Monday 30 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ক্যাপ্টেন মনসুরের পথ ধরেই রাজনৈতিক কিংবদন্তি নাসিম


১৩ জুন ২০২০ ১৬:৫১

সিরাজগঞ্জ: কাজীপুর তথা সিরাজগঞ্জের অভিভাবক হিসেবেই যাকে দেখেন এলালাবাসী; সবাই ভাবেন, দুই হাতে দিয়ে এই জেলাকে আগলে রেখেছেন তিনি। আবার অনেকের চোখে তার আলোয় আলোকিত পুরো এলাকা। বাবা ছিলেন জাতীয় নেতা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা ও আস্থাশীল হওয়ার কারণে কারাগারে প্রাণ দিতে হয় তাকে। আর সন্তান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আস্থাভাজন। ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ছিলেন সক্রিয়। বিভিন্ন আন্দোলনে রাজপথে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। পিতার মতো তিনিও দেশের রাজনীতিতে উজ্জল নক্ষত্র হিসেবেই পরিচিত। তিনি হলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতীয় নেতা, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্যাপ্টেন শহীদ এম মনসুর আলীর যোগ্য উত্তরসূরি সাবেকমন্ত্রী সদ্য প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিম।

বিজ্ঞাপন

১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায় মোহাম্মদ নাসিমের জন্ম। তার পিতা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। মোহাম্মদ নাসিমের মায়ের নাম মোসাম্মৎ আমিনা খাতুন। যিনি আমেনা মনসুর হিসেবেই পরিচিত। পারিবারিক জীবনে মোহাম্মদ নাসিম বিবাহিত এবং তিন সন্তানের জনক। তার স্ত্রীর নাম লায়লা আরজুমান্দ। মোহাম্মদ নাসিম জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

বিজ্ঞাপন

মোহাম্মদ নাসিমের বাবা শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে বিজয়ী হন। প্রাদেশিক পরিষদের মন্ত্রীও হন তিনি। ৭০’র নির্বাচনেও তিনি প্রাদেশিক পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন পান। দ্রুতই তিনি আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় নেতায় পরিণত হন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের অর্থমন্ত্রী ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের যোগাযোগমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের উন্নয়নের পাশাপাশি তিনি নিজ এলাকার উন্নয়নে ভূমিকার কারণে এখনও এখানকার মানুষের কাছে স্মরণীয়-বরণীয়।

পিতার পরে নিজ রাজনীতিতে এসে সবার অন্তরে ঠাঁই করে নেন মোহাম্মদ নাসিমও। কলেজ জীবনে সক্রিয় ছাত্র রাজনীতি করতেন নাসিম। এরপর যুবলীগের রাজনীতি জড়ালেও ১৯৮১ সালের আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, জাতীয় নেতা শহীদ এম মনসুর আলীর সন্তান মোহাম্মদ নাসিম। ওই সম্মেলনে প্রথমবারের মতো তিনি আওয়ামী লীগের যুব সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৭ সালের সম্মেলনে তিনি দলের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান।

২০০২ সালের সম্মেলনের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ ছিল একটি। আর ওই সম্মেলনে বিভাগওয়ারী সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের সম্মেলনে মোহাম্মদ নাসিমকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব পালনে তিনি দক্ষতার পরিচয় দেন। পরে ২০০২ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত দলের সম্মেলনে তাকে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য পদে রাখা হয়। এরপর ২০১২ সালের সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়। এরপর থেকে তিনি টানা তিন মেয়াদে ওই পদেই দায়িত্ব পালন।

রাজনীতির মাঠে সুবক্তা হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ নাসিম ভোটের রাজনীতিতেও সফল হিসেবে পরিচিত। ১৯৮৬ সালে তিনি প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। সিরাজগঞ্জ-১ সংসদীয় আসন (কাজীপুর) থেকে পাঁচবার বিজয়ী হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে তাকে স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ১/১১ সরকারের দেওয়া মামলার কারণে মোহাম্মদ নাসিম অংশগ্রহণ করতে পারেননি। ওই নির্বাচনে তার সন্তান তানভীর শাকিল জয়কে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। সেই নির্বাচনে তানভীর শাকিলও জয়লাভ করে।

এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে মোহাম্মদ নাসিমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। ওই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। আর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এর বাইরে মোহাম্মদ নাসিম দীর্ঘদিন ধরে ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

রাজনৈতিক জীবনে রাজপথে সবসময়ই সক্রিয় ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। সরকারবিরোধী আন্দোলনের কারণে বিভিন্ন সময় নির্যাতন সইতে হয়েছে তাকে। রোষানলের শিকার হয়েছিলেন ১/১১ সরকারেরও। কিন্তু আওয়ামীলীগ ও জাতির জনকের রাজনীতির প্রশ্নে তিনি ছিলেন সবসময়ই আপোষহীন। রাজনৈতিক দুরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার কারণে তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আস্থাভাজন।

রাজনীতির পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। ঢাকাসহ নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন। সিরাজগঞ্জের অবকাঠামোসহ বিভিন্ন উন্নয়ন হয়েছে বর্ষীয়ান এই রাজনীতিকের হাত ধরে। সর্বশেষ করোনা পস্থিতিতেও তিনি আওয়ামীলীগ, ১৪ দলীয় জোট ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঢাকা ও নিজ এলাকায় অসহায় মানুষদের সহায়তা করেছেন।

ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। পরে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তার সন্তান মোহাম্মদ নাসিম। আর দাদা এবং বাবার দেখানো পথ ধরে জাতীয় সংসদে প্রবেশ করেন নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয়ও। জাতীয় সংসদে তিন প্রজন্মের নেতৃত্বের উদাহরণ বলতে গেলে বাংলাদেশে বিরল। তবে জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন মনসুরের রাজনৈতিক জীবনের পথ ধরে তার মতোই কিংবদন্তি হয়ে উঠেছিলেন মোহাম্মদ নাসিম। এটিও বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরল ঘটনা।

আওয়ামী লীগ কিংবদন্তি ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী জাতীয় নেতা টপ নিউজ মোহাম্মদ নাসিম

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর