৬ দফাকে মানুষ বাঁচার অধিকার হিসেবে নিয়েছিল: প্রধানমন্ত্রী
৭ জুন ২০২০ ২৩:৫৫
ঢাকা: ছয় দফা দাবিকে মানুষ নিজেদের বাঁচার অধিকার হিসেবে নিয়েছিল বলেই এই দাবি দ্রুত সারাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ছয় দফা প্রথমে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে গ্রহণ করা হয়। এরপর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে এর ব্যাপক প্রচার হয়। ওই সময় এই ছয় দফা দাবি জনগণ লুফে নিয়েছিল। আমি জানি না, পৃথিবীর কোনো দেশে এত দ্রুত কোনো দাবি এত বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে কি না। কিন্তু ছয় দফা সেই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কারণ মানুষ এটাকে তাদের বাাঁচার অধিকার হিসেবে নিয়েছিল।
রোববার (৭ জুন) ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সভায় তিনি সভাপতিত্ব করেন।
আরও পড়ুন- আমরা এখান থেকেও মুক্তি পাব, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে: প্রধানমন্ত্রী
সভাপতির বক্তব্যে ছয় দফার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় দেখা গেল, ওই সময় আমরা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ অরক্ষিত। এই যুদ্ধের এক গোলটেবিল বৈঠক ডাকা হয় লাহোরে। সেই বৈঠকে জাতির পিতা আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করেন। সেখানে তিনি ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। এই দাবিতে বলা হয়, এই প্রদেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে হবে, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে বাঙালির অস্তিত্বের দাবিটা তুলে ধরা হলো।
তিনি বলেন, এই দাবি ওই সভায় তুলে ধরা হলে বাংলাদেশেরও দুয়েকজন নেতা বাধা দেন। অনেকেই বাধা দেয়। বেশকিছু ধাপ পেরিয়ে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে ছয় দফা দাবি গ্রহণ করা হয়। এরপর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রচারের মাধ্যমে এই ছয় দফা দাবিকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। মানুষও দেখেছে, পাকিস্তান আলাদা হওয়ার পর থেকেই তারা অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাই তারা ছয় দফা দাবিতে নিজেদের বাঁচার অধিকার হিসেবে দেখেছিল। তাই এই দাবি এত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ছয় দফার পথ ধরেই স্বাধীনতার আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠলে সেই আন্দোলন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বারবার কারবরণ করতে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই আন্দোলন সংগ্রামের পথ ধরেই বাংলাদেশের মানুষ এগিয়ে যাচ্ছিল। তখন যখনই যিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাচ্ছিলেন, তাকেই গ্রেফতার করা হচ্ছিল। এভাবে অত্যাচার-নির্যাতন চলেছে। কিন্তু একই সঙ্গে ওই সময় মানুষও সব বিষয় নিয়ে আরও বেশি সচেতন হয়ে উঠছিল, সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ হয় উঠছিল। অবশ্য কিছু দালাল ছাড়া। সবসময় কিছু দালাল থাকে। এটাই সমস্যা।
দেশভাগের পর পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সব দিক থেকেই বঞ্চিত হয়েছে। এ বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সব উন্নতি হচ্ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। অথচ আমরা ছিলাম অবহেলিত, বঞ্চিত। এই বঞ্চনার কথা জাতির জনক বারবার তুলে ধরেছেন। দেখা যেত, যে চালের দাম পশ্চিম পাকিস্তানে ১৮ টাকা মণ, সেই চালই আমাদের এখানে ৫০ টাকা। এমনকি সোনার দাম সেখানে ৯০ টাকা ভরি, অথচ বাংলাদেশ তথা পূর্ব পাকিস্তানে ১৩০ টাকা! এমনই ছিল বৈষম্য। অথচ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে আমাদের সম্পদই ছিল প্রধান। কিন্তু রফতানি আয় ব্যয় করা হতো ওই পশ্চিম পাকিস্তানে।
কেবল অর্থনৈতিক দিক থেকে নয়, সব দিক থেকেই বাংলাদেশকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শিক্ষা-সংস্কৃতিতে আমরা অগ্রগামী হলেও সবসময় বঞ্চনার শিকার হয়েছি। চাকরিতে নিয়োগে পর্যন্ত বৈষম্য করা হয়েছে। সেই বঞ্চনার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংগ্রাম করেছেন।
আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু ও ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবসের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরিবেশন করা হয় মুজিববর্ষের থিম সং। এরপর মূল আলোচনায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন কৃষি মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
আলোচনা সভা ছয় দফা ছয় দফা দাবি ছয় দফার প্রেক্ষাপট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা