এবার ১০ টাকা কমে আমন বীজ ৩০ টাকায়
১৭ জুন ২০২০ ০৮:০০
ঢাকা: দেশে আমনের উৎপাদন বাড়াতে এবার সরকারিভাবে আমন বীজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে। অর্থাৎ প্রতি কেজিতে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে ১০ টাকা। এতে করে চলতি মৌসুমে সাড়ে ২০ হাজার টন আমন বীজ বিক্রি করতে সরকারকে বাড়তি প্রায় ২০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। তবে কেজিতে ১০ টাকা করে সাশ্রয় হচ্ছে কৃষকের। ফলে তাদের উৎপাদন খরচ কমার সঙ্গে সঙ্গে আমনের উৎপাদনও বাড়বে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সচিব নাসিরুজ্জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এ বছর আমন বীজে ১০ টাকা করে ভর্তুকি দিচ্ছি। আগে ৪০ টাকা কেজিতে আমন বীজ বিক্রি হলেও এ বছর তা ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হবে। এতে সরকারকে প্রায় ২০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। তবে আমরা আমনেও বোরোর মতো সফলতা অর্জন করতে চাই। সে কারণেই এই ভর্তুকি।’ সরকার আগামী কয়েক বছরে আমনের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন- আমনে সাফল্য ধরে রাখতে চায় সরকার, নজর রবি শস্যেও
সরকারের আমন বীজ বিক্রির লক্ষ্যমাত্রার ৭০ শতাংশ এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানালেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যান সায়েদুল ইসলাম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আগামী আমন মৌসুমের জন্যে বিএডিসির আমন বীজ ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হবে, আগে যা ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো। সরকার ১০ টাকা করে ভর্তুকি দিচ্ছে। আমরা এ বছর ২০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টম আমন বীজ বিক্রি করছি। এরই মধ্যে ৭০ শতাংশ বীজ বিক্রি শেষ হয়েছে। কারণ কৃষকরা আগেই বীজ সংগ্রহ করে রাখে। আর জুলাইয়ের প্রথম দিকেই আমন বীজের বপন শুরু হবে।
সরকার যেমন আগামী কয়েক মৌসুমে আমনের আবাদ বাড়াতে চাইছে, তেমনি বিএডিসি’র সামনের মৌসুমে আরও বেশি আমনের বীজ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার কথা জানিয়েছে। বিএডিসি চেয়ারম্যান বলেন, চলতি বছরের চেয়ে আগামী বছর ২৬ শতাংশ বেশি আমনের বীজ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে আমাদের। এ বছর এর পরিমাণ ২০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন হলেও আগামী মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রা ২৫ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে সারাদেশে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৫৯ লাখ হেক্টর। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৫৪ লাখ টন। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এবার আমন ধান উৎপাদন বাড়াতে কম ফলনশীল জাতের আবাদ কমিয়ে আধুনিক অথবা উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের আবাদ সম্প্রসারণ করা হবে। একইসঙ্গে হাইব্রিড জাতের আবাদের এলাকা বাড়ানো হবে। সেজন্য উন্নত জাতের বীজ, সুষম সারের নিশ্চয়তা, পর্যাপ্ত সেচের ব্যবস্থা, সেচের খরচ কমিয়ে আনাসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) হাইব্রিড ধান-২ নামে পরিচিত একটি জাতের ধান নিয়ে চার বছর ধরে গবেষণা করেছে। আর তাতে সফলতাও এসেছে। গবেষকরা বলছেন, এই ধান আবাদ করা গেলে কম সময়ে ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। সময়ের হিসাবে ১৪০ থেকে ১৪৫ দিনের মধ্যেই পরিপক্ক হয় এই ধান, যা অন্যান্য সাধারণ আমন ধানের চেয়ে প্রায় একমাস কম সময় নেয়। তাই আসছে বর্ষা মৌসুমে আমন চাষে কৃষকদের এ জাতের ধানের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে চায় কৃষি মন্ত্রণালয়।
এদিকে, নতুন উইন-২০৭ জাতের ধানেও ফলন ভালো হয়। এই জাতের ধান চাষ করলে প্রতি হেক্টরে সাত টন ধান পাওয়া সম্ভব। এই হিসাবে কৃষকেরা প্রতি বিঘায় আমন আবাদ করে ২৫ থেকে ২৭ মণ পর্যন্ত ধান পাবেন। সাধারণ জাতের আমন ধানে প্রতি বিঘায় ফলন মিলছে সর্বোচ্চ ২০ মণ।
আধুনিক এসব জাতের আবাদ বাড়াতে পারলে দেশে আমনের ফলন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এতে করে বাজারে চালের সরবরাহ নিশ্চিত করাই কেবল নয়, কম সময়ের জাত আবাদের কারণে কৃষকরাও অল্প সময়ে তাদের পুঁজি তুলে নিতে পারবেন।
ফাইল ছবি
আমন আবাদ আমন চাষ আমনের বীজ প্রতি কেজিতে ১০ টাকা ভর্তুকি সরকারের ভর্তুকি