Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বাজেটে করোনা সংকটের প্রতিফলন নেই’


১৩ জুন ২০২০ ০০:২৫

ঢাকা: ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে চলমান করোনাভাইরাস সংকটের কোনো প্রতিফলন নেই। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা যেসব বিষয় আশা করেছিলাম, সেগুলো বাজেটে আসেনি। এই বাজেট বাস্তবায়নযোগ্যও নয়। এটি উচ্চাভিলাষী ও গতানুগতিক বাজেট হয়েছে।

শুক্রবার (১২ জুন) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ও ইকোনোমিক ফোরাম আয়োজিত বাজেট সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। অনলাইনে এই বাজেট সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

বৃহস্পতিবার (১১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। সংলাপে বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, বাজেট গতানুগতিক হলেও বাজেটের আকার কী হবে এবং নির্ধারিত ব্যয় মেটাতে হলে কোন উৎস থেকে রাজস্ব আহরণ করা হবে, তার একটা রূপরেখা থাকতে হয়। এই বাজেটে সেটা নেই। জিডিপির প্রবৃদ্ধির বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এই বাজেট আমার কাছে বাস্তবায়নযোগ্য মনে হয়নি।

মির্জ্জা আজিজ বলেন, এর প্রথম কারণ হচ্ছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। করোনার কারণে প্রবৃদ্ধির সূচক নিম্নমুখী। এটা আরও নিম্নমুখী হচ্ছে। রফতানিতে ধ্বস। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিকরা অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, দেশে ফিরে আসছেন। রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি কমে গেছে। ব্যাংকিং খাতে প্রবৃদ্ধি কমবে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, ২০২০-২১ সালে প্রবৃদ্ধি হবে ১ শতাংশ। সেখানে বাজেটে ৪-৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হলে কিছু আশা ছিল। জিডিপির প্রবৃদ্ধি কম হলে রাজস্ব আহরণে সমস্যা তৈরি হবে। ফলে বাজেটে ঘাটতির মাত্রা বাড়বে। একইসঙ্গে বাজেটের অর্থায়ন কিভাবে হবে, সেটা নিয়েও সমস্যা হবে। অনেক ব্যাংক তারল্য সংকটে আছে। কাজেই করোনা পরবর্তী ও মূলধনী বাজার মৃত প্রায়। উচ্চভিলাষ ও বাস্তবধর্মী বাজেট দরকার। সেই বাজেট পুরোপুরি সময়মতো বাস্তবায়িত করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে।

অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমি আশা করেছিলাম বাজেট গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু সেটা হয়নি। করোনা সময়কালে বিশেষ বাজেট আশা করেছিলাম। কিন্তু ১০-১৫ বছর ধরে একই বাজেট। গতানুগতিক। জনমনে স্বস্তি আসবে, দুঃখ কষ্ট লাঘব হবে— এমন বাজেট চেয়েছিলাম।

তিনি বলেন, বাজেটে আয়ের ঘাটতি হবে। আয় করা যাবে না। ঘাটতি পূরণ কঠিন হবে। বাজেট বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ হবে। ২ লাখ কোটি টাকার এডিবি। ১ লাখ টাকার বেশি এডিবি রাখার দরকার ছিল না। বাজেটে প্রথমত সংস্কার দরকার ছিল। ব্যাংকিং খাতে সমস্যা আছে। গভর্ন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট, পুঁজিবাজারে সংস্কার দরকার ছিল। কিন্তু এসব বিষয়ে কিছুই বলা নেই।

ড. সালেহউদ্দিন আরও বলেন, এনবিআরের সংস্কার, ট্যাক্স যারা দিচ্ছে না তাদের করের আয় আনা— এসব বিষয়ে কিছু বলার নেই। কর্মসংস্থান সম্পর্কে কিছুই বলা নেই। স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করবেন কোথায়? এখনো গ্রামে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। কিন্তু তাদের আরও সমস্যা হতে পারে। সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। তাই পুরো স্বাস্থ্য খাত ঢেলে সাজানো দরকার ছিল। সামাজিক নিরাপত্তা দরকার, গরীবের কোনো নিরাপত্তা নেই। এই খাতেও নজর দেওয়া দরকার ছিল। কৃষিতে আমাদের জনগোষ্ঠীর বড় অংশ নিয়োজিত। কৃষকদের বিপণন, গ্রামীণ বাজারকে শহরের সঙ্গে যুক্ত করা দরকার। কৃষি বিপণনে আরও বেশি খেয়াল করতে পারলে ভালো হতো। বাজেটের আকার নিয়ে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু এটা গতানুগতিক। তারপরও বলব, বাজেটের টাকা যেন সঠিকভাবে ব্যয় হয়, কোনো দুর্নীতি যেন না হয়। এটাই এখন দেখার বিষয়।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমিক ও সোস্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. এ টি এম নুরুল আমিন বলেন, বর্তমান সময়কে চিন্তা করে বাজেট প্রণয়ন করা দরকার ছিল। করোনার সময় বিবেচনা করে বাজেট দরকার ছিল। সেটা হয়নি। অর্থনীতি খুব সহজে স্বাভাবিক হচ্ছে না। বাজেটের আগে সবাই ভেবেছে স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাড়ানো হবে। কিন্তু সেটার বেশি একটা পরিবর্তন হয়নি। স্বাস্থ্য খাত খরচ করতে পারে না বলে বাজেটে বরাদ্দ বেশি হবে না— এটা যৌক্তিক কথা হতে পারে না। করোনাকালে আমরা দেখছি আমাদের স্বাস্থ্যখাতে কত সমস্যা। কৃষির জন্য আমরা বেঁচে আছি। এই কৃষিতে আরও নজর দেওয়া দরকার।

তিনি আরও বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বড় দরকার। যেসব মানুষ কাজ করতে পারে না, কাজ নেই, এদের সামাজিক নিরাপত্তা দরকার। এদের জন্য একটা ফান্ড দরকার ছিল। বাজেট থেকে যে দিকনির্দেশনা আসবে, সেটা নেই। এখন যে ক্রাইসিসে আমরা আছি, সেটা থেকে বের হতে আমাদের যেটা দরকার, সেটা বাজেটে নেই। আমরা করোনা থেকে দ্রুতই উঠে আসতে পারব— এই ভাবনা কিন্তু ভুল।

আইপিডিসি ফাইনান্স লিমিটেডের সিইও মমিনুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে সারাবিশ্ব একটা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। করোনা মোকাবিলা, স্বাস্থ্য খাতের অবকাঠামো উন্নয়নে পদক্ষেপ, সামাজিক নিরাপত্তা খাত, চাকরির ক্ষেত্রে এবং করোনা পরবর্তী অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাজেটে দিকনির্দেশনা চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সে আশা পূরণ হয়নি। জিডিপির প্রবৃদ্ধি যেটা ধরা হয়েছে, সেটা উচ্চভিলাষী। সেজন্য বাজেটে গ্যাপ বাড়বে। ব্যাংকিং খাতে যাদের সঞ্চয় ছিল, তারা সেটা ভাঙিয়ে চলছে।

তিনি আরও বলেন, এসএমই খাতে যে ভ্যাটের বিষয় ছিল, সেটা একটু রিল্যাক্স করেছে। আয়করের বিষয়টা ভালো হয়েছে। সমাজের উচ্চবিত্তদের ট্যাক্স ব্রেক দেওয়ার দরকার ছিল কি না, সেটা কিন্তু ভাবার বিষয়। উচ্চবিত্তদের কাছে টাকা আছে। এটা না করলেও চলত। করপোরেশন ট্যাক্সটা ভালো হয়েছে। বন্ড মার্কেটের ভবিষ্যৎ বেশি একটা ভালো না। স্বাস্থ্য খাত ও কর্মসংস্থান সৃজনে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। বাজেটে খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। এই মুহূর্তে যে সংকটে আছে দেশ, সেটা সঠিকভাবে গুরুত্ব পায়নি।

আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্কুলের সহকারী অধ্যাপক শামিম এহসানুল হক ও প্রভাষক তানিয়া আকতার।

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট করোনা সংকটের প্রতিফলন বাজেট বাজেট প্রতিক্রিয়া


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ভূতের গলির বাসায় মিলল বৃদ্ধের মরদেহ
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:০০

সম্পর্কিত খবর