করোনা চিকিৎসা নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা স্থগিত চায় রাষ্ট্রপক্ষ
১৬ জুন ২০২০ ১১:০৩
ঢাকা: করোনাকালীন সময়ে অক্সিজেন সিলেন্ডারের মূল্য নির্ধারণ, বেসরকারি হাসপাতাল মনিটরিংসহ হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
মঙ্গলবার (১৬ জুন) আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে স্থগিত চেয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।
গতকাল সোমবার (১৫ জুন) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব নির্দেশনা দেন।
নির্দেশনাসমূহে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কি না তা আগামী ৩০ জুন স্বাস্থ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের আদালতে দাখিল করতে হবে। এই নির্দেশনাসমূহ পালনে ব্যর্থ ব্যক্তি বা কর্তৃকপক্ষের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত কোনো ধরনের শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি না প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করতে হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশনা অনুসারে, ৫০ শয্যার বেশি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহে ১৫ জুন পর্যন্ত কত জন কোভিড এবং নন-কোভিড রোগীর চিকিৎসার দেওয়া হয়েছে সে সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে এ নির্দেশ পালন করতে হবে। পাশাপাশি ৫০ শয্যার বেশি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের একটি তালিকা চেয়েছেন আদালত।
বর্তমান প্রেক্ষপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনাসমূহ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ যথাযথ ভাবে প্রতিপালন করছে কি না সে বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহের কর্তৃপক্ষকে ১৫ দিন পর পর একটি প্রতিবেদন স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে পাঠাতে হবে। ওই সব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৫ দিন পর পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরকে এ প্রতিবেদন আদালতে পাঠাতে বলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর ও জেলা, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলাসহ বিভাগীয় শহরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ যাতে কোভিড ও নন-কোভিড সব রোগীকে পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা দেয় সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে একটি মনিটরিং সেল গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ কোনো রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে অনীহা দেখালে এবং এতে করে ওই রোগীর মৃত্যু ঘটলে ‘তা অবহেলাজনিত মৃত্যু’ হিসেবে বিবেচিত অর্থাৎ ‘ফৌজদারি অপরাধ’ হিসেবে বিবেচিত হবে। দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে নির্দেশনা যথাযথভাবে দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ ব্যবস্থাপনা কর্যক্রমকে অধিকতর জবাবদিহিমূলক ও বিস্তৃত করতে হবে। ভুক্তভোগীরা যাতে এ সেবা দ্রুত ও সহজে পেতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো হাসপাতালে আইসিইউতে কত জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং কতটি আইসিইউ শয্যা কী অবস্থায় আছে তার আপডেট প্রতিদিনের প্রচারিত স্বাস্থ্য বুলেটিন এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা নিতে হবে।
আইসিইউ ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং সেলে ভুক্তভোগীরা যাতে সহজেই যোগাযোগ করতে পারে সেজন্য পৃথকভাবে ‘আইসিইউ হটলাইন’ নামে পৃথক হটলাইন চালু এবং হটলাইন নাম্বারগুলো প্রতিদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার করতে হবে।
আইসিইউতে চিকিৎসাধীন কোভিড-১৯ রোগী চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ মাত্রাতিরিক্ত বা অযৌক্তিক ফি আদায় না করতে পারে সে বিষয়ে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা মূল্য এবং রিফিলিংয়ের মূল্য নির্ধারণ করে দিতে খুচরা বিক্রেতাদের সিলিন্ডারের নির্ধারিত মূল্য প্রতিষ্ঠান-দোকানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃত্রিম সংকট রোধে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র এবং রোগীর পরিচয়পত্র ব্যতীত অক্সিজেন সিলিন্ডারের খুচরা বিক্রয় বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারে। অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ ও বিক্রয় ব্যবস্থা মনিটরিং জোরদার করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরকে এ নির্দেশ পালন করতে বলা হয়েছে।
সরকার ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বিবেচনায় লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে বিভক্ত করে পর্যায়ক্রমে লকডাউনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। এই অবস্থায় বর্তমান পর্যায়ে লকডাউনের বিষয়ে কোনো আদেশ দেওয়া সংগত হবে না মর্মে আদালত মনে করে।
উল্লেখ্য, গত ১১ মে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য বিভাগ কয়েকদফা নির্দেশনা দিয়ে নোটিশ জারি করে। করোনা পরিস্থিতিতে আইসিইউ, লকডাউন, সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন দাবিতে একাধিন রিট দায়ের করা হয়। ওই সব রিটের শুনানি শেষে আদালত এসব নির্দেশনা দেন।
আদালতে এক রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ, আইনজীবী ইয়াদিয়া জামান, আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ এম জামিউল হক, মো. নাজমুল হুদা, মোহাম্মাদ মেহেদী হাসান এবং ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।