লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যা ও মানব পাচার: গ্রেফতার ৬
৮ জুন ২০২০ ১৭:৫৬
ঢাকা: লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশি হত্যা ও মানব পাচারের ঘটনায় ছয় জনকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় তাদের হেফাজত থেকে চারটি পাসপোর্ট, দুইটি মোবাইল ফোন ও টাকার হিসাবের দুইটি নোটবুক উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (৮ জুন) দুপুরে ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন এসব তথ্য জানান। গ্রেফতার ছয় জন হলেন— বাদশা মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, আকবর আলী, সুজন, নাজমুল হাসান ও লিয়াকত শেখ ওরফে লিপু।
অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, মানব পাচারের ঘটনায় ভিকটিমদেরকে ভারত, দুবাই, মিশর হয়ে লিবিয়াতে পাচার করার পরিকল্পনা, সে অনুযায়ী প্রক্রিয়া করা এবং ক্ষেত্রবিশেষে শাহজালাল বিমানবন্দরকে ব্যবহার করার কারণে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের দায়ের করা বিভিন্ন মামলার ছায়া তদন্ত করা হয়। এরপর গতকাল সোমবার (৭ জুন) গোয়েন্দা বিভাগের একাধিক টিম রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে।
গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গত ২৮ মে লিবিয়ার মিজদাহ উপশহরের মরুভূমিতে ২৬ জন বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মারাত্মক আহত হন আরও ১১ জন। এর আগেও লিবিয়া ও ইতালিকে অভিবাসী হতে যাওয়া শত শত বাংলাদেশি বিভিন্ন সময়ে নির্যাতনে হতাহত ও চিরতরে নিখোঁজ হয়েছেন। এসব ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের আত্মীয়-স্বজনদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মাদারীপুর জেলা, কিশোরগঞ্জ জেলা এবং ডিএমপি’র পল্টন ও তেজগাঁও থানায় আলাদা আলাদা মামলা হয়।
তিনি বলেন, লিবিয়ার বিভিন্ন এস্টেটে কাজ ও লিবিয়া থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশি দালালরা অন-অ্যারাইভাল ও ভিজিট ভিসার মাধ্যমে লোকজনকে লিবিয়ায় পাচার করে। এরপর সেখানে বিভিন্ন ক্যাম্পে আটক রেখে অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। এরপর ভিকটিমদের কান্নাকাটি ও আকুতি-মিনতির অডিও দেশে অবস্থানরত স্বজনদের পাঠানো হয়, অনেক সময় সরাসরি কথা বলানো হয়। এরপর তাদের কাছ থেকে টাকা দাবি করে। ভিকটিমদের বাঁচাতে স্বজনরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভিটাবাড়িও বিক্রি করে টাকা পাঠাতে বাধ্য হন।
গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার আকবর হোসেন লিবিয়াতে তার ভাই আমির হোসেনের কাছে মাদারীপুরের নিহত সাত জনকে পাচার করেছিলেন। গ্রেফতার বাদশা মিয়া ১৩ বছর ধরে লিবিয়াতে অবস্থান করেছেন। লিবিয়ার বেনগাজী ও জোয়ারা শহরে তার নিজস্ব ক্যাম্প আছে। বাংলাদেশ থেকে তিনি নিয়মিত লিবিয়াতে মানব পাচার করেন, পাচার করা বাংলাদেশীদের তার ক্যাম্পে আটক রেখে ইতালিতে সমুদ্রপথে মানুষ পাঠানোর গ্যামব্লিং করেন। মাদারীপুরের নিহতদের মধ্যে চার জনকে তার ক্যাম্পে আটক রেখে ত্রিপোলিতে পাচার করার এক পর্যায়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।
আবদুল বাতেন বলেন, গ্রেফতার জাহাঙ্গির আলম ঢাকাতে অবস্থান করে নিজস্ব কায়দায় বেনগাজিতে মানব পাচার ছাড়াও স্থানীয় অন্যান্য দালালদের কাছ থেকে পাওয়া পাসপোর্ট স্ক্যান করে সফট কপি দুবাই ও লিবিয়াতে পাঠান। এর মাধ্যমে টুরিস্ট ভিসা, অন-অ্যারাইভাল ভিা সংগ্রহ করেন। গ্রেফতার সুজন ভিকটিম ইছার উদ্দিন, বিজয় ও মো. সজলকে লিবিয়ায় পাঠান। ২৮ মে লিবিয়ায় ট্র্যাজিডিতে ভিকটিম মো. সজল আহত হয়ে লিবিয়ায় এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। মো. বিজয় ও ইছার উদ্দিনের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, লিবিয়ায় নৃশংস ঘটনার শিকার ১৪ বাংলাদেশি গ্রেফতার আকবর আলী, বাদশাহ মিয়া ও সুজনের মাধ্যমে দেশটিতে গেছেন। সাত জনকে আকবর, চার জনকে বাদশাহ মিয়া ও বাকি তিন জনকে পাঠিয়েছে সুজন। গ্রেফতার তিন জনই বিষয়টি স্বীকার করেছেন।