করোনাকালে চুরির হিড়িক, সব হারিয়ে দিশেহারা মালিবাগের সুমন
৫ জুন ২০২০ ১৯:০৫
ঢাকা: করোনাকালে রাজধানীতে হঠাৎ করেই চুরির হিরিক শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এসব চুরির ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
এদিকে মালিবাগ চৌধুরী পাড়া মোবাইলের দোকানের তালা কেটে ২০ লাখ টাকার মালামাল চুরি হওয়ার পর মালিক আফতাব উদ্দিন সুমন দিশেহারা পড়েছেন। এ ঘটনায় রামপুরা থানায় একটি মামলা করেছেন তিনি।
রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ পারভেজ সারাবাংলাকে বলেন, বুধবার (৩ জুন) দিবাগত রাতের কোনো এক সময় মালিবাগ চৌধুরী পাড়া এলাকায় একটি মোবাইলের দোকানের তালা কেটে মালামাল চুরি হয়। ওই দোকানের মালিক সুমন গতকাল (৪ জুন) রাতে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। আজ (৫ জুন) সকালে মামলা রুজ্জু করা হয়েছে।
ওসি আরও বলেন, মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। দোকানের আশেপাশ থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের কাজ চলছে। এছাড়া আশেপাশের এটিএম বুথ ও নৈশ প্রহরীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত ৩ জুন রাতে দোকানের সিকিরিটি চারটি তালা কেটে ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্রান্ডের মোবাইল ফোনসহ প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল চুরি করে নিয়ে যায় চোর চক্র। যা ৪ জুন সকাল ৯ টার দিকে দোকান খুলতে গিয়ে দেখতে পান সবকটি তালা কাটা। দোকানের ভেতরে ঢুকে দেখেন মালামাল নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আফতাব উদ্দিন তালুকদার সুমন সারাবাংলাকে বলেন, ওইদিন বিকেলে দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যাই। আমার দোকানটি ঠিক মালিবাগ চৌধুরী পাড়া উত্তরা ব্যাংক এবং যমুনা ব্যাংকের মাঝখানে। মেইন রাস্তার সঙ্গে দোকান। আশেপাশে আরও ইসলামী ব্যাংক ও আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকও রয়েছে। সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা আর নৈশপ্রহরী থাকে। এরপরও দোকানের মালামাল চুরি হয়ে গেলো। পথে বসে গেছি।’
তিনি আবেগ তাড়িত হয়ে বলেন, ‘গত জানুয়ারিতে দোকানটা দিয়েছি। ব্যাংক থেকে লোন নিয়েছি। একমাস পরই লকডাউন শুরু হলে দোকান বন্ধ হয়। দুমাস পর দোকান খুলেছি মাত্র। এর মধ্যেই চুরি। যা ছিল সব নিয়ে গেছে। এখন কী করব বুঝতে পারছি না।
কাউকে সন্দেহ করছেন জানতে চাইলে সুমন বলেন, ‘মামলার পর আজ সকালে পুলিশ কিছু সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। সেখানে দেখলাম রাত সাড়ে নয়টা থেকে ১০টার মধ্যে বেশ কয়েকজন যুবক তালা কেটে চুরি সম্পাদন করে। তখনও রাস্তা ও ফুটপাত দিয়ে লোকজন চলাচল করছে। এ সময় কেউ বাইরে দাঁড়িয়ে গল্প করছে আর কেউ চুরির কাজটি করছে।’
লকডাউন চলাকালে খিলগাঁও তালতলা এলাকায় একইভাবে একটি মোবাইলের দোকানে তালা কেটে চুরি হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ এখনো কাউকে শনাক্ত বা গ্রেফতার করতে পারেনি।
করোনাকালে মাত্র কয়েকদিন আগে আরেকটি মোবাইলের দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে মালিবাগ চৌধুরী পাড়া আবুল হোটেলের সামনে। ওই ঘটনাতে মামলা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
জানা যায়, সুমনের ইফাজ ট্রেডার্স ইন্টারন্যাশনাল নামে মোবাইলের দোকানটি যেখানে অবস্থিত তার পাশের গলিতে বরিশাল স্টোর নামে একটি বড় দোকানে গত কয়েকদিন আগে দুধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ শনাক্ত হয়নি।
এলাকাবাসী ও চুরির ঘটনায় নিঃস্ব ব্যক্তিরা সন্দেহ করছেন, এলাকায় একটি যুবক গ্রুপ প্রত্যেকটি চুরির ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে। প্রত্যেকটি চুরি একই স্টাইলে করা হচ্ছে। অবিলম্বে এদের গ্রেফতার করতে না পারলে আরও অন্য কোনো দোকান টার্গেট করতে পারে।
এসব চুরি প্রতিরোধের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন জানতে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) কৃঞ্চপদ রায়ের সরকারি নম্বরে কল করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
এরপর ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার নতুন উপকমিশনার ওয়ালিদ হোসেনকে ফোন করা হলে তিনিও কল রিসিভ করেননি।
অন্যদিকে রংপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী আসাদুল হকের (৬০) বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে বাড়ির মালিক আসাদকে গলা কেটে হত্যা করেছে চোর। এ ঘটনায় রতন (২৬) নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (৫ জুন) বেলা দেড়টার দিকে ৩২ নং ওয়ার্ডের ধর্মদাস বারো আউলিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
তাজহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ রোকনুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় রতন নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড এবং ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।