আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ নিয়ে শঙ্কায় মহিপুরের কৃষকরা
১৩ জুন ২০২০ ০৮:২৭
পটুয়াখালী: মাত্র কয়েকদিন আগেই ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে ক্ষতি-বিক্ষত হয়েছে পটুয়াখালীর মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। কিন্তু বাঁধের ওপর প্রকৃতির তাণ্ডব এখনও শেষ হয়নি। অমাবস্যা-পূর্ণিমায় কিংবা জোয়ারে আন্ধারমানিক নদীর উত্তাল ঢেউ নিয়মিত আছড়ে পড়ছে বাঁধের ওপর। এতে প্রতিনিয়ত ভাঙছে বাঁধটি। এরই মধ্যে বাঁধের প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ওই এলাকার পাঁচটি গ্রামের হাজার হাজার কৃষক ফের পানিবন্দি হওয়াসহ আর্থিক ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছেন।
জানা গেছে, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরে নিজামপুর গ্রামের পাউবোর ৪৭/১ পোল্ডারের বেরিবাঁধের বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এর পর ২০০৮ ঘূর্ণিঝড় নার্গিস, ২০০৯ আইলা, ২০১৩ মহাসেন, ২০১৫ কোমেন, ২০১৬ রোয়ানু, ২০১৭ মোরা, ২০১৯ ফণী ও বুলবুল’র তাণ্ডবে নিজামপুর বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বেশ কয়েকবার সংস্কারসহ তিনবার পুনর্নির্মাণ করা হলেও সাগর মোহনা আন্ধারমানিক নদীর অস্বাভাবিক উচ্চতায় জোয়ারে পানি ভাঙন কবলিত অংশ দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দফায় দফায় প্লাবিত হওয়ায় ওই ইউনিয়নের পুরান মহিপুর, ইউসুফপুর, নিজামপুর, কোমরপুর ও সুধীরপুর গ্রামের অন্তত তিন হাজার একর জমিতে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে কাঙ্ক্ষিত ফসল পাচ্ছেন না কৃষকরা। এছাড়া পানি ঢুকলেই বন্ধ হয়ে যায় ওই এলাকার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্মাণ করে দেয় রিং বেড়িবাঁধ। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে এ বাঁধটির বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এই বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে কৃষক আলতাফ শরীফ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘আন্ধারমানিক নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর পানির চাপ বাড়লে বাঁধটি যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে যেতে পারে। তখন আমাদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা থাকবে না।’
নিজামপুর গ্রামের বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সিডরের পর থেকে পাঁচ গ্রামের মানুষ দশ বছর ধরে জমিতে কোনো চাষ করতে পারেনি। এরপর দুবছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে এখানে রিং বেড়িবাঁধ করে দেয়। কিন্তু সুপারসাইক্লোন আম্পানে এ বাঁধটিরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকরা দুবছর ধরে চাষ শুরু করেছে। কিন্তু বাঁধটির ক্ষতি হয়ে যাওয়ায় মানুষ আবার আতঙ্কে রয়েছে।
মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ. ছালাম আকন জানান, এ এলাকার বেশিরভাগ মানুষই মৎসজীবী। কেউ আবার কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এখানকার নিজামপুর ও সুধীরপুর গ্রাম সাগরের মোহনা সংলগ্ন। শুধু অমাবস্যা-পূর্ণিমাই নয়, জোয়ার-ভাটার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের। আগের বেড়িবাঁধ নেই। এখানে সাড়ে আটশ মিটার রিং বেড়িবাঁধ হয়েছে। তাও আবার আম্পানে ক্ষত-বিক্ষত। অবহেলিত এ জনপদের নিজামপুর গ্রামের তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নতুনভাবে করার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো. ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পানে রিং বেড়িবাঁধটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমি সরজমিনে গিয়ে দেখেছি। তবে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা দিয়ে কোনোরকমে কাজ করা সম্ভব। এই সাগর মোহনায় ব্লকসহ পুর্ণাঙ্গ বেড়িবাঁধ করা দরকার।’ এর জন্য প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।