করোনা মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দের প্রস্তাব
১১ জুন ২০২০ ১৯:০৭
ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতির কারণেই এবারের বাজেটে গুরুত্ব পাচ্ছে স্বাস্থ্যখাত। দেশের ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে মোট ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। যা জিডিপির ১.৩ শতাংশ এবং মোট বাজেট বরাদ্দের ৭.২ শতাংশ। এর মধ্যে করোনা মোকাবিলায় থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাব করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য মোট ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। কোভিড-১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় গৃহীত কার্যক্রম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণখাতের জন্য এ বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সংক্রান্ত কার্যক্রম ১৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বাস্তবায়ন করছে। আগামী অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে মোট ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং মোট বাজেট বরাদ্দের ৭ দশমিক ২ শতাংশ।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে আমরা ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের আওতায় বর্তমানে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ মহামারি মোকাবিলায় যা করণীয় তার সবকিছুই করবে সরকার। আগামী অর্থবছরে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় যে কোনও জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।’
কোভিড-১৯ প্রতিরোধের প্রস্তুতি উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এর জন্য আমরা জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য খাতে ৫২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করেছি। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সেবা প্রদানকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত সুরক্ষার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রদান, প্রণোদনা এবং ক্ষতিপূরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি আমরা। করোনা মোকাবিলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ দায়িত্ব পালনকালে ভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুজনিত কারণে বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সম্মানী বাবদ মোট ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’
বাজেট প্রস্তাবনায় অর্থমন্ত্রী জানান, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলার লক্ষ্যে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ২ হাজার ডাক্তার, ১ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আউটসোর্সিং-এর মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে ৩৮৬ জন মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, ২ হাজার ৬৫৪ জন ল্যাব অ্যাটেন্ডেন্টসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজস্ব খাতে ১ হাজার ২০০ মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট, ১ হাজার ৬৫০ মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান এবং ১৫০ কার্ডিওগ্রাফারসহ মোট ৩ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
এ ছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে আরও বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে জনজীবনকে সুরক্ষার লক্ষ্যে ন্যাশনাল প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স প্ল্যান প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন শুরু করা হয়েছে। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে বিশেষায়িত আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীতে ১৪টিসহ প্রতিটি জেলা শহরে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল স্থাপন ও চালু করা হয়েছে। করোনা রোগ নির্ণয়ের জন্য এ পর্যন্ত ৫৫টি ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানসমূহকে আধুনিকীকরণ ও উন্নততর সেবা প্রদান প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা হচ্ছে।