Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘যথাযথ পদক্ষেপ নিলে আগুন থেকে বাঁচানো যেত ইউনাইটেডের রোগীদের’


১৪ জুন ২০২০ ১৭:৫৫

ঢাকা: ইউনাইটেড হাসপাতালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন নেভাতে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে রোগীদের জীবন বাঁচানো সম্ভব হতো বলে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তদন্ত কমিটি। এছাড়া অগ্নিকাণ্ড সংঘটন ও তা প্রতিরোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

রোববার (১৪ জুন) তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়। পরে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২২ জুন দিন ঠিক করে দেন।

ফায়ার সার্ভিস ছাড়াও ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও রাজউকের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে কর্মরত ব্যক্তিরা শীতাতপ যন্ত্র (এসি) থেকে ধোঁয়া দেখামাত্র প্রাথমিকভাবে আগুন নেভানোর চেষ্টা, ইমাজেন্সি এলার্ম বাজানো, রোগী অপসারণ ও হাসপাতালের অগ্নি নির্বাপন দলকে উপস্থিত হতে জরুরি অনুরোধ করলে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড ও রোগীদের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হতো।’

‘এছাড়া এসি থেকে আগুনের স্ফুলিঙ্গ নির্গত হতে দেখেও কর্মরত উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে (ডাক্তার, তিন জন নার্স ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী) আগুন নেভানোর ব্যাপারে ফায়ার এক্সটিংগুইশার বা অন্যান্য আগুন নেভানোর সরঞ্জামাদি ব্যবহারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। ফলে অগ্নিকাণ্ডের সময় আগুন নেভাতে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের গাফিলতির কারণে ঘটনাটি ঘটে বলে তদন্ত কমিটি মনে করে।’

ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অগ্নিকাণ্ডের সময় অগ্নি নিরাপত্তা অফিসার উপস্থিত ছিল না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে সার্বক্ষণিক ফায়ার সেফটি অফিসার ও অগ্নি নির্বাপনকারী দলের সদস্যদের উপস্থিত থাকা বাঞ্চনীয় ছিল। আইসোলোশন সেন্টারে সকল প্রকারের অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা স্থাপন করা দরকার ছিল। ইউনাইটেড হাসপাতাল স্পর্শকাতর এলাকায় অবস্থিত। সেখানে দেশি-বিদেশি গণ্যমাণ্য ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিতে আসেন। এ ধরনের স্পর্শকাতর এলাকায় সেবাপ্রদানে পর্যাপ্ত অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া এ ধরনের আইসোলোশন সেন্টার নির্মাণ করা ঠিক হয়নি।’

অস্থায়ী সরঞ্জামাদি দ্বারা তৈরি না করে স্থায়ী অথবা অগ্নি প্রতিরোধযোগ্য নির্মাণ সামগ্রী দ্বারা এ ধরনের আইসোলোশন সেন্টার তৈরি করা উচিত ছিলো বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

রাজউকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসোলোশন সেন্টার নির্মাণ করে। কিন্তু রাজউকের কোনো ধরনের অনুমোদন তারা নেয়নি।

ডিএমপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অগ্নিকাণ্ড সংঘটন ও তা প্রতিরোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল।

এছাড়া তিন সরকারি সংস্থা তাদের প্রতিবেদনে বলেছেন, অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জামাদির বেশিরভাগই ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ ও অকেজে।

অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে:

ইউনাইটেড হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে সার্বক্ষণিক ফায়ার সেফটি অফিসার, কার্যকরী অগ্নিনির্বাপণকারী দলের সদস্যদের সরঞ্জামসহ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। নিয়মিত অগ্নি নির্বাপণ প্রশিক্ষণ ও ফায়ার অ্যান্ড ইভাকুয়েশন ড্রিল করা এবং যথাযথভাবে রেজিস্ট্রার রক্ষণাবেক্ষণ করার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এছাড়া হাসপাতালে কর্মরত সকল ব্যক্তিদের মধ্য হতে যারা রোগীর সঙ্গে অবস্থান করে তাদের মধ্য থেকে ২৫ ভাগ জনবলকে অগ্নি নির্বাপন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এছাড়া বিএনএসবির আলোকে ভবনের বেইজমেন্টে কোন স্থাপনা যেমন অফিস, স্টোর, কিচেন, ডাইনিং ইত্যাদি স্থাপন করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বেজমেন্ট শুধুমাত্র গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে বলে সুপারিশে বলা হয়েছে।

গত ২৭ মে রাতে রাজধানীর গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে আগুনে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে চারজন পুরুষ এবং একজন নারী।

পরে ওই ঘটনায় বিচার নিহতের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট দায়ের দুই আইনজীবী। পরে আদালত আগুনের ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়ে আদেশ দেন। তারপ্রেক্ষিতেই আজ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

আদালতে রিটকারী পক্ষে ব্যারিস্টার মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ ও অ্যাডভোকেট নিয়াজ মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

ইউনাইটেড হসপিটাল করোনা টপ নিউজ ভাইরাস


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

৯০০তম গোলে ইতিহাস গড়লেন রোনালদো
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:০৪

সম্পর্কিত খবর