এতিমখানা-মাদরাসাকে ব্যবহার করে মোংলায় জমি দখলের অভিযোগ
৫ জুন ২০২০ ২১:০১
মোংলা: একের পর এক জমি নিয়ে বিবাদ সৃষ্টি করে ফায়দা লোটার অভিযোগ উঠেছে জরিনা কুলসুম এতিমখানা ও মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. আকরামুজ্জামানের বিরুদ্ধে। হয়রানির শিকার ব্যক্তিরা জানান, আকরামুজ্জানের কারণে ক্ষুন্ন হচ্ছে সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীনি একটি প্রতিষ্ঠানের সুনাম। তার বিরুদ্ধে হয়েছে একাধিক মামলা হলেও দায়িত্বে বহাল আছেন তিনি। তাই প্রতিকার পেতে সর্বশেষ বাগেরহাট জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত ভাবে অভিযোগ করেছেন এক ভুক্তভোগী।
মোংলার সিগনাল টাওয়ার এলাকায় বসবাসকারী ভুক্তভোগী মো. হিরো মিয়া জানান, ১৯৭০ সালে ৯৭ শতাংশ জমি ক্রয় করে তিনি ভোগ দখলে আছেন এবং ওই জমির ওপরে ৪টি ঘর, ২টি পুকুরসহ ফলজ ও বনজ গাছপালা রয়েছে। হঠাৎ করে জরিনা কুলসুম এতিমখানা ও মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আকরামুজ্জামান তার সম্পত্তির মধ্যে ভিপি সম্পত্তির অস্তিত্ব খোঁজার চেষ্টা করে। কোন কিছু না বলে অবৈধভাবে জমিতে লাল নিশানা ও সাইনবোর্ড লাগিয়ে তাকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা চালায়।
এতিমখানা ও মাদরাসাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে মো. আকরামুজ্জামান ইতোমধ্যে স্কুলশিক্ষক শরিফুল ইসলাম, শিক্ষিকা নাছিমা বেগম, আয়া পারুল বেগম, দিনমজুর জব্বার ফরাজি, বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মচারী শাহাজাহান মাঝি, ওয়াচম্যান শাজাহান, গৃহিণী রহিমা বেগম, কম্পিউটার ব্যবসায়ী রব্বানীসহ বহু লোকের জমি নিয়ে হয়রানি করছেন। ভুক্তভোগীরা তার হাত থেকে রক্ষা পেতে একাধিক মামলাও দায়ের করেছেন।
চালনা বন্দর মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমিসহ ৫ জন শিক্ষক ২০১৩ সালে বৈধ ভাবে জমি কিনে মাটি ভরাট করি। কিন্তু ঘর তুলতে করতে গেলে মাদরাসা সুপার মো. আকরামুজ্জামান তার বাহিনী নিয়ে বাধা দেন। তিনি আমাদের একের পর এক মিথ্যা হয়রানি করে যাচ্ছেন।’
দিনমজুর জব্বার ফরাজি বলেন, ‘আমি অনেক কষ্ট করে সাড়ে ১৩ শতাংশ জমি কিনে বালু দিয়ে ভরাট করেছি। কিন্তু বসত ঘর করতে গেলে সুপার মো. আকরামুজ্জামান বাধা দেন। আমি প্রায় ৪ বছর জমি দখল নিতে পারিনি। পরে আকরামুজ্জামানকে বিবাদী করে আদালতে মামলা দায়ের করি (মামলা নং-৫২/১৯)।’
ভুক্তভোগী গৃহিণী রহিমা বেগম বলেন, ‘মো. আকরামুজ্জামান বহুমুখি মাদরাসায় শিক্ষাগতা করার সময় বলৎকারের অভিযোগে চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন। পরে জবাবারিয়া শিশু সদন ও এতিমখানায় কর্মরত অবস্থায় একই অভিযোগে সিগনাল টাওয়ার জামে মজিদের ইমামতি থেকে তাকে বরখাস্ত করে তৎকালিন কমিটি।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জরিনা কুলসুম এতিমখানার সুপার মো. আকরামুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমার নিজের কোনো জমি ওখানে নেই। আমি মাদরাসার পক্ষে লড়ছি এবং চেষ্টা করছি মাদরাসার জমি দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করার।’
সহকারী কমিশনার (ভুমি) নয়ন কুমার রাজবংশি জানান, সিগনাল টাওয়ার জরিনা কুলসুম এতিমখানার নামে কিছু অংশ ভিপি জমি লিজ আছে। উপজেলার সার্ভেয়ার ভিপি জমি এবং মো. হিরো মিয়ার কেনা ৯৭ শতাংশ জমি লম্বালম্বিমেপে দিয়েছে। উভয়পক্ষ যাতে মিলেমিশে ভোগদখল করতে পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোংলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রাহাত মান্নান বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রয়োজন হলে উভয় পক্ষকে নিয়ে সমস্যার সমাধান করবো, এছাড়া বিরোধপূর্ণ জমির বিষয়ে খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আ. খালেক উভয় পক্ষের কাজগপত্র দেখে মীমাংসা করে নেওয়ার জন্য আমাকে বলেছেন। কোন পক্ষ যেন হয়রানি বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জমি জমি দখল জমি দখলের অভিযোগ জরিনা কুলসুম এতিমখানা ও মাদরাসা