সরকারি কাজে শতভাগ কার্যকর হচ্ছে ই-নথি পদ্ধতি
১৬ জুন ২০২০ ১৩:৩৫
ঢাকা: করোনাভাইরাস মানুষের জীবন যাপনের স্বাভাবিক অভ্যাস অনেকখানিই বদলে দিয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাজার, সদাই-পাতির পাশাপাশি অফিস আদালতের কাজও হচ্ছে ঘরে থেকেই। যোগাযোগের জন্য মানুষ এখন অনেক বেশি প্রযুক্তির উপর নির্ভর করছেন। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রশাসনের সব কাজে সনাতন পদ্ধতির ‘লাল ফিতার ফাইল’ থেকে বেরিয়ে এসে শতভাগ ই-নথি ব্যবহার করতে চায় সরকার। সে লক্ষে এরইমধ্যে মন্ত্রণালয়গুলোকে একটি চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, বিশেষ নির্দেশনাযুক্ত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে রূপকল্প টুয়েন্টি টুয়েন্টি ওয়ান বা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ‘এ টু আই’ প্রোগ্রামের সহযোগিতায় সরকারের সকল দফতরে ই-নথি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ই-নথির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান পরিস্থিতিতে ই-নথি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। করোনাভাইরাসের মত যেকোনো পরিস্থিতিতে সরকারি কার্যক্রম চালু রাখার জন্য সকল দাফতারিক কাজ স্বাভাবিকভাবে শেষ করার জন্য ইলেক্ট্রনিক প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার জরুরি। ডিজিটাল পদ্ধতি অর্থাৎ ই-নথিতে কাগজের সংস্পর্শ না থাকায় রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি কম।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এ বিষয়ে সচিবালয় নির্দেশমালা- ২০১৪ এর নির্দেশনায় ই-নথি ব্যবহারের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তিতেও ই-নথির ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যে কারণে সরকারের সকল দফতরে এর ব্যবহার ত্বরান্বিত করা আবশ্যিক। এ অবস্থায় সরকারের সব পর্যায়ের কার্যালয়ের দাফতরিক কাজ ই-নথিতে করার জন্য সংশ্লিষ্ট সচিবদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সরকারি কাজের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধে ২০১৬ সালের মার্চ মাস থেকে ই-নথির ব্যবহার শুরু করা হয়। কিন্তু গেলো কয়েক বছরে খুব বড় পরিসরে এর ব্যবহার বাড়ানো যায়নি। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের কিছু অসাধু কর্মকর্তার ইচ্ছা না থাকার কারণে এই কার্যক্রম শতভাগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
তথ্য ও যোগাযোগ বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে ই-নথি অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। আমাদের পরিকল্পনা ছিল পর্যায়ক্রমে সবাই ই-নথি ব্যবহার করবে। এক সময় শতভাগে পৌঁছাবে। এখন কোভিড-১৯ এর কারনে ই-নথির প্রয়োজনীয়তা বেশি বেড়েছে। মাঠ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ই-নথি বাস্তবায়ন করার জন্য প্রশিক্ষণের দরকার হয়। যা আমরা অনেক আগেই শেষ করেছি। এখন সবাই এ কার্যক্রমে আসতে পারে।’
প্রথম দিকে একটা কম্পিটিশনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কে কত ভাগ ই-নথি ব্যবহার করতে পারে সেটা দেখার জন্য এটা করা হয়েছিল। সেটা মন্ত্রণালয় এবং অধিদফতর পর্যায়েও আছে। বলা যায় কেন্দ্রীয় পর্যায়ে শতভাগই ই-নথি ব্যবহার করা হয়। মাঠে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় এখনও অনুশীলন করছে। আমাদের টার্গেটে আমরা ঠিক আছি।’
তবে হাতে গোনা যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ই-নথি ব্যবহার করছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের কাজে গতি এসেছে। ঘুষ বাণিজ্য দুর্নীতিও কমেছে বলে জানা গেছে। হচ্ছে না সময়ক্ষেপণ। নাগরিকদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে আবেদন, জমি সংক্রান্ত, কৃষিতথ্য, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসহ প্রশাসনিক কার্যক্রম, সরকারি দফতরে পত্র জারি, অফিস আদেশ এবং দাফতরিক বিভিন্ন কাজ চলে ই-নথির মাধ্যমে।
তথ্য ও যোগাযোগ বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম আরও বলেন, ‘ই-নথি হচ্ছে কাগজবিহীন সরকারি দফতর এবং কুইক রেসপন্সের মাধ্যম। যার সুবিধা জনগণ সরকার উভয়ই পাবে। ফাইল পেইন্ডিং রাখা যাবে না। ফাইল ট্র্যাক করে সংশ্লিষ্টরা দেখতে পাবেন কার কাছে ফাইল পেইন্ডিং রয়েছে। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাবে। তাছাড়া মাসের শেষে ড্যাশবোর্ড দেখে বলতে পারবো যে কতগুলো ফাইল স্বাক্ষর করেছি। তা দেখে মূল্যায়ন করতে পারছি।’
ই- নথি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে সরকারের একসেস টু ইনফরমেশন (এ টু আই) প্রকল্প। এটুআই সূত্রে জানা গেছে, সরকারের ৫৮ মন্ত্রণালয় ও দুই বিভাগের অধীনস্ত কার্যালয়গুলোতে ই-নথির মাধ্যমে দাফতরিক কাজের সূত্রপাত হলেও এরমধ্যে ২৫ মন্ত্রণালয়ের ৯০ শতাংশ কাজ চলে ই-নথি ব্যবহার করে। আরও কয়েকটি দফতরের ৭০ শতাংশ কাজ করা হয় ই- নথি ব্যবহার করে। তবে এবার সরকার সব পর্যায় থেকে কম খরচে আধুনিক এই পদ্ধতি ব্যবহার করে কম সময়ে হয়রানি ছাড়া মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দিতে চায়।