বাজেটে রাজস্ব ও জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়: সানেম
১১ জুন ২০২০ ২২:০৫
ঢাকা: ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব ও জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয় বলে মন্তব্য করছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম)। পাশাপাশি বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে, সেটি যথেষ্ট কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়া এ তথ্য জানানো হয়।
সানেমের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের লক্ষ্য হওয়া উচিত কভিড-১৯ মহামারির ফলে স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির জন্য যে অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে সেগুলো মোকাবিলা করা। পাশাপাশি অর্থনীতির যে গতিধারা ছিল সেটি ফিরিয়ে আনা। কিন্তু বাজেটে ৮ দশমিক ২ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা বাস্তব সম্মন নয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে এবং তাতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের ওপরে যে গতিধারায় ছিল সেখানে ফিরে আসবে? বাস্তবতা কি তা বলছে কি না সেটা একটা প্রশ্ন থেকে যায়।
আরও বলা হয়, আমরা দেখছি স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি, বিশেষ করে সংক্রমণের মাত্রা আরও বাড়ছে, মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়ছে এবং কবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবে চালু করা যাবে সেটি নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে। পাশাপাশি আমাদের অর্থনীতির বড় দুইটি চালিকাশক্তি—একটি হচ্ছে রফতানি, আরেকটি হচ্ছে রেমিট্যান্স—এই দুটি খাতেই আমরা বড় ধরনের ধাক্কার আশঙ্কা করছি। আমাদের রফতানির বড় দুটো গন্তব্য হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও উত্তর আমেরিকা। এই দুটো অঞ্চলেই নেতিবাচক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সুতরাং, এই দেশগুলোতে সামনের দিনগুলোতে আমাদের রফতানি কতটুকু বাড়বে, সেটিও কিন্তু একটা বড় প্রশ্ন।
মধ্যপ্রাচ্যের যে দেশগুলোতে আমাদের শ্রমিকরা কাজ করেন, সেখানেও অর্থনীতি ব্যাপকভাবে সংকুচিত হয়েছে। ওই দেশগুলোতে থেকে ভবিষ্যতে আমরা কতটুকু রেমিট্যান্স পাবো সেটি নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থায় ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার প্রাক্কলন সংগতিপূর্ণ কি না সেটি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, সংসদে বাজেট অধিবেশনে দাবি করা হচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালকে কভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে প্রস্তুত করা হয়েছে, আসলেই তারা প্রস্তুত কি না? আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে রিপোর্টে দেখছি যে, ঘোষণা ও বাস্তবায়নের মধ্যে বড় ধরণের ফারাক রয়ে গেছে। ঘোষণার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা দরকার।
সামাজিক সুরক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধিকে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ অভিহিত করে তিনি বলেন, সামাজিক সুরক্ষখাতের যে বরাদ্দ সেটির একটা বড় অংশ কিন্তু পেনশন-ভাতার দিকে যায়। সুতরাং প্রকৃত অর্থে বরাদ্দ কতটুকু বেড়েছে? যে সংকট আমরা দেখছি, সেই সংকটে একটা বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী দারিদ্র্য সীমার নিচে পড়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে আরও বড় সংখ্যক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য সীমার নিচে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী কাজ হারিয়েছে। সুতরাং এই জনগোষ্ঠীকে কীভাবে সামাজিক সুরক্ষা খাতের আওতায় আনা যায়, বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের সমস্যা আছে, অব্যবস্থাপনার সংকট আছে, প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা আছে, খেলাপি ঋণের বড় ধরনের সংকট আছে। এরকম একটা সংকটগ্রস্থ ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে প্রণোদনা প্যাকেজ কীভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে সেটিরও একটা পথনির্দেশিকা বাজেটে থাকা দরকার।
তিনি বলেন, বাজেটে রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয়। এমনকি সংশোধিত বাজেটে যে রাজস্ব আদায়ের কথা বলা হয়েছে, আমরা মনে করি যে সংকটটা দেখছি, তাতে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব নয়। বাস্তবের সাথে সম্পর্কিত বিহীন রাজস্ব লক্ষ্য যদি আমাদের সামনে তুলে ধরা হয় তাহলে অর্থায়নের অন্যান্য উৎসগুলোকে বিবেচনা করতে নিরুৎসাহিত করতে পারে।