Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনাতেও জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮.২ শতাংশ


১১ জুন ২০২০ ১৬:৫৫

ঢাকা: করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) আগামী অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। বৃহস্পতিবার (১১ জুন) জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের সময় এ লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, চলতি বছর আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর বছর। আমরা আত্মপ্রত্যয়ী ছিলাম, এ বছর আমরা আমাদের অর্থনীতিতে দেশের সেরা প্রবৃদ্ধি জাতিকে উপহার দেবো। এ ক্ষেত্রে আমাদের ইপ্সিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। আমরা শুরুও করেছিলাম সুন্দর আশাদীপ্তভাবে অসাধারণ গতিতে।

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রী বলেন, অর্থবছরের প্রথম আট মাস পর্যন্ত যখন আমরা করোনায় বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হইনি, তখন আমরা অর্থনীতিতে শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বছরের প্রথম ৮ মাসে আমাদের প্রবৃদ্ধির হিসাব কষেছিল ৭ দশমিক ৮ ভাগ। কিন্তু করোনার প্রভাব সারাবিশ্বের অর্থনীতিতে ওলট-পালট করে দিয়েছে।

নতুন অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নির্ধারণের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে মুস্তফা কামাল বলেন, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা ছিল এশিয়ার সব দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মূল চালিকাশক্তি ছিল শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ চাহিদা। কিন্তু কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী দীর্ঘসময় ধরে চলা লকডাউনের কারণে রফতানি কমে যাওয়ায় ও প্রবাসী আয়ে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জিত না হওয়ায় চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সংশোধন করে ৫ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মন্ত্রী বলেন, কোভিড পরবর্তী উত্তরণের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দর্ঘিমেয়াদি পরিকল্পনার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সময়ে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হবে বলে আশা করছি।

এদিকে, করোনাকালেও বাজেটে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এই লক্ষ্যকে অবাস্তব বলে মনে করছেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন।

সংসদে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতা উত্থাপনের পর জাহিদ হোসেন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সারাবাংলাকে বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য বাস্তবসম্মত নয়। কেননা এ ধরনের প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য যেরকম অর্থনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন, সেটি করা হয়নি। তাছাড়া করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী অনেক দেশে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হতে পারে। সেখানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি যদি ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ শতাংশও অর্জন হয়, সেটি হবে অনেক বেশি। সে অনুযায়ী আগামী অর্থবছরের বাজেটের লক্ষ্য প্রক্ষেপণ করা উচিত ছিল। বাস্তবতা বাদ দিয়ে কোনো কিছু করলে তো হবে না।

তবে এই প্রবৃদ্ধিকেও স্বাভাবিক মনে করছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, প্রবৃদ্ধির সংখ্যা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। করোনার কারণে এবার স্বাস্থ্য, জীবন রক্ষা ও অর্থনীতির গতি ধরে রাখাটাই বড় কথা। আর বাজেটে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যটি একটি স্বাভাবিক বিষয়।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের (২০১৯-২০) বাজেটেও ৮ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু করোনাভাইরাস আঘাত হানায় এই লক্ষ্য থেকে সরে আসে সরকার। গত মে মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা মিডিয়াম টার্ম ম্যাক্রোইকনোমিক ফ্রেমওয়ার্কে চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কমিয়ে ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

এর আগে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সারাবাংলাকে বলেছিলেন, চলতি অর্থবছর বাজেটে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও লক্ষ্য ধরা হলেও সেটি অর্জন সম্ভব হবে না। করোনার কারণে চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি অবশ্যই কমবে। কিন্তু সেটি কত কমবে, তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ৮.২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাজেট ২০২০-২১

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর