বাজেটে ঘাটতি ও অর্থায়ন বড় চ্যালেঞ্জ: ডিসিসিআই
১১ জুন ২০২০ ২০:২০
ঢাকা: প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব ঘাটতি ও অর্থায়ন একটি চ্যালেঞ্জ। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে করোনা সংক্রমণ রোধ করা বাঞ্ছনীয়। যদিও এটি একটি ব্যয়বহুল বাজেট, এর মাধ্যমে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, ব্যবসায়ীদের আর্থিক প্রণোদনা, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যয় বৃদ্ধি ও জনগণকে করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি থেকে রক্ষায় যথেষ্ট বরাদ্দ থাকার কারণে এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক বাজেট হয়েছে বলে মনে করি। তবে এত বড় বাজেট বাস্তবায়ন অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হবে, তাই রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ করছি। বৃহস্পতিবার (১১ জুন) বাজেট পরবর্তী এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এমন মন্তব্য করেছে।
সংগঠনটির পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অর্থনীতি যখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত, ঠিক এই কঠিন সময়ে আজকের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নিয়ে ঘোষিত জাতীয় বাজেট ২০২০-২১ এ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮.২ শতাংশ ও মুদ্রাস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৫.৪ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই সময়ে এরূপ প্রোগ্রেসিভ ও উচ্চ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ঘোষিত বাজেট আশাব্যাঞ্জক। কিন্তু এ ধরনের প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে অর্থনীতির সকল ক্ষেত্রে উত্তরণ ঘটতে হবে যা অনেকাংশে কঠিন। তবে বাজেটে বিনিয়োগ বাড়ানো ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানায় ডিসিসিআই।
ডিসিসিআই বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা যা বিগত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১৩.২৪ শতাংশ বেশি। মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা যা বিগত বছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৯.৮২ শতাংশ বেশি। তাই এই অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণের জন্য করের আওতায় বাড়ানো, অনাদায়ী কর আদায় ও মফস্বল শহরে রাজস্ব আদায় বাড়াতে রাজস্ব বোর্ডের মাঠপর্যায়ে জনবল বাড়ানো প্রয়োজন। বেসরকারি বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত রাখতে বিদ্যমান করদাতাদের উপর নতুন করে কর বোঝা আরোপ না করে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। এ ছাড়া, রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি পেলেও বিগত অর্থবছরের তুলনায় করবর্হিভূত রাজস্বের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে ৫.৭২ শতাংশ। নতুন বাজেটে ঘাটতির (অনুদানসহ) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা যা মোট জিডিপির ৬ শতাংশ। প্রতিবছর ঘাটতি বাজেট ৫ শতাংশ ধরা হলে এর কমই বাস্তবায়ন হয়। তাই অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় এই ঘাটতি সহনশীল ও জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যয় হতে পারে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ঘাটতি বাজেট পূরণে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকার ঋণ নিবে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা যা বিগত অর্থবছরে সংশোধিত ঘাটতি বাজেটের ঋণের তুলনায় ৩.১০ শতাংশ বেশি।
ডিসিসিআই বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১১ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। অথচ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং বিদ্যুৎ বিভাগে। কিন্তু বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিবেচনায় স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ আরও বৃদ্ধি করা উচিত।
ঢাকা চেম্বারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সরকার এ অর্থবছরে ব্যক্তিশ্রেণির আয়করের ন্যূনতম সীমা ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকার এবারের বাজেটে আমাদের প্রস্তাব অনুযায়ী সর্বনিম্ন করহার ৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে, যা সত্যি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো এবং সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করার কারণে করদাতাদের উপর করবোঝা কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে আশা করি- বলছে ডিসিসিআাই।
কর্পোরেট কর হার কমানোকে প্রশংসনীয় বলছে ডিসিসিআাই। সংগঠনটি তাদের বিজ্ঞপ্তিতে বলছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুজ্জীবিত করতে সরকার এ অর্থবছরে কর্পোরেট ট্যাক্স হার হ্রাস করেছে যা প্রশংসার দাবিদার। বিশেষত, বেসরকারি খাতের ননলিস্টেড কোম্পানির ২.৫ শতাংশ কর্পোরেট ট্যাক্স হ্রাস করা হয়েছে। তবে কর্পোরেট করের হার বর্তমানে আরও হ্রাস করা প্রয়োজন যাতে করোনা প্রাদুর্ভাব পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারে।
পাশাপাশি আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জরিমানাবিহীন ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রদানের সময়সীমা বৃদ্ধি করার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি বাজেটে নতুন শিল্পে কর অবকাশ সুবিধা যেমন আর্টিফিসিয়াল ফাইবার প্রোডাকশন, ন্যানো টেকনোলজি বেইজড প্রোডাক্ট, আর্টিফিয়াল ইন্টিলিজেন্স, অটোমোবাইল পার্টস, রোবোটিক ডিজাইন অ্যান্ড ম্যানুফেকচারিং, ইলেকট্রিক্যাল ট্রান্সফরমার প্রোডাকশন, এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিস শিল্পকে কর অবকাশ সুবিধা দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। তবে ব্যক্তিপর্যায়ের ব্যবসায়ীদের জন্য ৩ কোটি টাকার উপর টার্নওভার হলে ন্যূনতম ০.৫ শতাংশ হারে কর নির্ধারণ করার কারণে ব্যবসায়ীদের এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে করভার বৃদ্ধি পাবে। আমরা তা হ্রাস করার প্রস্তাব করছি। পাশাপাশি যে পরিমাণ অর্থ আন্ডার বা অভার ইনভয়েসিং করা হবে এবং যে পরিমাণ প্রদর্শিত বিনিয়োগ ভুয়া প্রমাণিত হবে তার ওপর ৫০ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব অর্থপাচার রোধে ভূমিকা রাখবে যা প্রশংসনীয়। বাজেটের আরও বেশ কিছু প্রস্তাবকে প্রশংসনীয় বলছে এই সংগঠন।