Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত লকডাউন এলাকা চূড়ান্ত কিছু নয়’


১৫ জুন ২০২০ ২১:২৪

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে লকডাউনের জন্য সরকার নির্ধারিত এলাকার নাম গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলেও সে তথ্য সঠিক নয় বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তারা বলছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে কোথাও আনুষ্ঠানিকভাবে এরকম কোনো এলাকার তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। তবে রেড জোন, ইয়েলো জোন ও গ্রিন জোনে কোন এলাকা থাকবে, তা নির্ধারণে কাজ চলছে। নির্ধারণ হয়ে গেলে তা যথানিয়মে প্রকাশ করা হবে।

সোমবার (১৫ জুন) রাতে বাংলাদেশ রিস্ক জোন বেজড কোভিড-১৯ কনটেইনমেন্ট বাস্তবায়ন পরিকল্পনা কমিটির সদস্য সচিব ডা. মোহাম্মদ জহিরুল করিম সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) এই উপপরিচালক (দায়িত্বপ্রাপ্ত) বলেন, আজ রাতে কিংবা কাল জোনভিত্তিক এলাকার তালিকা প্রকাশ করা হবে।

আরও পড়ুন- শুধু লাল জোনে সাধারণ ছুটি, হলুদ-সবুজে চলাচলে বিধিনিষেধ

জহিরুল করিম বলেন, আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে এলাকাভিত্তিক কিছু তালিকা দেখতে পাচ্ছি। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে স্বাস্থ্য অধিদফতর বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই এসব এলাকার নাম প্রকাশ হচ্ছে। এটি জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা নির্ণয় করে রেড জোন, ইয়েলো জোন ও গ্রিন জোন নিয়ে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এটি একটি পরিকল্পনাধীন বিষয়। অনেক বিষয়েও ওপর এর বাস্তবায়ন নির্ভর করছে। আর চূড়ান্ত বাস্তবায়ন করবে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি। আমরা এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছি।

সিডিসি’র এই কর্মকর্তা বলেন, যেসব এলাকার নাম ঘোষণা করা হচ্ছে, তা কিসের ওপর ভিত্তি করে অনুমান করা হচ্ছে, তা বুঝতে পারছি না। যেসব এলাকার নাম এসেছে, তার কোনো কোনো এলাকা হয়তো রেড জোনে থাকবে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও যে পুরো এলাকা লকডাউনের আওতায় থাকবে, সেটি বলাও ঠিক হবে না। অনেক ক্ষেত্রে হয়তো ওই এলাকার সুনির্দিষ্ট কোনো অংশে লকডাউন কার্যকর হবে। এখানে পরিকল্পনার কিছু বিষয় আছে, যা এরই মধ্যে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এখন সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগে প্রয়োজন এলাকাগুলো চিহ্নিত করা। সেক্ষেত্রেও আমরা অনেকটা কাজ এগিয়ে নিয়েছি। কিছু কাজ শেষ প্রায়।

লকডাউন অঞ্চল নির্ধারণের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ডা. করিম বলেন, ধরুন মহাখালী এলাকা রেড জোন। তার মানে কিন্তু এই না যে পুরো মহাখালী। এই এলাকাতেই তো স্বাস্থ্য অধিদফতরের অফিস। সেক্ষেত্রে মহাখালী রেড জোন ঘোষণা করে কি পুরো এলাকা লকডাউনের আওতায় আনা হবে? বিষয়টি তেমন না। যদি আমরা দেখি, এই মহাখালী এলাকার কয়েকটি ভবনেই গত ১৪ দিনে ৬০ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে, সেক্ষেত্রে সেই কয়েকটি ভবন ও এর আশেপাশের কিছু অঞ্চল নিয়ে লকডাউন হতে পারে। আবার মিরপুর তো অনেক বড় এলাকা। সেক্ষেত্রে মিরপুরের কয়েকটি এলাকা, গলি বা কয়েকটি ভবনকে রেড জোন হিসেবে লকডাউন করা হতে পারে।

ডা. মোহাম্মদ জহিরুল করিম বলেন, আরেকটু সহজ করে যদি বলা হয় তবে বলতে হবে, আমরা আসলে ছোট ছোট অঞ্চলভিত্তিক কার্যকর পরিকল্পনা করতে চাচ্ছি। যেসব এলাকার নাম ঘোষণা করা হচ্ছে, সেগুলো ম্যাক্রো এলাকা। সেখান থেকে বাছাই করে রোগীর সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে মিনি এলাকা বাছাই করা হবে। সেই এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা দিয়ে প্রতিরোধ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখনো কোনো এলাকার নাম চূড়ান্ত করে জানানো হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, এটা একটা আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে। রেড জোন এলাকায় নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয় আছে। সেসব এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার বিষয়ে আজকেই সরকারের পক্ষ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সেখানেও কিন্তু কোনো নাম ঘোষণা করা হয়নি। এভাবে আসলে জনমনে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে। খুব দ্রুতই আমরা রেড জোন এলাকা বা ক্লাস্টারের নাম ঘোষণা করব। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক মহোদয় সেটি নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান খান সারাবাংলাকে বলেন, রেড জোন বা ইয়েলো জোন নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর কাজ করছে। এখনো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো এলাকার নাম ঘোষণা করা হয়নি। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। কাজ শেষ হলে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানানো হবে। এর আগে আসলে লকডাউন বিষয়ে এলাকার নাম ঘোষণা করা বিভ্রান্তিকর।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদফতর এর আগে একটি নির্দেশনা দিয়েছিল। সেই নির্দেশনায় প্রাথমিকভাবে তিনটি জেলা (গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী) এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রাজাবাজার (পূর্ব রাজাবাজার) ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়ারীতে পরীক্ষামূলকভাবে জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়ন শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এরই মধ্যে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার নির্বাচিত এলাকায় এবং ঢাকার পূর্ব রাজাবাজারে পরীক্ষামূলক জোনিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে। ঢাকার ওয়ারীতে জোনিং সিস্টেম চালুর জন্য সুনির্দিষ্ট এলাকা চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। এই পরীক্ষামূলক জোনিং সিস্টেমের অভিজ্ঞতা দেশের অন্যান্য এলাকায় জোনিং সিস্টেম চালু বা পরিবর্তনে সহায়ক হবে। দেশের বিভিন্ন জেলা ও সিটি করপোরেশনেও এই কৌশল ও গাইড অনুসারে স্থানীয় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছে। সে অনুযায়ী তারা প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মতামত অনুযায়ী জোনিং সিস্টেম বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে।

এর আগে, রোববার (১৪ জুন) বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ১৭টি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৮টি এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। জানা যায়, কোভিড নিয়ন্ত্রক বিষয়ক কেন্দ্রীয় কারিগরি কমিটির শনিবারের (১৩ জুন) বৈঠকে এসব এলাকার নাম আলোচনায় আসে। তবে রোববারই সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, সব এলাকা হয়তো একসঙ্গে লকডাউন হবে না। এক্ষেত্রে সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনা করে লকডাউন করা হবে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনও রোববার সারাবাংলাকে বলেন, সোমবার থেকেই লকডাউন কার্যকর করা হবে— এমন তথ্য সঠিক নয়। আমরা সবাই এটা নিয়ে কাজ করছি। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে এই ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করা হবে অনেক কিছু বিবেচনায় নিয়ে। একসঙ্গে সব এলাকায় রেড জোন ঘোষণা করা হবে— এমন তথ্য তাই সঠিক নয়।

রেড জোন সিডিসি স্বাস্থ্য অধিদফতর


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর