করোনায় জিডিপি নামবে ৩ শতাংশে, অলস বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের দাবি
৩ জুন ২০২০ ০১:২৮
ঢাকা: মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় হবে, তাতে দেশের জিডিপি ৮ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য অর্থ সাশ্রয় করতে দেশের অলস, পুরনো ও অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (২ জুন) এক ভার্চুয়াল মতবিনিময় সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়। ‘বৈদেশিক দেনা, বিদ্যুৎ খাত ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনার থেকে বক্তারা এ দাবি জানান।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, করোনাভাইরাস মহামারির আঘাত সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও কঠিনভাবে লেগেছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আট শতাংশ থেকে হয়তো তিন শতাংশে নেমে আসবে। কিন্তু এরই মধ্যে প্রতিমাসে অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে ৪১ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করছে সরকার। এদিকে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অর্থ লগ্নিকারী আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলোর কাছে সরকারের দেনা দিন দিন বাড়ছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক দেনার পরিমাণ প্রায় ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। বাংলাদেশের এখন প্রতিবছর মোট দেশজ উৎপাদনের ৩ শতাংশ খরচ করতে হয় শুধু এই দেনার সুদ পরিশোধ করার জন্য। আগামী ২-৩ বছর বাংলাদেশের বার্ষিক দেনা পরিশোধ স্থগিত রাখার জন্য আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আহ্বান জানানো হয়।
ভার্চুয়াল আলোচনায় বসে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, বসে থাকা অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিপুল অঙ্কের অর্থ সরকারকে প্রতিবছর পরিশোধ করতে হয়। বন্ধ করে দিলে আর তা করতে হবে না। বরং ওই অর্থ করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত দেশের সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতে খরচ করা যাবে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক দেনা বিষয়ক কর্মজোট, গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন, জাপান সেন্টার ফর আ সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি (জ্যাকসেস), ফিলিপাইনভিত্তিক এনজিও ফোরাম অন এডিবি এবং জার্মানভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন উর্গেওয়ার্ল্ডের যৌথ আয়োজনে আলোচনায় দেশি-বিদেশি অর্ধশতাধিক উন্নয়কর্মী, পরিবেশবাদী আন্দোলন সংগঠক, অর্থনীতিবিদ ও সাংবাদিক অংশ নেন।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস ও ফিনান্সিয়্যাল অ্যানালিসিসের সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়, চাহিদা না থাকায় দেশে মোট স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মাত্র ৪৩ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে সরকারকে সর্বশেষ ১ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয়েছে। এরই মধ্যে নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের ৫৮ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস পড়ে থাকবে, কিন্তু সরকারকে আরও বেশি টাকা গুনতে হবে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধের জন্য।
অর্থনৈতিক আঘাত করোনা মহামারি করোনাভাইরাস জিডিপি প্রবৃদ্ধি বিদ্যুৎকেন্দ্র