শেখ হাসিনার কারামুক্তি, যা ছিল গৌরবময় এক অধ্যায়
১১ জুন ২০২০ ০০:০৩
ঢাকা: আজ ১১ জুন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস। ১২ বছর আগে এই দিনে দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস কারাভোগের পর তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন। সেনা সমর্থিত ১/১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগার থেকে জামিন পেয়ে ২০০৮ সালের আজকের এই দিনে তিনি কারামুক্ত হন।
দুর্দিনের সেই সময়ে অনেকেই দূরে সরে গেলেও শতাধিক আইনজীবী সাহসিকতার সঙ্গে করেছেন আইনিযুদ্ধ। আইনজীবীরা দেখা করেছেন নেত্রীর সঙ্গে, সাহস যুগিয়েছেন তারা। কারামুক্তির সেই দিনটিকে গৌররময় অধ্যায় হিসেবে মনে করছেন তার আইনজীরা। দিনটি বিচার বিভাগের ইতিহাসে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলেও উল্লেখ করেছেন সিনিয়র আইনজীবীরা।
১১ জুনের সেই দিনটির কথা স্মরণ করে ওই শেখ হাসিনা মুক্তি আইনজীবী প্যানেলের সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘নেত্রীর কারামুক্তির জন্য আমরা আইনজীবীরা একটা সংগঠিত, চৌকস টিম গঠন করেছিলাম। এই টিমের নেতৃত্বে ছিলেন জিল্লুর রহমান। ওনার নেতৃত্বে আমরা সে দিন শতাধিক আইনজীবী নেত্রীর মামলা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। তখন আমরা নেত্রীকে জামিনের চেষ্টা করি এবং মামলা নিষ্পত্তির চেষ্টা করি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সেদিন ঐক্যবদ্ধভাবে, সুসংগঠিতভাবে নেত্রীর কারামুক্তির জন্য যে লড়তে পেরেছিলাম বলেই নেত্রীর কারামুক্তি তরান্বিত হয়েছে। অবশেষে নেত্রীর কারামুক্তি হয়। সেই দিনটি আমিসহ আমাদের সকলের জন্য একটা গৌরবময় অধ্যায়।’
সিনিয়র এই আইনজীবী বলেন, ‘বিচারপ্রার্থী মানুষের জন্য তথা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যার জন্য আমাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছিলাম এটি ভাবতেও ভালো লাগে।’ এটি আইন অঙ্গনে তথা বিচার বিভাগে ইতিহাস হয়ে থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সে সময়ে অনেক বাধা বিপত্তির মধ্য দিয়ে আমাদেরকে আইনি মোকাবিলা করতে হয়েছে। পরোক্ষভাবে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকিও ছিল।
সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ‘সে দিনই আমরা বলেছিলাম, নেত্রীর বিরুদ্ধে মামলাগুলো ছিল উদ্দেশ্যমূলক, নির্যাতনমূলক, তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য ওই সব মামলা হয়েছিল। মামলাগুরোর ভিত্তি ছিল না বলেই হাইকোর্টে বাতিল হয়েছে।’
শেখ হাসিনা কারামুক্তি আইনজীবী প্যানেলের আরেক আইনজীবী বর্তমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু দিনটিকে স্মরণ করে আপ্লুত হয়ে বলেন, ‘সেই দিন সার্বিক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যদিয়ে তখন আমরা কোর্টে গিয়ে জামিন শুনানি করেছি। অনেক বাধা বিপত্তি ছিল, তারপরও আমরা যথার্থভাবে ভূমিকা নিই। একপর্যায়ে তিনি জামিনে মুক্ত হন। সেদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জামিন করানোর বিষয়টি আজকে ভাবতে গেলে গর্ববোধ করি।’
সকলের যথার্থ ভুমিকা এবং অবদান ছিল বিধায় তাকে কারামুক্তি করতে পেরেছিলাম উল্লেখ করে এ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, ‘তাকে (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আটকে রাখার চেষ্টা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তারা সফল হয়নি। ওই সময়ে অনেক আইনজীবীই আমাদের সঙ্গে ছিলেন, অনেকে পেছন থেকে বেকআপ দিয়েছেন তাদের সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।’
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘দিনটি তো আমাদের আইনজীবীদের জন্য অবশ্যই স্মরণীয়। সেই সময়ে তত্ত্ববধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল। তারা তাকে (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) আটকে রাখে। সব ধরনের প্রতিকূলতাকে পেছনে ঠেলে আমরা সেই দিন এগিয়ে গিয়েছিলাম।’
‘তার পক্ষে যাতে না লড়তে পারি সে জন্য পরোক্ষভাবে অনেকেই চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তাতে কোন ফল হয়নি। তারই অংশ হিসেবে ২০০৮ সালে আমি যখন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি পদে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেই। তখন আর্মি গর্ভমেন্ট চেষ্টা করেছিলে অন্যকে জিতিয়ে আনার জন্য। ওই সময়ে তাদের একটা ধারণা ছিল আমি জিতে যাব। এই কারনে তারা তখন আমাকে পরোক্ষভাবে চেষ্টা করেছিল নির্বাচন থেকে বিরত রাখার। এক পর্যায় তারা আমাকে গুলশানে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। তারা বলল বারের নির্বাচন হবে না। সে সময়ে যিনি আইন উপদেষ্টা ছিলেন তাকে বিষয়টি বলা হলো। পরবর্তীতে সময় পিছিয়ে নির্বাচন হলো এবং তাতে জয়ও হলো। এরপর আমাদের আইনি লড়াইয়ের গতিও বৃদ্ধি পেল।’ যেটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার করামুক্তিতে পরোক্ষভাবে প্রভাব পড়েছে বলেও মনে করেন সাবেক এই আইনমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ভোরে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে শেখ হাসিনা গ্রেফতার হন। গ্রেফতার করে প্রথমে তাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়। বেশ কয়েকটি মামলায় কারাগারের অভ্যন্তরে তিনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন।
অসুস্থ বিবেচনায় এবং জরুরি অবস্থার মধ্যেই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন ও প্রতিবাদের মুখে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে আট সপ্তাহের জামিনে মুক্তি দেওয়া হয় তাকে।
মুক্তি পেয়েই চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায়ই তার অস্থায়ী জামিনের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। ২০০৮ সালের ৬ নভেম্বর দেশে ফিরলে স্থায়ী জামিন দেওয়া হয় তাকে। পরে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগসহ মহাজোট সরকার গঠিত হয়।