করোনা পরীক্ষা: নমুনা জটে রিপোর্টে দীর্ঘসূত্রিতা, ভোগান্তি
১৬ জুন ২০২০ ০৮:২৫
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ): দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শুরু হওয়ার ঠিক একমাস পর, ৮ এপ্রিল ভৈরবে প্রথম কোনো ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়। ওই সময়ও করোনা উপসর্গ থাকলেও নানা কারণে নমুনা পরীক্ষায় আগ্রহী ছিলেন না অনেকেই। তবে খুব দ্রুতই উপজেলায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে সংক্রমণ। প্রায় সাড়ে তিনশ ব্যক্তি এরই মধ্যে হয়েছেন সংক্রমিত। তাতে করে উপজেলায় উপসর্গ থাকা অনেকেই নমুনা দিতে শুরু করেছেন। তাতে দেখা গেছে আরেক বিপত্তি। বেশি বেশি নমুনা সংগৃহীত হওয়ায় রিপোর্ট পেতে লাগছে সময়। তাতে করে সন্দেহভাজনদের আইসোলেশনে রাখা, চিকিৎসা দেওয়ার মতো বিষয়গুলো নিয়ে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। জনমনেও ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।
জানা গেছে, ৮ এপ্রিল প্রথম সংক্রমণ শনাক্তের পর এখন পর্যন্ত ভৈরব উপজেলায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে এক হাজার ৮৯১ জনের। এর মধ্যে ৩৪৯ জনের শরীরে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ছয় জন। আর করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে আরও ১৭ জন।
স্থানীয়রা বলছেন, শুরুর দিকে জনমনে ধারণা ছিল, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিকভাবে হেয় হতে হবে। ফলে শুরুর দিকে উপসর্গ থাকলেও অনেকেই করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেননি। পরে চিকিৎসক, পুলিশ, প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ীরাও আক্রান্ত হতে শুরু করলেন। এরপর সাধারণ মানুষের মধ্যেও করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেওয়ার প্রবণতা তৈরি হলো। শুরুর দিকে প্রতিদিন ১০/১৫ জন দিলেও এখন নমুনা দিচ্ছেন শতাধিক ব্যক্তি। এতে রিপোর্ট পেতে দীর্ঘ সময় লাগছে। ফলে যারা নমুনা দিচ্ছেন, তাদের দিন কাটছে উদ্বেগ আর আতঙ্কে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, নমুনা দিয়ে আসার পর অনেকেরই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে। রিপোর্ট না থাকার কারণে তারা সমস্যায় পড়ছেন চিকিৎসা নিতে গিয়ে। এ পরিস্থিতিতে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে কোনো প্রাণহানি হলে সেটি হবে অত্যন্ত দুঃখজনক।
তারা আরও বলছেন, যাদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আইসোলেশনে থাকতে হচ্ছে। তাদের অনেকেই নমুনা দেওয়ার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৮/১০ দিন পর জানতে পারছেন, তারা করোয় আক্রান্ত নন। রিপোর্ট আগে পেলে তারা আরও আগেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারতেন। অনেকে আবার রিপোর্ট পেতে এত দেরি হওয়ায় রিপোর্ট না পেয়েই স্বাভাবিক চলাফেরা করছেন। তারা করোনা পজিটিভ হলে তাতে অন্যদের সংক্রমতি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে সবার দাবি, নমুনা দেওয়ার দুয়েকদিনের মধ্যেই যেন রিপোর্ট দেওয়া হয়। তাতে মানুষের উদ্বেগ-আতঙ্ক যেমন কমবে, তেমনি সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে মৃত্যু ঝুঁকিও কমবে।
ভৈরব পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতিক আহমেদ সৌরভ জানান, গত ৮ জুন তার পরিবারের একজন সদস্যের নমুনা দেওয়া হয় ২০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল ও ট্রমা সেন্টারে। কিন্ত সোমবার (১৫ জুন) পর্যন্ত রিপোর্ট পাননি তিনি। ক্ষোভ জানিয়ে সৌরভ বলেন, রিপোর্ট না পাওয়ার কারণে যদি কেউ যথাযথ চিকিৎসা না পেয়ে মারা যান, সেই দায় কে নেবে? তাছাড়া উপসর্গ থাকলেও যারা নেগেটিভ আসছেন, তারাই বা কেন শুধু রিপোর্ট পাওয়ার অপেক্ষায় দিনের পর দিন আইসোলেশন বা কোয়ারেনটাইনে থাকবেন?
পৌর নিউমার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি গত ৫ জুন ভৈরব ট্রমা সেন্টার হাসপাতালে নমুনা দেন। রিপোর্ট পান পাঁচ দিন পর। তিনি বলেন, ‘রিপোর্ট পেতে যদি পাঁচ দিন সময় লাগে, তাহলে ওই পাঁচ দিন তো অসুস্থ ব্যক্তি জানছেন না তিনি আক্রান্ত কি না। এ অবস্থায় তিনি বাইরে গেলে তার কাছ থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকছে। তাই দ্রুত রিপোর্ট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে ভৈরব থেকে করোনা পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হতো। সেখান থেকে ফল চলে আসত উপজেলায়। এখন কিশোরগঞ্জ জেলা ল্যাবে নমুনা পাঠানো হয়। সেখান থেকে ফল আসে। কিন্তু এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি দেরি হচ্ছে ফল পেতে। আগে তিন-চার দিনের মধ্যে ফল পাওয়া গেলেও এখন সাত-আট দিনের আগে ফল পাওয়াটাই অস্বাভাবিক বিষয় হয়ে পড়েছে।
জানতে চাইলে ভৈরব উপজেলা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ডা. বুলবুল আহমেদ বলেন, সংক্রমণ বেশি থাকায় ভৈরবে তুলনামূলকভাবে নমুনা সংগ্রহও বেশি হচ্ছে। সব মিলিয়ে জেলায় প্রতিদিন নমুনা সংগ্রহ হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিনশ বা তারও বেশি। কিন্তু কিশোরগঞ্জের ল্যাবের সক্ষমতা প্রতিদিন ৯৪টি নমুনা পরীক্ষা। বাকিগুলো ঢাকায় পাঠানো হয়। ফলে নমুনা পরীক্ষার ফল পেতে দেরি হচ্ছে।
ডা. বুলবুল স্বীকার করে নেন, আগের চেয়ে নমুনা পরীক্ষার রিপোট পেতে সময় বেশি লাগছে। বিশেষ করে ৮, ১০ ও ১১ জুনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট এখনো পেন্ডিং আছে বলেও জানান তিনি।