একটি মানুষও যেন কষ্ট না পায়, সে চেষ্টা করে যাচ্ছি: প্রধানমন্ত্রী
১০ জুন ২০২০ ২০:৩৯
ঢাকা: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ দেশকে ‘কঠিন পরিস্থিতি’র মুখোমুখি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এই ‘কঠিন পরিস্থিতি’তেও একটি মানুষও যেন কষ্ট না পায়, সরকার সে চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
সংসদ নেতা বলেন, করোনাভাইরাস আমাদের কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখী করেছে। করোনার কারণে দেশের অনেক কিছু স্থবির হয়ে যায়। যারা দিনে এনে দিন খায়, তাদের অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়ে। তাদের প্রত্যেককে খুঁজে খুঁজে বের করে সাহায্য পৌঁছে দিয়েছি, অর্থ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। দেশের একটি মানুষও যেন কষ্ট না পায়, খাদ্যের অভাবে না থাকে— সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। অন্যান্য দেশ না পারলেও এই করোনাকালের মধ্যে সরকার বাজেট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বুধবার (১০ জুন) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই আলোচনায় আরো অংশ নেন সাবেক কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা ও সাবেক প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ।
শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মৃত্যুবরণকারী সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া চলতি সংসদের ও সাবেক সংসদ সদস্যসহ বিশিষ্টজন যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে দেশের চরম দুঃসময়ে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা একে একে মৃত্যুবরণ করছেন। মনে হচ্ছে ইতিহাসের পাতা থেকে একটা একটা করে পাতা ঝরে পড়ছে।
চলতি সংসদের প্রয়াত সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা’র মৃত্যু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে ফিরে আসার পর যাদেরকে সবসময় পাশে পেয়েছি, প্রয়াত সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা তাদের একজন। অত্যন্ত সাহসী ও ত্যাগী নেতা ছিলেন। প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে প্রথম কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। একে একে অনেককেই আমরা হারিয়ে ফেলছি। কিন্তু বর্তমানে এমন এক পরিস্থিতি, তাতে মৃত্যুর পর অনেক পরিচিতদের দেখতে পর্যন্ত যেতে পারছি না। মকবুল হোসেন অসুস্থ থেকেও এলাকার মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে সহায়তা দিয়েছেন। আমি মানা করা পরও শোনেননি। উল্টো বলেছেন, মানুষের কাছে না গেলে তার ভালো লাগে না।
প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ বেগম প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি যখন অনার্সে পড়ি, তখন মাস্টার্সের ছাত্রী ছিলেন মমতাজ বেগম। একসঙ্গে অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম, মিছিল করেছি। ওয়ান ইলেভেনে আমি বিরোধী দলের নেতা হলেও আমাকে গ্রেফতার করা হয়। আমার বিরুদ্ধে বিএনপি ছাড়াও ওয়ান ইলেভেনের সময় অনেক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। আমাকে যখন আদালতে আনা-নেওয়া করা হয়, তখন মমতাজ বেগমকে দেখেছি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে, সবসময় উনি আমার পাশে ছিলেন।
প্রয়াত সংসদ সদস্য কামরুন নাহার পুতুল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যারা প্রতিবাদ করেছেন তাদেরকে অনেককেই জিয়াউর রহমান হত্যা করেছে। সাবেক এমপি পুতুলের স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান পটলকে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
নিজের প্রিয় শিক্ষক ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী বা যা-ই হই না কেন, আনিসুজ্জামান স্যারকে আমি সবসময় নিজের শিক্ষক হিসেবেই সম্মান করতাম। তার বয়স হয়েছিল। তার চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থাও করেছিলাম। এই দুঃসময়ে অনেক বিশিষ্টজনকে আমরা হারিয়েছি। কাকে রেখে কার কথা বলব! প্রকৌশল জামিলুর রেজা চৌধুরী পদ্মাসেতু নির্মাণে যথেষ্ট অবদান রেখেছেন। সবসময় খোঁজ-খবর রাখতেন। তার অবদান সবাই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
আলোচনার শেষ পর্যায়ে বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ও সাহারা খাতুনের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতীয় সংসদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রস্তাব সংসদ অধিবেশন