বরাদ্দ বাড়ছে বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে, সঞ্চালন-বিতরণে খরচ বেশি
১০ জুন ২০২০ ০৮:৫৪
ঢাকা: আসছে বাজেটে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেয়ে সঞ্চালন ও বিতরণে বেশি বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে। এর পরিমাণ এই খাতের মোট বরাদ্দের ৭০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এর মধ্যে ৪২ শতাংশ বিতরণে ও ২৮ শতাংশ বরাদ্দ সঞ্চালনে রাখার প্রস্তাব করা হচ্ছে। নীতি নির্ধারকরা বলছেন, বাজেট বরাদ্দ দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় না বলেই সঞ্চালন ও বিতরণে বরাদ্দ বেশি রাখা হয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আসছে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৩০ হাজার ৭৩৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হচ্ছে জাতীয় বাজেটে। বৃহস্পতিবার (১১ জুন) জাতীয় সংসদে এই বাজেট উপস্থাপন করা হবে। এই বরাদ্দের পরিমাণ আগের অর্থবছরের তুলনায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের এই খাতে বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার ৫১ কোটি টাকা। এরও আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ৫০২ কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ৩০ হাজার ৭৩৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রস্তাবের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে ২৭ হাজার ৫৯৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এই টাকা বিদ্যুৎ খাতের ৯৩ প্রকল্পের জন্য প্রস্তাব করা হবে। আর জ্বালানি খাতের জন্য প্রস্তাব করা হচ্ছে ৩ হাজার ১৩৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এখানেও ২৪ প্রকল্পের জন্য অর্থ চাওয়া হচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ বিতরণে
জানা গেছে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) মোট বরাদ্দের মধ্যে বিদ্যুৎ বিতরণে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১১ হাজার ১৩৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এর মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) জন্য— ৫ হাজার ৭০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
বিতরণ খাতে অন্য বরাদ্দের মধ্যে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পারির (ডিপিডিসি) জন্য দুই হাজার দুইশ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, পিডিবি’র জন্য ১ হাজার ৭০৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জন্য ৭৩০ কোটি টাকা, নর্দান ইলেকট্রিসিটি পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পারির জন্য ৪৫০ কোটি টাকা এবং ঢাকা পাওয়ার সাপ্লাই কোম্পানি ডেসকোর জন্য ৩৪৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হচ্ছে।
সঞ্চালনে বরাদ্দ প্রস্তাব সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা
বিদ্যুৎ সঞ্চালনের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব করা হচ্ছে ৭ হাজার ৫৪৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এখানে পুরো টাকাই পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) জন্য প্রস্তাব করা হচ্ছে। বিতরণ ও সঞ্চালন মিলিয়ে বাজেট বরাদ্দে মোট প্রস্তাব ১৮ হাজার ৬৮১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের প্রায় ৭০ দশমিক ৬৩ ভাগ। অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ৭ হাজার ৭৬৫ কোটি ১১ লাখ টাকা।
উৎপাদনে বরাদ্দ ৮ হাজার ৯শ কোটি টাকা
আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য মোট বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে আট হাজার ৯১৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৪ হাজার ৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের জন্য। এই বরাদ্দ ব্যয় হবে মাতারবাড়ি ১২শ মেগাওয়াট, জাপানের সুমিতোমোর সঙ্গে ১২শ মেগাওয়াট, বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর সাতশ মেগাওয়াটসহ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য।
এদিকে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) জন্য থাকছে ২ হাজার ১৯৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট, বিবিয়ানা চারশ মেগাওয়াট, ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র মেরামত এবং সৈয়দপুর ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে এ টাকা খরচ হবে। এছাড়া আশুগঞ্জ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের জন্য ৫২০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব থাকছে। এই বরাদ্দ থেকে খরচ হবে পটুয়াখালীর পায়রা তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে।
আর নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশনের জন্য প্রস্তাবিত ৩৯৩ কোটি টাকা খুলনার রূপসায় আটশ মেগাওয়াট এবং পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংযোগ সড়ক নির্মাণে খরচ করা হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর বাইরে ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানির জন্য সাড়ে তিনশ কোটি, রুরাল পাওয়ার কোম্পানির জন্য দেড়শ কোটি এবং বিআর পাওয়ারজেন কোম্পানির জন্য ১২৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হবে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সারাবাংলাকে বলেন, সরকার তো বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে না। বেশিরভাগ কেন্দ্রই বেসরকারিভাবে পরিচালিত হয়। বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়াতে প্রচুর সংখ্যক দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ খাতে বিনিয়োগ করছে। কিন্তু ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিশন প্রক্রিয়া সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হয়।