Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পূর্ব রাজাবাজারে কড়া নিয়ন্ত্রণ চায় প্রশাসন, শঙ্কায় বাসিন্দারা


৯ জুন ২০২০ ২১:৪১

ঢাকা: সাধারণ ছুটি, স্থানীয় প্রশাসনের কর্তৃত্বে লকডাউন— কোনো কিছুতেই নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। বরং দিন দিন এই ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছেই। এ পরিস্থিতিতে এবার সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক লকডাউনের পথে হাঁটছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার (৯ জুন) দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে পরবর্তী ১৪ দিনের জন্য রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকাটিকে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় ‘রেড জোন’ পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় লকডাউনের পূর্ণ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে স্থানীয় কাউন্সিলর ও পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা বেড়েছে। এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হিসেবে ত্রাণ পাওয়ার উপযোগী বাসিন্দাদের তালিকা করা হয়েছে। এলাকায় যাতায়াতের সব গেট বন্ধ রেখে মাত্র একটি গেট খোলা রেখে নাগরিকদের সেবা অব্যাহত রাখতে দক্ষ স্বেচ্ছাসেবী কর্মী বাহিনীও প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে কিভাবে এই লকডাউন কার্যকর হবে, লকডাউনের মধ্যে নিজেদের প্রয়োজনীয় কাঁচাবাজার বা অন্য পণ্যগুলো কিভাবে পাওয়া যাবে— এসব বিষয় নিয়ে শঙ্কা কাটেনি বাসিন্দাদের। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হচ্ছে, বাসিন্দাদের সব ধরনের প্রয়োজনকে মাথায় রেখেই তারা প্রস্তুতি নিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর (ডিএনসিসি ২৭ নম্বর ওয়ার্ড) ফরিদুর রহমান খান ইরান সারাবাংলাকে বলেন, এতদিন আমরা বাসিন্দাদের বারবার বুঝাতে চেয়েছি, অপ্রয়োজনে বাইরে বের হবেন না। কিন্তু অনেকেই তাতে কর্ণপাত করেননি। কিন্তু এবারের লকডাউনে কেবল স্বাস্থ্যকর্মী ও সেচ্ছাসেবী ছাড়া কাউকে এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হবে না, এলাকা থেকে বেরও হতে দেওয়া হবে না। কঠোরভাবে লকডাউন নিশ্চিত করা হবে।

ইরান আরও বলেন, আমরা এরই মধ্যে প্রায় ৩ হাজার বাসিন্দাকে ১০ দিনের খাবার দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছি। তাদের মধ্যে ১২শ থেকে দেড় হাজার নিম্নবিত্ত এবং আরও দেড় হাজার মধ্যবিত্ত। এসব বাসিন্দা করোনার প্রকোপে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, কিন্তু লজ্জায় কারও কাছে সহায়তা চাইতে পারেননি। এরকম যারা সহায়তা চাইতে পারবেন না, তাদেরও খাদ্য সহায়তা দেবো আমরা। এজন্য আমরা দু’টি নম্বর এলাকার মানুষের কাছে কাছে দিয়ে দিয়েছি। গত মার্চ মাস থেকেই ওই দু’টি নম্বর চালু রয়েছে। আর সামর্থ্যবানরা যেন বাসার নিচেই নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী কিনতে পারেন, সেজন্য বিশেষ ভ্যান সার্ভিস থাকবে। কল পেলেই সেখানে চলে যাবে। আর আমাদের দক্ষ স্বেচ্ছাসেবকরা যেকোনো সমস্যায় বাসিন্দাদের জন্য ২৪ ঘণ্টা নিয়োজিত থাকবে।

আরও পড়ুন- পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন মঙ্গলবার রাত ১২টায়

একই কথা বললেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, লকডাউন নিশ্চিত করতে কোনো ধরনের শিথিলতা বরদাশত করব না। আমাদের পুলিশ সদস্যদের সে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ওই এলাকার আটটি প্রবেশপথের সাতটিই বন্ধ রাখা হবে। মাত্র একটি খোলা রাখা হবে। স্থানীয় অন্যান্য দায়িত্বশীল প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করেই লকডাউন কার্যকর করতে পুলিশ প্রস্তুত।

লকডাউনের এমন সিদ্ধান্তকে পূর্ব রাজাবাজার এলাকার বাসিন্দারা স্বাগত জানালেও কেউ কেউ শঙ্কাও জানিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, এলাকায় যাতায়াতের সুযোগ না থাকায় যারা এলাকার বাইরে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন, তাদের চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখে দিতে পারে। আবার ঘরবন্দি হয়ে কোনো কাজ না করতে পারলে বাসা বা দোকান ভাড়া দিতে চরম হিমশিম খাওয়ার শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন কেউ কেউ।

মধ্যরাত থেকে কার্যকর হচ্ছে লকডাউন, পূর্ব রাজাবাজার মসজিদের সামনে থেকে তোলা ছবি

পূর্ব রাজাবাজারের কুতুববাগ এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন,  লকডাউন তো আমাদের জীবনের নিরাপত্তার জন্যই দেওয়া হচ্ছে। এতে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি হয়তো। কিন্তু আমার অফিস বনানী। সেখানে একটা বায়িং হাউজে কাজ করি। এতদিন রিকশায় কিংবা পায়ে হেঁটে আবার বাসে চড়ে অফিসে গিয়েছি। এখন তো শুনলাম এলাকা থেকে বের হওয়াই নিষেধ। এ অবস্থায় চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছি। অফিস কি এসব শুনবে? এতদিন অফিসে না গেলে চাকরি থাকবে? এসবের নিশ্চয়তা কে দেবে? কারণ শুধু আমার এলাকা লকডাউন, কিন্তু আমার অফিসের এলাকা তো লকডাউন না।

একই কথা বললেন বউবাজার গলির স্টেশনারি পণ্যের দোকানদার মামুন রহমান। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, এবারের লকডাউনে দোকানও বন্ধ রাখতে হবে। আগে তো আধা বেলা হলেও খোলা রেখে দু’চার পয়সা যা বিক্রি করেছি, তা দিয়ে চলেছি। এখন তো তাও বন্ধ। পরিবার কিভাবে চালাব? দোকান ভাড়া দেবো, নাকি বাসা ভাড়া দেবো? এসবের খরচ কিভাবে মেটাব, জানি না। প্রশাসন আমাদের কথাও একটু চিন্তা করুক, এটাই চাই।

এদিকে, মোস্তফা রোড এলাকার বাসিন্দা কাজী রফিক সারাবাংলাকে বলেন, বলা হয়েছে, যে এলাকায় করোনায় আক্রান্ত রোগী বেশি, সে এলাকা লকডাউন হবে। কিন্তু আমাদের এলাকায় তেমন রোগীই নেই। রোগী তো বেশি পশ্চিম রাজাবাজার এলাকায়। সেখানে না দিয়ে কেন আমাদের এখানে এখানে লকডাউন দেওয়া হচ্ছে, বুঝতে পারছি না।

আরও পড়ুন- মধ্যরাত থেকে পূর্ব রাজাবাজার লকডাউন, জোরদার হচ্ছে সেনা টহল

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, পূর্ব রাজাবাজারে ঘোষিত লকডাউন মূলত পরীক্ষামূলকভাবে হচ্ছে। এটা থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নেব, অন্যান্য এলাকায় এমন লকডাউন বাস্তবায়ন করব কি না। যেহেতু এটি প্রথম করা হচ্ছে, অনেক সমস্যাই বেরিয়ে আসবে। সেগুলো আমরা সমাধানের চেষ্টা করব, সেগুলো থেকে সিদ্ধান্ত নেব, পরবর্তী সময়ে কিভাবে লকডাউন বাস্তবায়ন করব। আর প্রশাসন ও পুলিশ ছাড়াও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও মাঠে থাকবেন, আমাদের সহায়তা করবেন।

মেয়র বলেন, বাসিন্দাদের মনে রাখতে হবে— এ লকডাউন একান্তই তাদের স্বার্থে। তাদের সুরক্ষা ছাড়া এতে সরকারের আর কোনো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নেই। সুতরাং একটু কষ্ট হলেও তারা যদি নিজেদের স্বার্থে এটাকে বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেন, তাহলে তারা এবং এভাবে সবাই সুরক্ষা পাবেন। এটা শুধু পূর্ব রাজাবাজারের বাসিন্দা নয়, পুরো দেশের মানুষকেই এই উদ্যোগের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে। আমরা আশাবাদী, সবাই আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সহযোগিতা করবে।

এক প্রশ্নের জবাবে আতিকুল ইসলাম বলেন, এত এলাকা থাকতে পূর্ব রাজাবাজার এলাকাটি বেছে নেওয়া হয়েছে দু’টি কারণে— স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী এই এলাকার জনসংখ্যার তুলনায় কোভিড রোগী বেশি; এবং এলাকাটিতে চতুর্মুখী যাতায়াত বন্ধ করার সুযোগ ছিল। ফলে পরীক্ষামূলকভাবে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য এটি আদর্শ একটি এলাকা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

যেভাবে কার্যকর হবে লকডাউন

এর আগে, সোমবার (৮ জুন) দুপুরে ডিএনসিসির এক সভায় রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকা লকডাউন রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় লকডাউন বাস্তবায়নের জন্য বেশকিছু পরিকল্পনা করা হয়। এগুলো হলো—

  • পূর্ব রাজাবাজারের নাজনিন স্কুল অ্যান্ড কলেজে কোভিড-১৯ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের জন্য বুথ স্থাপন করা হবে। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বুথটি। এর পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক।
  • পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় যাতায়াতের জন্য একটিমাত্র প্রবেশ পথ (গ্রিন রোডে আইবিএ হোস্টেলের পাশে) খোলা থাকবে।
  • লকডাউন চলাকালে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। জনগণের চলাচল অত্যন্ত সীমিত রাখা হবে।
  • লকডাউন চলাকালে পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় বসবাসরত লোকজন বাইরে যেতে পারবেন না এবং বাইরের লোকজন ভেতরে প্রবেশ করতে পারবেন না।
  • নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী অনলাইনের মাধ্যমে কেনা যাবে, যা বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে। এটুআই ও ই-ক্যাব যৌথভাবে এটি পরিচালনা করবে। হোম ডেলিভারির জন্য এরই মধ্যে একদল প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী তৈরি করা হয়েছে।
  • যাদের অনলাইন সুবিধা নেই, নগদ অর্থে খাদ্যসামগ্রী কিনতে চান, তাদের জন্য শাক-সবজি, মাছ-মাংসের ভ্যান ও পণ্যসামগ্রী সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত করে ভেতরে সরবরাহ করা হবে।
  • ডিএনসিসির ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান ইরান পূর্ব রাজাবাজার এলাকার কর্মহীন, অসহায় ও দুঃস্থ মানুষের একটি তালিকা প্রণয়ন করছেন। তালিকা অনুযায়ী তাদের ডিএনসিসি থেকে ত্রাণসামগ্রী সরবরাহ করা হবে।
  • এই এলাকার অসুস্থ রোগীদের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে টেলিমেডিসিন সেব চালু করা হবে।
  • পূর্ব রাজাবাজার এলাকার সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে লকডাউনের বিষয়ে মাইকিং করা হচ্ছে।
  • লকডাউন যথাযথভাবে কার্যকর করতে পুলিশের টহল থাকবে, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হবে।
  • গুরুতর রোগীদের জন্য অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারবে। এছাড়া জরুরি সেবা যেমন— বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদি সরবরাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীরা লকডাউন এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন।
  • ডিএনসিসির বিশেষ পরিচ্ছন্নতা টিম কাজ করবে। তবে ব্যবহৃত সুরক্ষা সামগ্রী বা মেডিকেল বর্জ্য যেমন— মাস্ক, গ্লাভস ইত্যাদি আলাদাভাবে প্যাকেট করে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাছে দিতে হবে। মেডিকেল বর্জ্য কোনোভাবেই অন্যান্য বর্জ্যের সঙ্গে মেশানো যাবে না।

টপ নিউজ পূর্ব রাজাবাজার রেড জোন লকডাউন লকডাউন কার্যকর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভূতের গলির বাসায় মিলল বৃদ্ধের মরদেহ
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:০০

সম্পর্কিত খবর