Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লাদাখে সংঘর্ষ, যা জানা প্রয়োজন


১৭ জুন ২০২০ ০২:১৫

সম্প্রতি দুই সামরিক পরাশক্তি ভারত ও চীন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫ হাজার ফুট উচ্চতায় বিরোধপূর্ণ সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এতে প্রায়ই উভয় দেশের সেনারা সংঘর্ষে  জড়িয়ে পড়ছে। এত দিন ছোটখাটো সংঘর্ষে আহতের ঘটনা ঘটলেও এবার প্রাণ ঝরলো। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতেও দুই দেশের এমন সংঘর্ষের খবরে লাদাখে মনযোগ গোটা বিশ্বের।

ষাটের দশকে দুই শক্তিধর সেনাবাহিনীর একমাত্র যুদ্ধটি সংঘটিত হয়। পরে ১৯৭৫ সালে অরুণাচল প্রদেশে এক সংঘর্ষে ৪ ভারতীয় সেনা প্রাণ হারায়। এর পরে দুই দেশের সেনারা ছোটখাটো সংঘর্ষে জড়ালেও কোন প্রানহানির ঘটনা ঘটেনি। এবার প্রায় ৪৫ বছর পর সোমবার (১৫ জুন) রাতে এমন এক সংঘর্ষ ঘটলো, যেখানে প্রাণহানি হলো।

বিজ্ঞাপন

সংঘর্ষে যা হয়েছে

সোমবার রাতে লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারত ও চীনের সৈন্যরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার প্রথমে ভারতের সেনাবাহিনী এক বার্তায় জানায়, ওই সংঘর্ষে এক কর্নেল সহ তিন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন। পরে মঙ্গলবার সন্ধায় সেনাবাহিনীর সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমগুলো খবর প্রকাশ করে, সোমবারের সংঘর্ষে ভারতের ২০ জন সেনা নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থলে তিন জন ও মারাত্মক জখম হওয়ায় বাকি ১৭ জনের মৃত্যু হয়। তবে একই সংঘর্ষে অন্তত ৪৩ চীনা সৈন্য গুরুতর জখম বা নিহত হয়েছেন বলেও জানানো হয়। একইদিন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ভারতীয় সেনাবাহিনী সীমান্ত পার হওয়ায় এ সংঘর্ষ বাধে। বেইজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রকে চীনের সৈন্য হতাহতের ব্যাপারে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি জবাবে বলেন, ‘এ বিষয়ে কোন তথ্য জানা নেই’।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে চীনকে কড়া বার্তা দেওয়া হয়। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনে আলোচনায় মাঝেই চীন সমঝোতা লঙ্ঘন করেছে। গালওয়ান উপত্যকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বদলাতে গিয়েছিল চীন। ফলে সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে ওঠে। ভারত অভিযোগ করে-  প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় শান্তি ফেরাতে যে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক চলছে তাতে যেসব সমঝোতা হয়েছে তা মেনে চলছে না চীন। দেশটি যদি সমঝোতা মেনে চলত তবে সংঘর্ষ এড়ানো যেত।

একই দিন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন , ‘পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ না করতে যে কোনো ধরনের এক তরফা পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে ভারতকে। ভারত তার সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে’।

সংঘর্ষের কারণ

এশিয়ার দুই সামরিক পরাশক্তি কয়েক দশক ধরে সীমান্ত বিরোধে জড়িয়ে আছে। ভারত এবং চীনের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত এলাকা রয়েছে। এ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে দুই দেশ প্রায়ই উত্তেজনা সৃষ্টি করে থাকে। সম্প্রতি পরমাণু ক্ষমতাসম্পন্ন দুই প্রতিবেশীর এ সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ভারত অবহেলিত সীমান্ত অঞ্চলের উন্নয়নে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার পাশেই ২০২২ সাল নাগাদ ৬৬টি নতুন সড়ক নির্মাণের ঘোষণা দেয়। এরই মধ্যে গত অক্টোবরে গালওয়ান উপত্যকার কাছে একটি সড়ক নির্মাণ শেষ করে ভারত। এ সড়কটি দৌলত বেগ অল্ডি ঘাঁটির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছে। এর ফলে ওই অঞ্চলে চলাচলে সুবিধা পাচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সড়ক নির্মাণের পরপরই চীন ক্ষিপ্ত হয়। চীন সীমান্ত এলাকায় সেনা বাড়িয়ে বিতর্কিত অঞ্চলে অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করে।  এতে দুই শক্তিধর রাষ্ট্রের ওই সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ে।

বছরের শুরু থেকেই সীমান্তে দুই শক্তিশালী সেনাবাহিনী মুখোমুখি অবস্থান নেয়। ভারত দাবি করে, সীমান্ত লঙ্ঘন করে বিতর্কিত অঞ্চলে ঘাটি গেড়েছে চীনের সেনারা। মে মাসের শুরুতেই পূর্ব লাদাখের গলওয়ান উপত্যকা, নাকুলা এবং প্যাগং লেকের পাশে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন করে কয়েক কিলোমিটার ঢুকে কমপক্ষে ১০০টি তাঁবু গেড়ে অবস্থান নেয় চীন। এর জবাবে ওই অঞ্চলে সেনা বাড়ায় ভারত। আর এতেই দুই শক্তিধর রাষ্ট্রের সীমান্তে উত্তেজনা তুঙ্গে উঠে।

এর জেরে গেল মে মাসে দুই দেশের প্রায় শতাধিক জওয়ান হাতাহাতি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিলেন। সেসময় উভয় দেশের জওয়ানরা জখম হয়েছিলেন।

উভয় দেশই এ অঞ্চলকে অর্থনৈতিক ও সামরিক কৌশলগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। দুই দেশ যদি ছাড় না দেয় তবে এ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে বড় সংঘর্ষের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এর আগে ১৯৬২ সালে দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত বিরোধ নিয়ে যুদ্ধ হয়েছিলো।

এমন উত্তেজনার পরিণতি

অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিধর দুই দেশে প্রায় তিনশো কোটি মানুষের বাস। এই দুই পরাশক্তি যদি দ্রুত উত্তেজনা প্রশমন না করে তবে এর প্রভাব পড়বে গোটা অঞ্চলে। মঙ্গলবার ভারত জানিয়েছে, উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা চলছে। সম্প্রতি দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উত্তেজনা নিরসনে বারবার বৈঠকে বসছেন। উত্তেজনা কমাতে ধাপে ধাপে সেনা কমানোর উপায় সম্পর্কে দুই দেশ ৬ জুনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে একমত হয়।

তবে দ্রুত উত্তেজনা প্রশমন না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে। ভারতের সাবেক সেনা কমান্ডার ডিএস হোদা এই উত্তেজনা দ্রুত প্রশমন না হলে পরিণতি ভয়ংকর হতে পারে বলে জানান। তিনি বিবিসিকে বলেন, এটি অত্যন্ত ভয়ংকর। এই সংঘর্ষের ফলে সংলাপে হওয়া সমঝোতাগুলো লঙ্ঘন হতে চলেছে।

– এএনআই, পিটিআই, এনডিটিভি, বিবিসি, রয়টার্স অবলম্বনে

চীন টপ নিউজ ভারত লাদাখ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর