ল্যাব নেই-পিসিআর মেশিন নেই, তবু মিলেছে করোনা পরীক্ষার অনুমোদন!
৪ জুন ২০২০ ০৮:০২
ঢাকা: চট্টগ্রামে শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিকে বেসরকারিভাবে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্তে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার অনুমোদন দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তবে এখন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার কোনো প্রস্তুতি নেই এই প্রতিষ্ঠানের। তারা এখনো স্থাপন করেনি বায়োসেফটি লেভেল-২ মানের ল্যাবরেটরি, নেই কোনো পিসিআর মেশিনও। কর্তৃপক্ষও নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না, কবে থেকে তারা নমুনা পরীক্ষা শুরু করতে পারবে।
দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বলে খ্যাত চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ল্যাবে প্রথম করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। পরে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ল্যাবেও নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। তবে এই তিনটি ল্যাবে পর্যাপ্ত পরিমাণে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। আর সে কারণেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও নমুনা পরীক্ষায় এগিয়ে আসতে উৎসাহিত করা হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ কাজে চট্টগ্রামের এমন একটি ল্যাবকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তার কোনো প্রস্তুতিই নেই। এই ল্যাবটি কিভাবে অনুমোদন পেল, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
অনুমোদন পেয়েছেন, করোনা নমুনা পরীক্ষা শুরু হবে হবে— জানতে চাইলে শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি জেনারেল ম্যানেজার পুলক পাড়িয়াল সারাবাংলাকে বলেন, ১৫ জুনের দিকে শুরু হতে পারে। ওই তারিখের দুই দিন আগেও হতে পারে, পরেও হতে পারে।
জানা যায়, শেভরন করোনা শনাক্তের নমুনা পরীক্ষার অনুমতি পেলেও এখনো তারা পিসিআর মেশিন আনেনি। পিসিআর মেশিন বসানোর জন্য বায়োসেফটি-২ লেভেলের যে ল্যাব প্রয়োজন হয়, সেই ল্যাবও তারা সেটআপ করতে পারেনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পুলক পাড়িয়াল বলেন, ‘না, ল্যাব সেটআপ হচ্ছে আর কী।’ পিসিআর মেশিন প্রসঙ্গে বলেন, ‘মেশিন আসবে। টাকা-পয়সা অ্যাডভান্স করা হয়েছে। চলে আসবে।’ বায়োসেফটি ক্যাবিনেট স্থাপন প্রসঙ্গে বলেন, ‘সব একসঙ্গে হবে। এগুলো সব প্রজেক্টের মধ্যে একসঙ্গে তো।’
পিসিআর মেশিনে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করতে হলে অবশ্যই বায়োসেফটি লেভেল-২ মানের ল্যাব থাকতে হয়। সেটা স্থাপন না করেই কিভাবে অনুমতি নিয়েছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা এস্টাব্লিস্ট করার প্রশ্ন কেন আসছে? আমি এস্টাব্লিস্ট করলাম, কিন্তু তারপর অনুমতি দিলো না! তাহলে কী হবে!’
করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়ার আগে ল্যাবের মান যাচাই করতে হয়। তবে পুলক পাড়িয়াল জানালেনম কেউ তাদের ল্যাব পরিদর্শন বা মান যাচাইয়ের জন্য আসেননি। তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার ও মেয়র সাহেবের একসঙ্গে মিটিং হলো। মিটিংয়ে আমরা বলেছি, আমরা মেশিনের জন্য অ্যাডভান্স করেছি। মেশিন এসে পৌঁছাতে যে কয়দিন সময় লাগে, সেই কয়দিন ওয়েট করতে হবে। রেডি করার পর একটা ডেট দেবো, আপনাদের সবাইকে দেখাব।’
নমুনা পরীক্ষা করার জন্য ভাইরোলজিস্ট আছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে পুলক পাড়িয়াল বলেন, হ্যাঁ, আছে আমাদের। আরও কিছু হায়ার করব। যেসব জায়গায় সরকারিভাবে করছে, সেখান থেকে হায়ার করব। এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। অন্যান্য ল্যাবের মতো না। যেহেতু বেসরকারিভাবে দেওয়া হয়েছে, তাই এভাবে হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কর্মকর্তা ডা. শেখ ফজলে রাব্বি সারাবাংলাকে বলেন, এখন একটা দুর্যোগের সময়। তারা আমাদের কাছে আবেদন করেছে। বলেছে, ল্যাবের কাজ চলেছে। তাই আমরা অনুমোদন দিয়েছি। নইলে কাজ করবে কিভাবে? ল্যাবের যদি কোনো টেকনিক্যাল বিষয় থাকে, তবে আমাদের এখানে বিআইটিআইডি আছে। তারা সে বিষয়ে দেখবে। আমাদের শেভরনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ১৬ তারিখের মধ্যে হালিশহরে নমুনা পরীক্ষা শুরু করবে।
ল্যাবরেটরির মান যাচাই না করেই অনুমোদন দেওয়া যায় কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, এটা আসলে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে। আমরা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালকেও অনুমোদন দিয়েছি।
এ বিষয়ে কোভিড-১৯ টেকনিক্যাল কমিটি ল্যাবরেটরি ইনভেস্টিগেশনের সভাপতির দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা সারাবাংলাকে বলেন, দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের কাছে যারাই ল্যাব স্থাপনের জন্য অনুমতি চাইছেন, তাদের অনুমোদন দিচ্ছি। এক্ষেত্রে অবশ্যই ল্যাবের মান নিশ্চিত করার বিষয়েও বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ল্যাব স্থাপন না থাকা অবস্থায় ও মেশিন না থাকা অবস্থায় তো আসলে কোনো ল্যাবের অনুমোদন দেওয়ার কথা না। কিন্তু তাও যেহতু আপনি বলছেন, আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
প্রসঙ্গত, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় করোনা পরীক্ষার ল্যাবরেটরির সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও দেওয়া হচ্ছে অনুমতি। গাজী গ্রুপ নারায়ণগঞ্জের কাঞ্চনে দেশে প্রথম বেসরকারি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করে। পরে তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের নমুনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়। পরে গত ১৯ মে ১৪টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়। এর মধ্যেই একটি শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি, যাদের ল্যাবরেটরিই এখনো স্থাপন করা হয়নি।