত আছে ২ শতাংশ এবং ১১ বছর থেকে ২০ বছরের মধ্যে আক্রান্ত আছেন ৭ শতাংশ।

৩৪৮ পুলিশ্যাব আক্রান্ত

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য মিলিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪৮ জন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৬ জন। সুস্থ হয়েছেন ৫৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। আরও ২ জন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের আক্রান্ত হয়েছেন ৮৭ জন সদস্য। সুস্থ হয়েছেন তিন জন এবং একজন মারা গেছেন। শিল্প পুলিশের ৪৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৮ জন সুস্থ হয়েছেন। র‌্যাব সদস্যদের মধ্যে ৪৯ জন আক্রান্ত ও চার জন সুস্থ হয়েছেন। চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের চার জন কারারক্ষীও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

সিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (সদর) মইনুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘সিএমপির পুলিশ সদস্যদের মধ্যে যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তারা সবাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের অধিকাংশই সুস্থ আছেন। শরীরে করোনার তেমন উপসর্গও নেই।’

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মহিউদ্দিন মাহমুদ সোহেল সারাবাংলাকে বলেন, ‘জেলা পুলিশে আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশেরই কোনো লক্ষণ নেই। এই মুহুর্তে আশঙ্কাজনক অবস্থায়ও কেউ নেই। এরপর আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তের পর তার সংস্পর্শে আসা সদস্যদের কোয়ারেনটাইনে পাঠানোসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।’

বন্দরকাস্টমসেও আক্রান্ত কম নয়

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, বন্দরে এ পর্যন্ত ৪১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে চার জনের করোনায় মৃত্যু হয়েছে। একজন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। ২৪৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কোয়ারেনটাইনে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, চট্টগ্রাম কাস্টমসে এ পর্যন্ত ১৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

করোনায় আক্রান্ত ৭১ চিকিৎসক

চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরতদের মধ্যে ৭১ জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৭ জন। করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন একজন।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ’৭১ জন আক্রান্তের মধ্যে ১৭ জন ডাক্তার এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দিয়েছেন। বাকিদের মধ্যে তিন জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন। অন্যরা মোটামুটি সুস্থ আছেন। একজন ডাক্তার মারা গেছেন। যদিও নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছে, আমাদের ধারণা তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। কারণ টেস্টে শতভাগ নির্ভুল ফলাফল আসে না। ৩০ শতাংশের মধ্যে ত্রুটি থাকতে পারে।’

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি সারাবাংলাকে বলেন, ‘আক্রান্তের হার বাড়লেও শঙ্কার কারণ নেই। আক্রান্তদের মধ্যে মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। এক থেকে দুই শতাংশ রোগীকে আইসিইউ সাপোর্ট দিতে হচ্ছে। আমরা রেলওয়ে হাসপাতাল চালু করেছি। সেনাবাহিনী একটি আইসোলেশন সেন্টার করে দিচ্ছে, যেটি সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। আক্রান্তের পর যাদের অবস্থা খারাপ থাকবে কিংবা যাদের বাসায় আইসোলেশনে থাকার মতো ফ্যাসিলিটি নেই, আশা করি, তাদের আমরা পর্যাপ্ত সেবা দিয়ে সুস্থ করতে পারব।’

করোনা সংক্রমণ করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন বিআইটিআইডি সংক্রমণ শনাক্ত সিএমপি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর