রেড জোন, ইয়েলো ও গ্রিন জোন ‘হবে’ যেসব এলাকা
৭ জুন ২০২০ ১৫:১২
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড ১৯) বিস্তার ঠেকাতে নতুন করে এলাকাভিত্তিক লকডাউন বাস্তবায়নের চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য পাঁচ-ছয়টি প্রস্তাবনা নির্ধারণ করে এগুচ্ছে। প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে এলাকাভিত্তিক লকডাউনের বিষয়টিও। এ ক্ষেত্রে করোনা নমুনা পরীক্ষা, শনাক্তের হার, সংক্রমণের মাত্রার মতো বেশকিছু বিষয় বিচেনায় নিয়ে ১৪ দিন পর বিভিন্ন এলাকাকে রেড জোন, ইয়েলো জোন ও গ্রিন জোনে ভাগ করার সম্ভাব্যতা নিয়ে চলছে আলোচনা।
সূত্র জানিয়েছে, কোনো পৌরসভা এলাকায় ১৪ দিনের ল্যাব টেস্টে প্রতি ১ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে যদি ০ থেকে ২ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় তাহলে সেটি হবে গ্রিন জোন। প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে যদি ৩ থেকে ২৯ জন রোগী পাওয়া যায় তাহলে সেটি হবে ইয়েলো জোন। আর ৩০ জনের বেশি রোগী শনাক্ত হলে তা হবে রেড জোন।
এদিকে, জেলা ও উপজেলার ক্ষেত্রে এক লাখ টেস্টের বিপরীতে ০ থেকে ২ জন পাওয়া গেলে সেই এলাকা হবে গ্রিন জোন। ৩ থেকে ৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হলে হবে ইয়েলো জোন। এছাড়া ১০ জনের বেশি রোগী পাওয়া গেলে তা হবে রেড জোন।
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাওয়া সবশেষ দুই সপ্তাহের করোনা পরিস্থিতির তথ্য বিশ্লেষণ করেই প্রথমবারের কালার জোন নির্ধারণ করা হবে। সে ক্ষেত্রে গত ১৪ দিনের তথ্য বলছে, রাজধানীর পল্টন, শাহজাহানপুর, কলাবাগান, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর, মতিঝিল, গুলশান, তেজগাঁও, রমনা ও হাজারীবাগ এলাকাগুলোতে সংক্রমণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। এই এলাকাগুলো রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে শুরুতেই।
প্রস্তাবনা অনুযায়ী, রাজধানী ঢাকা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনসহ জেলাগুলোর বিভিন্ন এলাকা পাইলট হিসেবে ‘কালার জোন’ বাস্তবায়ন করার কথা ভাবা হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম শহরকেও রেড জোন হিসেবে ঘোষণা করা হতে পারে।
সূত্র জানিয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়ে এলে তা বাস্তবায়নে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ অধিদফতরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রস্তাবনাগুলো এখনো অনুমোদন পায়নি। চূড়ান্ত অনুমোদন আসার আগে বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে লকডাউন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। এগুলো বিভ্রান্তিকর।
যা আছে প্রস্তাবনায়
স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে— রেড, ইয়েলো বা গ্রিন জোন চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে শুরুতেই যে বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হতে পারে, তা হলো সংক্রমণের মাত্রা। অর্থাৎ নির্দিষ্ট ওই এলাকায় দৈনিক বা সাপ্তাহিক হিসাবে সংক্রমণ কতটুকু বাড়ছে, সেটি বিবেচনা করা হবে।
দ্বিতীয়ত যে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে তা হলো, সংক্রমণের মাত্রা দ্বিগুণ হওয়ার সময়। এক্ষেত্রে ১৪ দিনে যদি কোনো এলাকায় সংক্রমণের মাত্রা দ্বিগুণ হয় তবে সেটা বিবেচনা করা হবে। সেক্ষেত্রে নতুন সিদ্ধান্ত আসবে।
তৃতীয়ত পরিসংখ্যানগতভাবে একটি বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে। সেটি হলো সংক্রমণের মাত্রার গ্রাফ। এক্ষেত্রে একটি এলাকায় যদি আগে সংক্রমণ বেশি থাকে কিন্তু পরবর্তীতে নিয়ন্ত্রণ হয়ে আসে তবে সেই এলাকাকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। পরবর্তীকালে সেই এলাকায় সংক্রমণের মাত্রা কীভাবে ও কখন থেকে বাড়ছে সেই কার্ভ বিবেচনা করা হতে পারে। এক্ষেত্রে সেই এলাকায় সংক্রমণের মাত্রা যদি একটা সরলরেখায় থাকে তবে একরকম হবে। কিন্তু যদি সরলরেখা থেকে উর্ধ্বমুখী হতে থাকে তবে তা পর্যবেক্ষণে নেওয়া হতে পারে।
চতুর্থত যে বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে তা হলো নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের সংখ্যা। এরপরেই বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা। এক্ষেত্রে এক লক্ষ মানুষের মধ্যে কি পরিমান নমুনা পরীক্ষা করা হবে সেটা বিবেচনা করা হতে পারে। এক্ষেত্রে একটা প্রমাণ সংখ্যা নির্ধারণ করে সেটা বিবেচনা করা হতে পারে।
পঞ্চমত, যারা নমুনা পরীক্ষা করতে আসছে প্রযুক্তির মাধ্যমে জিপিআরএস কোডিং এর মাধ্যমে তাদের অবস্থান নির্ণয় করা। এক্ষেত্রে টেলিকম কোম্পানির সাহায্যে তাদের টাওয়ারের মাধ্যমে নমুনা পরীক্ষা যারা করতে আসছে তাদের অবস্থান ট্রেসিং করা হতে পারে।
ষষ্ঠত, একই সঙ্গে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর দিকে আলাদাভাবে নজর রাখার প্রস্তাবনাও থাকছে।
বাংলাদেশে বর্তমান কোভিড-১৯ পরিস্থিতি
গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত হয়ে ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর দেশে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা এটিই। এ নিয়ে দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মোট ৮৮৮ জনের মৃত্যু হলো।
এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে দুই হাজার ৭৪৩ জনের শরীরে। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন মোট ৬৫ হাজার ৭৬৯ জন।
একই সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৫৭৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে মোট ১৩ হাজার ৯০৩ জন সুস্থ হলেন।