করোনার আঘাতে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি কমেছে
১৭ জুন ২০২০ ১২:৪৩
ঢাকা: করোনাভাইরাসের আঘাতে বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি কমে অর্ধেকে নেমেছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে উন্নয়ন সহযোগীরা ৪৩৫ কোটি ৭৯ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গত অর্থবছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৮১১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ, গত বছরের ১১ মাসের তুলনায় এ অর্থবছরের ১১ মাসে ৩৭৫ কোটি ৭৯ লাখ ডলার কমেছে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুত সহায়তা। তবে বৈদেশিক অর্থ ছাড় এবং পরিশোধের পরিমাণ একই সময়ে বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাসের অভিঘাতের কারণেই বৈদেশিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি কমছি।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে মোট বৈদেশিক প্রতিশ্রুতি এসেছে ৪৩৫ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। এর মধ্যে ঋণের পরিমাণ ৪০১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার, অনুদান ৩৩ কোটি ৮২ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে প্রতিশ্রুতি এসেছিল ৮১১ কোটি ৩৩ লাখ ডলার, যার মধ্যে ঋণ ছিল ৬৮৫ কোটি ৭৬ লাখ ডলার এবং অনুদান ছিল ১২৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার।
ইআরডি’র অতিরিক্ত সচিব এবং বৈদেশিক সহায়তার বাজেট ও হিসাব শাখার (ফাবা উইং) প্রধান ড. পিয়ার মোহাম্মদ সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিশ্রুতি কম হওয়ার পেছনে করোনাভাইরাসের প্রভাব রয়েছে। বিষয়টি সবারই জানা। এই বৈশ্বিক মহামারির কারণে স্বাভাবিক কাজকর্ম স্থবির ছিল। যে কারণে অনেক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি সই করা সম্ভব হয়নি।
দাতদের অর্থছাড় বেড়েছে
চলতি অর্থবছরের গত ১১ মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থছাড়ের পরিমাণ ছিল ৫২৩ কোটি ৭২ লাখ ডলার। এর মধ্যে ঋণ ৫০১ কোটি ডলার, অনুদান হচ্ছে ২২ কোটি ৭২ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থছাড় হয়েছিল ৫২১ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে ঋণ ছিল ৪৯৭ কোটি ৪৫ লাখ ডলার, অনুদান ২৩ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। সে হিসাবে গত বছরের তুলনায় এ বছর অর্থছাড় বেড়েছে দুই কোটি ৩৪ লাখ ডলার।
বেড়েছে ঋণ পরিশোধ
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ঋণ পরিশোধের পরিমাণ বেড়েছে। লকডাউনের কারণে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকলেও এই সময় বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থাকে পরিশোধ করেছে ১৬১ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। এর মধ্যে আসল বা মূলধন ছিল ১১৮ কোটি ২৮ লাখ ডলার, সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৪৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ পরিশোধ করা হয় ১৪৩ কোটি ৩২ লাখ ডলার। এর মধ্যে আসল ছিল ১০৭ কোটি ৩৩ লাখ ডলার, সুদ ৩৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। করোনার অভিঘাত থাকলেও এ অর্থবছরে আগে অর্থবছরের তুলনায় ১৮ কোটি ডলারেরও বেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে।
চলতি মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির সম্ভাবনা
ইআরডির একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, করোনাভাইরাসের কারণে ইআরডি’র স্বাভাবিক কাজকর্ম বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে ঋণচুক্তি সই না হওয়ায় প্রতিশ্রুতি কমেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বৈদেশিক সহায়তায়। এর প্রভাবে মার্চ মাসে এসে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার লক্ষ্য কমানো হয়।
তবে চলতি মাসে জাপানের সঙ্গে প্রায় ২ বিলিয়ন বা দুইশ কোটি ডলারের ৪১তম ঋণ প্যাকেজের চুক্তি হতে পারে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন ইআরডি’র অতিরিক্ত সচিব মো. শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই চুক্তিটি সবসময় জুন মাসের শেষ দিকেই হয়ে থাকে। তাই এবারও চলতি মাসের শেষ দিকেই চুক্তিটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এটি হলে প্রতিশ্রুতির পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে।