Tuesday 03 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনার ধাক্কায় মজুরি হার ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন


৩ জুন ২০২০ ২৩:০৫ | আপডেট: ৩ জুন ২০২০ ২৩:৩৩
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা: বেসরকারি একটি কোম্পানিতে মার্কেটিংয়ে উচ্চ পদে কর্মরত ফরহাদ হোসেন (ছদ্ম নাম)। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে গত এপ্রিল মাসে মাঠে যেতে পারেননি। তারপরও বাসায় থেকেই ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে কিছু কাজ করেছেন। কিন্তু বেতন পেয়েছেন অর্ধেক। আর ঈদের বোনাস একেবারেই পাননি। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আবার মে মাস শেষ হলেও এখনো জানেন না, এ মাসে সেই অর্ধেক বেতনও পাবেন কি না। এক ধরনের অনিশ্চয়তা নিয়ে দিন পার করছেন তিনি।

এ তো গেল প্রাতিষ্ঠানিক খাতের একজন কর্মীর অবস্থা। যারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত, অর্থাৎ কাজ করলে মজুরি, না করলে নেই— তাদের অবস্থা আরও বেহাল। মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পরপরই সবার আগেই কাজ হারিয়েছেন এমন শ্রমিকরা। এবং দেশের সব শ্রমিকের প্রায় ৮৫ ভাগেই নিয়োজিত এই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। সব মিলিয়ে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কোটি শ্রমিক করোনার ধাক্কায় মজুরি হারিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবও বলছে তাই। তাদের হিসাবে, গত এপ্রিল ও মে মাসে মজুরি হার ব্যাপক পরিমণে কমেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় যেমন এর পরিমাণ কমেছে, তেমনি এপ্রিল মাসের তুলনায় মে মাসে মজুরি হার কমেছে আরও বেশি। কৃষি, শিল্প ও সেবা— সব খাতেই করোনার ধাক্কায় মজুরি হার কমেছে বলে জানিয়েছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। আর গত তিন বছরের মধ্যে এই হার সর্বনিম্ন।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, আর্থসামাজিক উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশের মজুরি হারও বাড়ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাস সব হিসাব বদলে দিয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক— সব ক্ষেত্রেই মজুরি হার কমেছে। করোনার শুরুতেই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রায় ১ কোটি শ্রমিক ঢাকা ছেড়েছিলেন, কাজ হারিয়েছেন অনেক শ্রমিক। অনেক শ্রমিক ৫০ বা ৬০ শতাংশ মজুরি পেয়েছেন। বিবিএসের প্রতিবেদনেও আসলে তারই প্রতিফলন ঘটেছে।

বিবিএসের মজুরি হার সূচক (ডব্লিউআরআই) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মে মাসে দেশে মজুরি হার কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ দশমিক ৮৯ শতাংশে, যা এপ্রিল মাসে ছিল ছয় দশমিক ১০ শতাংশ। অন্যদিকে, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে মজুরি হার ছিল ছয় দশমিক ৬১ শতাংশ। মে মাসে এর পরিমাণ আরও কিছুটা বেড়ে হয়েছিল ছয় দশমিক ৬৪ শতাংশ। ২০১৮ সালের এপ্রিল ও মে মাসেও মজুরি হার ছিল এ বছরের একই সময়ের তুলনায় বেশি। ওই বছরের এপ্রিল ও মে’তে এর পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ছয় দশমিক ৪২ শতাংশ ও ছয় দশমিক ৩৭ শতাংশ। হিসাবে দেখা যায়, এ বছরের মে মাসে মজুরি হার গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. তাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিমাসের ১২ থেকে ১৮ তারিখের মধ্যে মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য নিয়ে মজুরি হার সূচক ও শতকরা হারের প্রাতবেদন তৈরি করা হয়। করোনার কারণে গত মার্চ মাসের শেষ থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত প্রায় সবকিছুই বন্ধ ছিল। ফলে মানুষ যেমন কাজ হারিয়েছে, তেমনি মজুরি হারও কমে গেছে ব্যাপক হারে। বলা যায়, করোনাভাইরাসের ধাক্কাতেই এ অবস্থা হয়েছে। এটি প্রতিষ্ঠিানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক— সব খাতেই ঘটেছে।

কৃষি খাতের মজুরি হার

গত মে মাসে কৃষি খাতে মজুরি হার কমে দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ১৬ শতাংশে, যা এপ্রিল মাসে ছিল ছয় দশমিক ৩৩ শতাংশ। ২০১৯ সালের মে মাসে কৃষিতে মজুরি হার ছিল ছয় দশমিক ৭৩ শতাংশ, এপ্রিলে ছিল ছয় দশমিক ৬৫ শতাংশ। এরও আগে ২০১৮ সালের মে মাসে কৃষিতে মজুরি হার দাঁড়িয়েছিল ছয় দশমিক ২৬ শতাংশে, এপ্রিলে ছিল ছয় দশমিক ৩৭ শতাংশ।

শিল্প খাতের মজুরি হার

গেল মে মাসে শিল্প খাতে মজুরি হার দাঁড়িয়েছে পাঁচ দশমিক ২৯ শতাংশে, যা এপ্রিল মাসে ছিল পাঁচ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ২০১৯ সালের মে মাসে এই খাতের মজুরি হার ছিল ছয় দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং এপ্রিলে ছয় দশমিক ৩৩ শতাংশ হয়েছিল মজুরি হার। এরও আগে ২০১৮ সালের মে মাসে শিল্প খাতে মজুরি হার ছিল ছয় দশমিক ৪৪ শতাংশ, এপ্রিলে এর পরিমাণ ছিল ছয় দশমিক ৪৭ শতাংশ।

সেবা খাতের মজুরি হার

গত মে মাসে সেবা খাতে মজুরি হার দাঁড়িয়েছে পাঁচ দশমিক ৭৫ শতাংশে, যা এপ্রিল মাসে ছিল পাঁচ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ২০১৯ সালের মে মাসে এই খাতে মজুরি হার ছিল ছয় দশমিক ৮২ শতাংশ, এপ্রিলে ছিল ছয় দশমিক ৯৭ শতাংশ। এরও আগে ২০১৮ সালের মে মাসে সেবা খাতে মজুরি হার ছিল ছয় দশমিক ৭৯ শতাংশ, এপ্রিল মাসে ছয় দশমিক ৫৬ শতাংশ।

বেসরকারি ওই চাকরিজীবী মো. ফরহাদ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে রাজধানীর মিরপুরের শ্যাওড়াপাড়া এলাকায় থাকি। পানি, গ্যাস ও বিদ্যুৎসহ আনুষাঙ্গিক সব বিল মিলে বাসা ভাড়া দিতে হয় প্রায় ১৬ হাজার টাকা। ভেবেছিলাম করোনাকালে মানবিক কারণে বাড়ির মালিক বাসা ভাড়া কিছুটা কম নেবেন। কিন্তু বাড়ির মালিক কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাসা ভাড়া দিতে দেরি হলেও সমস্যা নেই, পরে দিয়েন। কিন্তু এবার যে অর্ধেক বেতন পেয়েছেন, পরে তো তাও পাবেন না। বাসা ভাড়া কিভাবে দেবেন?’

ফরহাদ হোসেন বলছেন, বেতনের টাকা কমলেও কোনো খরচই কমেনি, বরং বেড়েছে। এখন কোনোমতে দিন কাটছে। বেতন বন্ধ হলে তো বটেই, আরও কয়েকমাস এরকম অর্ধেক বেতন পেলেই ঢাকা শহরে টিকে থাকা নিয়ে শঙ্কায় পড়ে যাবেন।

করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো মজুরি হার মজুরি হারে ধাক্কা