কালো টাকা সাদা করার সুযোগ অনৈতিক: সিপিডি
১১ জুন ২০২০ ২১:৪২
ঢাকা: প্রস্তাবিত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আরও সম্প্রসারিত করাকে অনৈতিক বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এছাড়া সিপিডি মনে করছে, বিদ্যামান করোনাভাইরাস সমস্যা মোকাবিলায় বাজেটে যে ধরনের কাঠামো থাকা দরকার ছিল, বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন নেই।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) সন্ধ্যায় ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পরবর্তী তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় সিপিপডর সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আরও বেশি সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এটা নৈতিকভাবে কাম্য নয়। এই ধরনের সুযোগ দেওয়া হলেও বাস্তবে অর্থনীতিকভাবেও খুব একটা কাজে আসে না, রাজনৈতিক দিক থেকেই এটাও গ্রহণযোগ্যৗ নয়। জনগণ এটাকে ভালোভাবে দেখে না। ফলে এটা সরকারের পক্ষেও যাবে না। কারণ যারা ২৫-৩০ শতাংশ ট্যাক্স দিয়েছেন, আর যারা তা না দিয়ে এখন ১০ শতাংশ কর দিয়ে বিনিয়োগ সুবিধা পাওয়া নৈতিকভাবে সমর্থন যোগ্য নয়।’
অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘যে অনুমিতি নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে তাতে বাস্তব অবস্থার প্রতিফলন হয়নি। কারণ বাজেটের সম্পদ আহরণ এবং সম্পদ ব্যয়ের যে সব প্রস্তাব করা হযেছে তাতে মনে হচ্ছে একটা ব্যবসায়িক চিত্র ফুটে উঠেছে। বাজেট দেখলে মনে হবে আমরা খুব দ্রতই কোভিড-১৯ থেকে মুক্তি পাবো এবং অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। অর্থনীতি তার পুরনো ধারায় ফিরে যবে। কিন্তু কোভিড-১৯ নিয়ে আমরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক, মানবিক এবং অর্থনীতি খাতে যে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। বাজেটে তা মোকাবিলায় সে ধরনের কোনো সামাজিক কাঠামো নেই।’
তিনি বলেন, ‘বাজেটে সম্পদ আহরণের যে প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। চলমান অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ৩ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা থেকে ৯ শতাংশ বেশি হবে। তবে আমরা মনে করছি চলতি অর্থবছরে প্রকৃত রাজস্ব আয় আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি হবে না। সেই বিবেচনায় ৫০ শতাংশের মতো সম্পদ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব বাজেট দেওয়া হয়েছে। এই অনুমিতি তা বাস্তব সম্মত মনে হচ্ছে না।‘
তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকি কমিশন গঠন, দুদককে শক্তিশালী করা, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, প্রবাসী ও সরকারী কর্মচারী এবং শস্য ও পবাদিপশু বিমাল কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। আগামী বাজেটেও এইসব বিষয়ে সংস্কারের কোনো জোরালো বক্তব্য নেই।’
সিপিডির এই সম্মানিত ফেলো আরও বলেন, ‘করোনার কারণে সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে তা আরও বাড়ানোর দরকার ছিল। এই খাতে ১০০টি উপজেলায় ৫০ লাখ লোকের জন্য আড়াই হাজার কোটি টাকা বিধবা ও বয়স্ক ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব একটি ভালো উদ্যোগ। একইসঙ্গে তিনি ব্যক্তি আয়কর সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ করাকে স্বাগক জানান।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজেটের অর্থ সাশ্রয়ের বিষেয়ে কোনো বক্তব্য নেই। তবে কৃষি, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষা খাতকে অগ্রধিকার দেওয়ার সাথে আমরা একমত।’ তবে যেভাবে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে তার সঙ্গে তিনি একমত নয় বলেও তিনি জানান।