বায়োফ্লক পদ্ধতি: বাড়ির আঙিনা বা ছাদেই করা যাবে মাছ চাষ
৫ জুন ২০২০ ০৮:২৫
ঢাকা: মাছে-ভাতে বাঙালি হলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কমে যাচ্ছে পুকুর, খাল-বিল, নদী-নালা। হারিয়ে যাচ্ছে বহুল প্রচলিত প্রবাদটির সত্যতা। এছাড়া বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে মাছ চাষীরাও জনবল সংকটের সম্মুখীন। আর এই বৈশ্বিক মহামারির মধ্যেই কম খরচে অধিক মাছ চাষ উপযোগী বায়োফ্লক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ এম সাহাবউদ্দিন এবং তার সহকর্মী শাহরিয়ার হিমেল। এ জন্য প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে প্রথমবার বিশ্ববিদ্যালয়টিতেই স্থাপন করা হয়েছে বায়োফ্লক গবেষণাগার।
এ বিষয়ে ড. এ এম সাহাবউদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সনাতন পদ্ধতিতে যেখানে ১০টি মাছ চাষ করা যায়, বায়োফ্লকে সেখানে ৩০টি পর্যন্ত মাছ চাষ করা যায়। তবে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য ট্যাংক, অক্সিজেন সরবারহের পাম্প ও সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়।’
তিনি বলেন, ‘বায়োফ্লক ও অ্যাকোয়াফোনিক্সের সংমিশ্রণে বাড়ির আঙিনা বা ছাদে অল্প জায়গায় সবজি ও মাছ একসঙ্গেই চাষ করা সম্ভব। এ প্রযুক্তিতে পানিতে বিদ্যমান কার্বন ও নাইট্রোজেনের সাম্যবস্থা নিশ্চিত করে পানির গুনাগুণ বৃদ্ধি ও ক্ষতিকর জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে।’
ড. এ এম সাহাবউদ্দিন জানান, বায়োফ্লক প্রযুক্তিতে হেটারোট্রপিক ব্যাকটেরিয়ার বংশ বৃদ্ধিকে আরও বাড়িয়ে পানিতে উচ্চ কার্বন ও নাইট্রোজেন অনুপাত নিশ্চিত করা হয়ে থাকে; যা ক্ষতিকর অ্যামোনিয়াকে অনুজীব আমিষে রূপান্তর করে। এরপর প্রতি এক হাজার লিটারে এক কেজি হারে আয়োডিনমুক্ত সাধারণ লবণ প্রয়োগ করে টিডিএস ১২০০ এর উপরে হলে প্রতি এক হাজার লিটারে ১০ গ্রাম চুন প্রয়োগ করতে হয়। পিএইচ ৭.৫ এর কাছাকাছি হলে ভালো ব্যাকটেরিয়া নির্দিষ্ট অনুপাতে মেশাতে হয়। সঙ্গে কার্বন সোর্স হিসেবে থাকে ৫০-১০০ গ্রাম মোলাসেস। বিদ্যুৎ সংযোগে সবসময় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। দুই সপ্তাহ পর এতে ব্যাকটেরিয়া, প্রোটোজোয়া ও শৈবাল তৈরি হতে থাকে, যা মাছের বেড়ে ওঠায় সহযোগী হিসেবে কাজ করে।
এর ব্যবহার উপযোগিতা নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তিটি যদি মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তাহলে দেশে মাছের উৎপাদন অনেকাংশে বাড়ানো সম্ভব। যা সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সচেষ্ট ভূমিকা পালন করবে।’
উল্লেখ্য, সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার বিনামূল্যে শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বায়োফ্লক গবেষণাগারে এর উৎপাদন কৌশল ও ব্যবহার সম্পর্কে সেমিনার আয়োজন করা হয়ে থাকে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে সরাসরি সেমিনার বন্ধ রয়েছে। তবে ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা চালু আছে বলে জানান বায়োফ্লক পদ্ধতির উদ্ভাবক ড. এ এম সাহাবউদ্দিন।
ছাদে মাছ চাষ ড. এ এম সাহাবউদ্দিন বাড়িতে মাছ চাষ বায়োফ্লক শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়