‘করোনা দুর্যোগেও অর্থমন্ত্রীর মাথা থেকে প্রবৃদ্ধির ভূত নামেনি’
১২ জুন ২০২০ ০১:৫৩
ঢাকা: করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক গতানুগতিকতার দেয়াল অতিক্রম করত পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। করোনাকালের এই দুর্যোগও অর্থমন্ত্রীর মাথা থেকে প্রবৃদ্ধির ভূত নামাতে পারেননি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে দলের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন। এসময় তিনি বলেন, করোনা দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য-চিকিৎসা এবং কৃষি ও গ্রামীণ খাতের গভীর মনযোগ ও বরাদ্দ পাওয়ার কথা থাকলেও তা পায়নি।
সাইফুল হক বলেন, অর্থমন্ত্রীর ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যত পথপরিক্রমা’ শীর্ষক বাজেটে দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য সরকারি উদ্যোগে গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে আসা আট কোটি মানুষের জন্য টেকসই ‘গণবণ্টন ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার বিশ্বাসযোগ্য কোনো পরিকল্পনা ও প্রয়োজনীয় বরাদ্দের প্রস্তাবনা নেই।
তিনি বলেন করোনা মহামারি ও মহামারিজনিত অর্থনৈতিক দুর্যোগ থেকে যদি মানুষকেই রক্ষা করা না যায়, তাহলে কোনো ‘পথ পরিক্রমা’ বা প্রবৃদ্ধি কাজে আসবে না। ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেটে ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি রেখে যে ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা নেহাত কৃত্রিম আশাবাদ। এর সঙ্গে বাস্তবতার সম্পর্ক নেই। আয় যেখানে সংকুচিত, ব্যয় ও ঋণের মাত্রা যেখানে বেশি, সেখানে মাত্রাতিরিক্ত প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য কেবল হতাশার জন্ম দেবে।
বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় তিনি আরও বলেন, মহামারি দুর্যোগ যে কৃষি ও গ্রামীণ খাত সামষ্টিক অর্থনীতিকে সচল রেখেছে, মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছে। রফতানি বাণিজ্যে নিম্নগতি ও প্রবাসী আয় সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে এসব খাতের অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা ছিল। বাজেট প্রস্তাবনায় তা দেখা যায়নি। কৃষি ও কৃষিভিত্তিক এবং গ্রামীণ উৎপাদন প্রকল্পে যে পরিমাণ প্রত্যক্ষ প্রণোদনা দরকার, তা হয়নি। দারিদ্রসীমার নিচে থাকা চার কোটি মানুষের সঙ্গে করোনা দুর্যোগে আরও যে চার কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে এসেছে, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও নগদ টাকা দেওয়ার কার্যকর প্রস্তাবনা বাজেটে নেই। তাছাড়া দুর্যোগ উত্তরণে বেকারদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য যে মাত্রায় নগদ প্রণোদনা দেওয়া দরকার ছিল, তাও খুবই অপ্রতুল। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বরাদ্দ বাড়ানো হলেও চুরি, দুর্নীতি ও দলীয়করণের কারণে তার সুফল থেকেও অধিকাংশ মানুষ বঞ্চিত থেকে যায়।
গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সাইফুল হক অপ্রয়োজনীয় সরকারি ব্যয় কমিয়ে আনার উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। পাশাপাশি রাজস্ব ব্যয়সহ অত্যাবশ্যক নয়— এমন ব্যয় আরও কমিয়ে আনার আহ্বান জানান তিনি। আগামী দুই বছরের জন্য বিলাসদ্রব্যের আমদানি বন্ধ ও অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বরাদ্দ কমিয়ে খাদ্য, শিক্ষা, শিল্প ও আবাসন খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান। তিনি দুর্যোগকালীন বাজেটের অজুহাতে বাসা ভাড়া, পরিবহন ভাড়া, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
বিবৃতিতে করোনা মহামারি মোকাবিলায় ফ্রন্টলাইন ক্লাস্টার্স ডাক্তার, নার্স, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, গণমাধ্যমকর্মী, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জন্য বাড়তি প্রণোদনা বরাদ্দ রাখারও আহ্বান জানান।
বাজেট ২০২০-২১ বাজেট প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক