করোনা ঠেকাতে ২১ দিনের জন্য অবরুদ্ধ চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলী
১৭ জুন ২০২০ ০০:৩৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ মোকাবিলায় মধ্যরাত থেকে ২১ দিনের জন্য অবরুদ্ধ করা হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরীর জনবসতিপূর্ণ উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড। লকডাউন কার্যকর করে ওয়ার্ডের ১৪টি প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি টহলে নেমেছেন সেনা সদস্যরাও। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। বাসিন্দাদের জন্য সাতটি নির্দেশনা দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে সিটি করপোরেশন।
করোনা প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির সিদ্ধন্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১০টি ওয়ার্ডকে সংক্রমণ প্রবণ এলাকা (রেড জোন) হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ওয়ার্ডগুলো হচ্ছে— উত্তর কাট্টলী, উত্তর-মধ্যম হালিশহর, দক্ষিণ-মধ্যম হালিশহর, দক্ষিণ হালিশহর, চকবাজার, দেওয়ানবাজার, জামালখান, এনায়েত বাজার, লালখান বাজার এবং উত্তর হালিশহর ওয়ার্ড। এর মধ্যে উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে প্রথম দফায় লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
দুই দিন ধরে প্রস্তুতির পর মঙ্গলবার (১৬ জুন) দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে লাগোয়া উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকরের কথা জানিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।
আরও পড়ুন- চট্টগ্রামে উত্তর কাট্টলী দিয়ে শুরু হচ্ছে রেড জোনে লকডাউন
লকডাউন এলাকা হচ্ছে— নগরীর একে খান মোড় থেকে উত্তরে লতিফপুর পর্যন্ত ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিম পাশ এবং পূর্বে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন পর্যন্ত এলাকা। এলাকার প্রবেশপথগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— কর্নেল টোল রোড, ঈশান মহাজন রোড, মোস্তফা হাকিম কলেজ রোড, সাগরিকা বিটেক রোড, কৈবল্যধাম রোড, নিউ মনছুরাবাদ রোড, সিডিএ আবাসিক রোড, সাগরিকা আলিফ রোড।
চসিকের নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামসুদ্দোহা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে প্রবেশ ও বের হওয়ার ২০টি পথ আছে। এর মধ্যে ১৪টি রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাজের জন্য ছয়টি রাস্তা খোলা আছে। লকডাউনের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে সাগরিকা বিসিক শিল্প এলাকা। প্রতিদিন রিকশাভ্যানের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে কাঁচাবাজার সরবরাহ করা হবে। চসিকের ব্যবস্থাপনায় কোভিড ও নন- কোভিড রোগীদের চিকিৎসা ও হাসপাতালে পাঠানোর জন্য সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা আছে। লকডাউন এলাকায় বসবাসরত সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা সাধারণ ছুটির আওতায় থাকবেন।
লকডাউন এলাকায় সিটি করপোরেশন একাধিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করেছে। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নম্বর – ০৩১- ৪৩১৫১৩৬৮, ০৩১-৪৩১৫১৩৬৯, ০৩১-৪৩১৫১৩৭০, ০৩১-৪৩১৫১৩৭১, ০৩১-৪৩১৫১৩৭২ এবং ০১৮১৯-০৫৬৮৪৪, ০১৮১১-৮৮৭০৮৪।
এদিকে, পুলিশের পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, লকডাউন এলাকার বাসিন্দাদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ২৪ ঘণ্টা নিজ নিজ বাসায় অবস্থান করতে হবে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, সংবাদকর্মী, বিদ্যুৎ, ওয়াসা, গ্যাস, পানিসহ জরুরি সার্ভিসে যুক্তরা লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবেন।
চিহ্নিত এলাকার মধ্যে সব দোকানপাট, কলকারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস, ওষুধের দোকানও বন্ধ থাকবে। মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেম নামাজ আদায় করতে পারবেন।
যাত্রীবাহী কোনো যানবাহন লকডাউন এলাকায় যাত্রী ওঠানামা করতে পারবেন না এবং কোনো যানবাহনও লকডাউন এলাকায় প্রবেশ করতে বা বের হতে পারবে না। পণ্যবাহী গাড়ি রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত মহাসড়কে পণ্য উঠানামা করতে পারবে।
স্থানীয় আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘লকডাউন এলাকার মধ্যে ১৪টি রাস্তা আমরা সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছি। যেসব রাস্তা খোলা আছে, সেগুলোর সামনে পুলিশ ও আনসার এবং সিটি করপোরেশনের স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন আছে। এলাকার ভেতরে আমাদের সার্বক্ষণিক টহল থাকবে। অতিরিক্ত ২৫ জন পুলিশ সদস্য থানায় নিয়মিত টিমের সঙ্গে লকডাউন এলাকায় দায়িত্ব পালন করবে।’
সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের মেজর সাঈদ সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, জিওসি মেজর জেনারেল এস এম মতিউর রহমানের নির্দেশে রেডজোন উত্তর কাট্টলীতে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল সার্বক্ষণিক অবস্থান করে টহল দিচ্ছে। এই কার্যক্রম লকডাউন চলাকালীন অব্যাহত থাকবে।
চসিকের তথ্য অনুযায়ী, উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের মোট জনসংখ্যা ৭৮ হাজার। সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডে এ পর্যন্ত ১৪৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন সাত জন।
উত্তর কাট্টলী করোনা সংক্রমণ করোনাভাইরাস চসিক রেড জোন লকডাউন সংক্রমণের ঝুঁকি