লিবিয়ায় মানবপাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত করবে ডিবি
৫ জুন ২০২০ ১৭:০৯
ঢাকা: লিবিয়া ট্র্যাজেডিতে জড়িত মানবপাচারকারী চক্রের ১৬ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর পল্টন থানায় মানবপাচার এবং সন্ত্রাসবাদ দমন আইনে দায়ের করা মামলার তদন্ত করবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
শুক্রবার (৫ জুন) দুপুর ১২টায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) উপকমিশনার মশিউর রহমান সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বৃহস্পতিবার (৪ জুন) রাতে ১৬ জনের নামে পল্টন থানায় মামলা করেন লিবিয়ায় ভুক্তভোগী যুবক রাকিবের বাবা মান্নান মুন্সী। তার বাড়ি শরীয়তপুরে। গত সাত মাস আগে দুই দফায় মোট সাত লাখ টাকায় দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় গিয়ে আটকা পড়ে রাকিব।
পল্টন থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সেন্টু মিয়া মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার সকালে মামলাটির কাগজপত্র ডিবি উত্তরে হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলাটি ডিবি তদন্ত করবে।’
শুক্রবার (৫ জুন) দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর বিভাগ) উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে ১৬ জনের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় করা মানবপাচার ও সন্ত্রাসবাদ দমন আইনে মামলাটি ডিবি উত্তর তদন্ত করবে। বাদীর ছেলে রাকিবসহ অন্যান্যদের দালালচক্রের দস্যরা কীভাবে লিবিয়ায় নিয়েছে এবং মামলার আসামিরা ছাড়াও আর কারা এর সঙ্গে জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হবে।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মামলার বাদী মান্নান মুন্সী মুঠোফোনে সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ৭-৮ মাস আগে পরিচিত মোহসিন ও মনির তার ছোট ছেলে রাকিবকে লিবিয়ায় পাঠানোর কথা বলেন। তারা প্রলোভন দেখায়, রাকিব লিবিয়াতে গেলে অনেক টাকা বেতন পাবে। রাজি হয়ে প্রথম দফায় কিছু জমি-জমা বিক্রি করে সাড়ে তিন লাখ টাকা মোহসিনের হাতে দেন মান্নান মুন্সি। এরপর রাকিবকে লিবিয়ায় পাঠান তারা। কিন্তু সেখানে তাকে জিম্মি করে আবারও সাড়ে তিন লাখ টাকার জন্য নির্যাতন করা হয়।’
মান্নান মুন্সী বলেন, ‘আমি ক্ষেত-খামারে কাজ করি। ছেলেকে জিম্মি করে মারধর করা হচ্ছে জেনেও বাবা হয়ে কীভাবে সহ্য করি! পরে বাকি জমি-জমা বিক্রি করে মোহসিনের হাতে আরও সাড়ে তিন লাখ টাকা দেই। এ সময় মনির লিবিয়ায়। কিন্তু মারধর বন্ধ হয়নি। সাত লাখ টাকা দেওয়ার পরও ফোনে ছেলের কান্না শুনতে হইছে আমার।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি লিবিয়ায় সংগঠিত নৃশংস হত্যার ঘটনায় রাকিব বেঁচে গিয়ে ফোন করে জানায়, সে পালিয়েছে। এরপর থেকে আর তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। যে বা যারা রাকিবকে জিম্মি করে মারধর করেছে এবং যারা ছেলেকে লিবিয়ায় পাচার করেছে তাদের শাস্তি দিতে আইনের আশ্রয় নিয়েছি।’
একইদিন গত ২৮ মে লিবিয়ার মিজদাহ শহরে মানব পাচারের শিকার ২৬ বাংলাদেশী নির্মম নির্যাতনে হত্যা ও আরও ১১ জন আহতের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত (বিভাগ সিআইডি)।
পল্টন থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সেন্টু মিয়া বলেন, ‘লিবিয়া ট্র্যাজেডির পর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২ টা ৫ মিনিটে রাজধানীর পল্টন থানায় মানবপাচার এবং আঘাতে খুনের অভিযোগে হত্যা মামলা দায়ের করে সিআইডি।’
সিআইডি’র অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং ৪।
এ ছাড়া সিআইডি বাদী হয়ে বনানী থানাতেও আরেকটি মামলা করেছে।