Tuesday 29 Apr 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পদ্মাসেতু এলাকায় জাহাজ নোঙর করে পাথর খালাস, প্রকল্পে অস্বস্তি


১৪ জুন ২০২০ ০৯:০৫

ঢাকা: পদ্মাসেতু প্রকল্পের ভেতরে বহিরাগত সরবরাহ প্রতিষ্ঠান জাহাজ নোঙর করে ‘অবৈধভাবে’ ও ‘জোরজবরদস্তি’ করে পাথর খালাসের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যেই ফাস্ট ট্র্যাক মেগা প্রকল্পে বহিরাগতদের এমন জবরদখলের প্রচেষ্টায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা অস্বস্তিতে ভুগছেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী। তারা জানিয়েছেন, প্রকল্প এলাকায় জাহাজ সমাবেশ ঘটিয়ে মাল লোড-আনলোডের কোনো অনুমোদন দেখাতে পারেনি ‘ভাই ভাই ট্রেডার্স’।

বিজ্ঞাপন

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি প্রকল্পের ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করে ‘ভাই ভাই ট্রেডার্স’ ১৬টি লাইটার জাহাজ নোঙর করেছে। শুধু তাই নয়, তারা এসব জাহাজ থেকে পাথর খালাস করার জন্য বাইরে থেকে শ্রমিকদেরও নিয়ে এসেছে। এতে প্রকল্পের ‘আইসোলেটেড’ পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে জানিয়ে বিষয়টি প্রকল্প থেকে সেতু কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

জানা গেছে, সেতু প্রকল্প কর্মকর্তাদের চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে অন্য কাজের মালামাল এখানে আনলোডের চেষ্টা চালিয়েছে ভাই ভাই ট্রেডার্স। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক হামিদুল ইসলাম দাবি করেন, ‘সেতু কর্তৃপক্ষ অসৎ উদ্দেশ্যে আমাদের লোড-আনলোডের কাজে বাধা দিয়েছে। আমরা জাজিরা থানায় বিষয়টির অভিযোগ দাখিল করেছি।’ তবে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম বলছেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ তারা পাননি। সাপ্লাইয়ার ভুয়া কথা বলেছে।

শনিবার (১৩ জুন) বিকেলে ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেন জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুর রহমান, জাজিরা থানার ওসি আজহারুল ইসলাম ও প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী।

বিজ্ঞাপন

জাজিরা থানার ওসি আজহারুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঘাটে জবরদখলের চেষ্টা চালিয়েছে সাপ্লাইয়ার। মাল এখনো আনলোড হয়নি। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সাপ্লাইয়ারের লোকজনকে পাইনি। ঘটনাটি সেতু বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবহিত হয়েছেন। তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন।’

ইউএনও জাহিদুর রহমান বলেন, ‘জাহাজগুলোর এখানে মাল আনলোডের কোনো অনুমোদন আছে কি না দেখতে গিয়েছিলাম। কোনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি। যেহেতু অনুমোদন নেই, তাই কোনো ধরনের লোড-আনলোড না করার জন্য বলেছি।’

সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, অনুমোদন ছাড়াই সেতু নির্মাণাধীন এলাকায় লাইটার জাহাজ থেকে পাথর খালাসের চেষ্টা হয়েছে। সেতুর প্রকৌশলীরা বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানালে তাদের ওপর জোরজবরদস্তির চেষ্টা চালিয়েছে ভাই ভাই ট্রেডার্স। এতে পদ্মাসেতু নির্মাণকারী ঠিকাদার চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ও বিদেশি পরামর্শকরা বিব্রতবোধ করেছেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে বহিরাগত সরবরাকারীর এ ধরনের জোরজবরদস্তিতে ভীতি সঞ্চার হয়েছে প্রকল্পে।

চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির একজন প্রকৌশলী বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে প্রকল্প এলাকাটি আইসোলেটেড করা হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া এখানে বাইরের কেউ ঢুকলে তা হাজার হাজার শ্রমিক ও কনাসালট্যান্টের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

এদিকে, সেতু বিভাগের একটি চিঠিতে আশঙ্কা জানিয়ে বলা হয়েছে, প্রকল্পের শরিয়তপুর অংশের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ৩০/৪০টি জাহাজ থেকে তিন লাখ টনেরও বেশি পাথর ও অন্যান্য মালামাল জোরপূর্বক আনলোড ও দখল করে তা বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহের চেষ্টা করা হচ্ছে। মালামাল আনলোডের কাজে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৪০০ শ্রমিক নিয়ে আসা হয়েছে, যাদের মধ্যে কোভিড সংক্রমণ থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

এতে প্রকল্পের কাজের ক্ষতি ও আইসোলেটেড পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয় ওই চিঠিতে। বহিরাগত লোকজন জড়ো করে পাথর আনলোডের মাধ্যমে প্রকল্পের নিরাপত্তা হুমির মুখে পড়বে বলেও জানানো হয়।

এ পরিস্থিতে প্রকল্পে নিয়োজিত বিদেশি প্রকৌশলী ও পরামর্শকদের মধ্যে করোনা ভীতি ছড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর