Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাজেট গতানুগতিক, সারবস্তু খুঁজে পাওয়া দুষ্কর: ড. মঈন খান


১১ জুন ২০২০ ২০:০৪

ঢাকা: জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটকে গতানুগতিক ও অন্তঃসারশূন্য বাজেট হিসেবে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ড. মঈন খান।

বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বাজেট বক্তৃতার পর সারাবাংলাকে মোবাইল ফোনে দেওয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি মন্তব্য করেন।

ড. মঈন খান বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যে আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, সরকার একটা বিশেষ বাজেট ঘোষণা করবে। কিন্তু আজ জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট পেশ করা হয়েছে, সেটি গতানুগতিক। এর মধ্যে বিশেষ কিছু নেই। বাজেটের সারবস্তু খুঁজে পাওয়া দুষ্কর! বাজেটে ভালো ভালো কথা বলা হয়েছে। এটি কথামালার ফুলঝুড়ি।’

বাজেটের আকার প্রসঙ্গে সাবেক এই পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। গতবারের চেয়েও আকারটা বড় করা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যার খুব একটা যৌক্তিকতা নেই। এই বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে।’

বাজেট ঘাটতির বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাজেটে যে ঘাটতি ধরা হয়েছে, সেটির আকার অস্বাভাবিক। জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ। এই ঘাটতি কোথায় থেকে পূরণ করা হবে?— তার সুনির্দিষ্ট কোনো দিক নির্দেশনা নেই। গতবার যে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা অর্জন হয়নি। এবারে লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়ানো হয়েছে। ফলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন অসম্ভব হয়ে পড়বে।’

উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ প্রসঙ্গে ড. মঈন খান বলেন, ‘উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। অথচ করোনা সংকট মোকাবিলায় মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এই উন্নয়ন খাত থেকে ১ লাখ কোটি টাকা করোনা সংকট মোকাবিলায় দেওয়া যেত। কারণ, উন্নয়ন খাতে শুধু লুটপাট হয়। একটা বালিশের দাম ধরা হয় সাত হাজার টাকা, একটা পর্দা ৮৫ হাজার টাকা, ৫ শ’ টাকার গগলস কেনা হয় ৫ হাজার টাকায়। অর্থাৎ উন্নয়ন মানেই লুটপাট। সুতরাং ওই খাতে বরাদ্দ কমিয়ে ১ লাখ কোটি টাকা করোনা ক্ষতিগ্রস্থদের দেওয়া যেত। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটাই বেশি প্রয়োজন।’

‘এই করোনা মহামারিতে আমাদের দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। এখন এই সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ। এদের কথা মাথায় রেখে বাজেট প্রণয়ন করা দরকার ছিল। এই মুহূর্তে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমিয়ে দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তার দিকে বেশি নজর দেওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সরকার সেদিকটাতে গুরুত্ব না দিয়ে উন্নয়ন খাতে বেশি বরাদ্দ রেখেছে। যেখানে বেশি মাত্রায় দুর্নীতি করার সুযোগ রয়েছে’— বলেন সাবকে এই পরিকল্পনামন্ত্রী।

স্বর্ণ আমদানিতে ভ্যাট প্রত্যাহারের সমালোচনা করে ড. মঈন খান বলেন, ‘স্বর্ণ ব্যবহার করেন কারা? সাধারণত ধনিক। সেখানে ভ্যাট প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হয়েছে। তার মানে, স্বর্ণের দাম কমবে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য যে মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট, সেগুলোর দাম বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, এ বাজেটে কাদের সুবিধার কথা চিন্তা করা হয়েছে।’

কৃষিতে আরও ভর্তুকি দেওয়ার প্রয়োজন ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, `প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়কে ১৫ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কৃষিখাতে ভর্তুকি ধরা হয়েছে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আমরা মনে করি এই বরাদ্দ এবং ভর্তুকি প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কারণ আমাদের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে কৃষি। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে ফুড সিকিউরিটি অত্যন্ত জরুরি। অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে কৃষিকে বাঁচাতে হবে। কেবল সেবাখাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে সংকট মোকাবিলা করা যাবে না।’

‘করোনা বিশ্বমহামারির কারণে সারাপৃথিবীতে অর্থনীতির ধস নেমেছে। পশ্চিমা অর্থনীতির অবস্থা নাজুক। সেখানে কেবল মাত্র গার্মেন্টস খাত দিয়ে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার চিন্তা খুব একটা ঝুঁকিমুক্ত হবে না। যাদের কাছে গার্মেন্টস পণ্য বিক্রির চিন্তা করছি, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক হলে, ওই পণ্য বিক্রি কঠিন হয়ে যাবে। তাই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে একটামাত্র খাতের ওপর ভরসা করলে চলবে না। আমাদের অর্থনীতিকে ডাইভার্সিফাইড করতে হবে। কিন্তু সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা প্রস্তাবিত বাজেটে নেই’— বলেন ড. মঈন খান।

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট টপ নিউজ ড. মঈন খান বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর