মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ডিজিটাল প্রতারণা, হাতিয়ে নিয়েছে কোটি টাকা
৭ জুন ২০২০ ১৮:৩৭
ঢাকা: বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানির এজেন্ট ও ম্যানেজারের মোবাইল নম্বর ক্লোনিং করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার নামে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিত একটি চক্র। অবশেষে অভিযান পরিচালনা করে এই চক্রের ১৩ সদস্যকে আটক করেছে র্যাব।
রোববার (৭ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান র্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাসেম।
করোনাকালেও চক্রটি বিভিন্ন কোম্পানির গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শনিবার দিবাগত রাতে রাজধানী ও ফরিদপুরের ভাঙায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। র্যাব-২ ও র্যাব-৮ যৌথভাবে এই অভিযান পরিচালনা করে। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার ১৪ লাখ টাকা, মোবাইলসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছে।’
পাঁচটি দলে বিভক্ত হয়ে তারা এই অপরাধ চালাচ্ছিল বেলে জানিয়েছে র্যাব। এরমধ্যে রয়েছে হান্টার টিম, স্পুফিং বা নম্বর ক্লোনিং টিম, ফেক কাস্টমার কেয়ার, টাকা উত্তোলন ও ওয়াটম্যান টিম।
সারওয়ার বিন কাসেম বলেন, ‘শুধু কম শিক্ষিতরাই না, অনেক উচ্চ শিক্ষিত মানুষকেও তারা বোকা বানিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। একটি ব্যাংকের পক্ষ থেকে মামলার পর ঘটনার তদন্তে নামে র্যাব।‘
তিনি আরও বলেন, ‘অনলাইন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হচ্ছে অনেকে। বিশেষ করে করোনাকালে ঘরবন্দি মানুষ বেশি প্রতারিত হচ্ছে। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় এ ধরনের উপদ্রব বেড়েছে। প্রতারকরা ব্যাংকের ঊর্ধবতনদের নম্বর ক্লোন করে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করছিল। একজন মাস্টারমাইন্ড পুরো টিমটি নিয়ন্ত্রণ করতো বলেও প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।’
তিনি বলেন, ‘হান্টার টিম প্রথমে গ্রাহকের মোবাইল নম্বর, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডের তথ্য জোগাড় করে। এরপর দ্বিতীয় ধাপে বিকাশ বা নগদ বা যেকোন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের হেল্পলাইন নম্বর ক্লোনিং করে। এমনকি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতনদের নম্বরও ক্লোন করে তারা। এজন্য নম্বর প্রতি ১ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। পরে কাস্টমার কেয়ার খুলে (১০ জনের টিম) বসে গ্রাহকদের ফোন দেয়। এরআগে গ্রাহকের মোবাইলে পিন বা কোড নম্বর পাঠিয়ে বলা হয় দ্রুত কোড দেন, না হলে আপনার মোবাইল অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে। যে কোডটি পাঠাবে সেই ‘ফাঁদে’ পড়ে। প্রতারকরা ব্যাংক ম্যানেজার বা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নম্বর ক্লোন করে ফোন দেয় বলে অনেক গ্রাহক তাদের ফাঁদে পড়ে যান।’
গ্রাহকের টাকা পাওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে সেই টাকা উত্তোলন করে ফেলা হয়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এসব টাকা তোলে। যেমন- ঢাকার টাকা সিলেটে বা চট্টগ্রামে পাঠায়। আবার অনেক সময় টাকা তোলা না গেলে- টিভি, ফ্রিজ, এসি বা জামা কাপড় কিনে ফেলা হয়।
এত সতকর্তার পরও এগুলো বন্ধ হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ছোট ছোট দোকান- যেমন পানের দোকান, সাইকেলের দোকান থেকে তাদের গ্রাহকের তথ্য সংগ্রহ করে তারা। সেই সঙ্গে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নজর রাখে। যাতে তাদের তথ্য ফাঁস না হয়। এছাড়া তারা ফরিদপুরের বিভিন্ন নদীর পাড়ে ছোট ছোট ঘর তৈরি করে রাত জেগে এসব কাজ করে। আবার লটারির ফাঁদে ফেলে অনেক সময় সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে থাকে।’
গ্রেপ্তার ১৩ জন এর আগে কখনো ধরা পড়েনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা এর আগে গ্রেফতার হয়নি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে ২ মাসে ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের সঙ্গে ব্যাংকের কেউ জড়িত আছে কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।‘
এছাড়া ফরিদপুরের ভাঙা এলাকায় আরও কয়েকটি গ্রুপ এই ধরনের কাজ করছে। তাদের ধরতে র্যাব কাজ করছে বলেও ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।